বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


‘দীনের কথা বলতেই বিদেশি আলেমরা এখানে আসেন, তাদের বিষোদ্গার উচিত নয়’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সাম্প্রতিক  একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ভারতীয় আলেমে দেশ সয়লাব’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দেশের অনেক মাদরাসায় বছরের শুরুতে ‘সবক শুরু’, ‘খতমে বুখারী’, ‘বার্ষিক সভা’ ইত্যাদি কারণে অসংখ্য ভারতীয় আলেমকে দাওয়াত করে আনা হচ্ছে। যার কোনো প্রয়োজন দেশের সচেতন আলেমসমাজ বোধ করেন না।

কেননা, যাদের আনা হয় তাদের চেয়েও বর্ষিয়ান, দক্ষ, সিনিয়র ও সুযোগ্য আলেম বাংলাদেশে রয়েছে। সম্প্রতি ভারতীয় আলেমদের আসা যাওয়া বৃদ্ধি পাওয়ার আগ পর্যন্ত এরাই এসব কাজ করতেন।’

বিষয়টি নিয়ে অনলাইনে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। পক্ষে বিপক্ষে মতামত দিচ্ছেন অনেকেই। এ নিয়ে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন এ দেশের চিন্তাশীল আলেমে দীন, কথা সাহিত্যিক, লেখক ও গবেষক মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন সাক্ষাতকার নিয়েছেন, আবদুল্লাহ তামিম

বিদেশি আলেমদের অতিথি করে বাংলাদেশে আনার বিষয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর অনেক আলোচনা সমালোচনা চলছে, আপনি বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন ?

আপনি যে প্রতিবেদনের কথা বলেছেন, আমার সামনে এই প্রতিবেদনটি রয়েছে। প্রথমেই আমি বলতে চাই এই রিপোর্ট বা প্রতিবেদনের যে শিরোনাম লেখক করেছেন তার ভেতরেই বাংলাদেশের আলেম ওলামাদের প্রতি তার বিদ্ধেষ ভাব প্রকাশিত হয়েছ। তিনি শিরোনাম করেছেন ‘ভারতীয় আলেমে দেশ সয়লাব’।

আমাদের দেশে মূলত দৈনিক পত্রিকাগুলোতে যখন মদ, ফেন্সিডিল গাঞ্জা ইত্যাদি যে জিনিসগুলা সমাজের জন্য বিষ সেগুলোর ক্ষেত্রে সয়লাব শব্দ লেখা হয়।

আর দ্বিতীয় কথা হলো আলেমদের কে কীভাবে সম্মোধন করতে হয় সেটা তিনি জানেনই না। হাদিস শরিফের মধ্যে পরিস্কার রাসুল আকরাম সা. শিখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে একজন আলেমকে ডাকতে হয়, সম্মান দেখাতে হয়, সম্মোধন করতে হয়।

একুশে বইমেলার বেস্টসেলার বইগুলো দেখতে এখানে ক্লিক করুন

তিনি বলেছেন, ‘আলেমরা নবীদের উত্তরসুরি’ তাই যে কোনো দেশের আলেম যে কোনো দেশে যেতে পারেন। নবীর ওয়ারিস হিসেবে তাদের সম্মান করা অত্যন্ত জরুরি বিষয়। তাদের ক্ষেত্রে সয়লাব শব্দ ব্যবহার করা হয়তো মূর্খতা না হয় বিদ্বেষ। সতর্কতা প্রয়োজন।

তাদের যুক্তি হলো বাংলাদেশে যোগ্য অনেক আলেম থাকতে বাইরে থেকে কেনো  আলেম এনে মাহফিল, খতমে বুখারী ইত্যাদি অনুষ্ঠান করতে হবে। এ সম্পর্ক কী বলবেন?

এখানে আরেকটা বিষেয়ে স্পষ্ট করতে চাই, লেখক বলেছেন বাংলাদেশে হঠাৎে করে বিদেশি আলেমদের সয়লাব, বিষেয়টাকে আসলে এমন?

এটা অসত্য আমরা সবাই জানি। কারণ আমরা জানি বাংলাদেশই শুধু না বিশ্বের সব দেশেই কওমি মাদরাসা এসেছে ভারত থেকে। পত্রিকাওয়ালা এই কথাটা জানেন কি না আমি জানি না।

এ কথাটাকে জায়গায় রেখে বলতে হয় দেওবন্দ মাদরাসা হলো সব মাদরাসার মূল। সুতরাং মামা যত ছোটই হোক বা যোগ্যতার দিক থেকে যত ছোটই হোক না কেনো মায়ের দিকে লক্ষ্য রেখে তাকে অন্য রকম সম্মান করাটা আবশ্যক হয়।

এ সম্মানের জায়গাটা বয়স দিয়ে যোগ্যতা দিয়ে বিচার করা যায় না।

বিদেশি আলেমগণকে এনে প্রতিষ্ঠানগুলো কী ধরনের লাভবান হচ্ছেন বলে মনে করেন?

আসল বিষয়টা হলো আলেম যিনি, তিনিই ইসলামের প্রতিনিধি। তিনি প্রতিনিধি হিসেবে সাহাবায়ে কেরামের আদর্শ বুকে ধারণ করে বিশ্বের যে কোনো দেশে যেতে পারেন। লেখক শুধু ভারতের কথা না বলে মদিনা থেকে মক্কা থেকে যে আলেমগণ আসেন তাদের কথা বলতে পারতেন।

তাদের নামে বাংলায় বড় বড় করে পোস্টার ছাপা হচ্ছে কিন্তু তিনি তাদের কথা বলেননি। তাকে সৎ রিপোর্টার মনে করা একটু কঠিন। কারণ তিনি শুধুই ভারতের কথা বলেছেন।  আমি বিশ্বাস করি আমাদের মাদরাসা বা যেসব প্রতিষ্ঠান উদ্যোগী হয়ে সৌদি আরব, মালয়শিয়া, ভারত এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকার আলেমগণও এখন বাংলাদেশে আসছেন।

কিন্ত লেখক এ বিষয়ে খোঁজ নেয়ার সময় পাননি মনে হয়। যে দেশ থেকেই আসেছেন সবাই একই পয়গাম নিয়ে আসছেন। যে পয়গাম রাসূল সা. ও সাহবায়ে কেরাম বিশ্বের বুকে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। বাহির থেকে আলেমরা আসলে মানুষ আগ্রহী হয়।

দীনের কথা শুনতে আগ্রহ প্রকাশ করে তাই বাংলাদেশের মানুষও তাদের দাওয়াত দিয়ে আনেন। কিন্তু যারা আসেন তারা কুরআন হাদিসের বাইরে কথা বলেন না। ইসলামের আলোটা সমাজের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতেই তারা এই উদ্যোগটা গ্রহণ করে।

আরেকটা বিষয় হলো বাংলায় একটা কথা বলে, ঘরকা মুরগি ডাল বরাবর, ঘরের মানুষকে মূল্য দেয়াটা এখন তেমন দেখা যায় না। তাই তারা বাইরে থেকে আলেমদের আনেন যেনো মানুষ তাদের কথা শুনতে আগ্রহী হয়।

প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, ‘দেশে যেন ভারতীয় আলেমের সয়লাব চলছে। ভারতে যখন মানুষের চেয়ে গরুর মর্যাদা বেশি, যখন গরুর কারণে বহু মুসলমানকে হত্যা করা হচ্ছে, মুসলমানদের আখ্যায়িত করা হচ্ছে ভারতের সমস্যা হিসাবে, লাখো মুসলমানকে নাগরিকত্ব হারা করার চেষ্টা চলছে, বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে রাম মন্দির নির্মাণ এখন সময়ের ব্যাপার, তাজমহল কে বলা হচ্ছে ‘তেজ মন্দির’ এবং সেখানে সম্ম্রাজ্ঞী মমতাজের কবর প্রাঙ্গনে আয়োজন করা হচ্ছে ‘রামলীলার’। তখন ভারতীয় আলেমরা এসব নিয়ে বয়ানে কোনো কথা বলেন না। এ বিষয়ে বাংলাদেশের জনমত বা সমর্থনও চান না।’’  তার এই বক্তব্য কতটুকু সত্য বলে মনে করেন?

এখানে দু’টি বিষয় একটি হলো তারা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আরেকটি হলো তারা বড় আলেম। তো যারা আমাদের দেশে আসে তারা কিন্তু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আসে না। আর ভারতের আলেমরা জানে তারা না বললেও বাংলাদেশে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ইসলামবিরোধী কোনো কাজ হলে বাংলাদেশের সর্বস্তেরের জনগণ এর সথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

তাই একজন বিদেশি অতিথি এখানে এসে তারা সে বিষয়গুলো বলবার প্রয়োজন মনে করে না। তাই তারা এই বিষয়গুলো আলোচনা করেন না।

তারা এটাও জানেন বাংলাদেশের আলেমগণ জনগণকে যে পরিমাণ সতর্ক  করার প্রয়োজন সেই কর্মতৎপরতা তাদের মাঝে আছে। ওলামায়ে কেরাম শুধু মানুষের ধর্মীয় আবেগটাকে একটু অালাদাভাবে কাজে লাগানোর জন্য বাইরে থেকে ওলামায়ে কেরামকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসেন।

তাই বলে দু’দেশের আলেম আরেক দেশে গিয়ে রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক বক্তব্য দেয়া সচেতন মানুষের কাজ নয়। আরেকটি বিষয় হলো যে ভদ্রলোক রিপোর্ট করেছেন আমার মন চাচ্ছে যে তাকে আমি সন্দেহ করবো কী না।

তার কারণে হলো, তিনি এত বড় একটি রিপোর্ট তৈরি করে ভারতের নানাদিক তুলে ধরে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন তাহলে তার এ কথাটা কেনো জানার চেষ্টা করে নাই যে যখন দেশ ভাগ হয় তখন কোন দেশে কতজন মুসলমান ছিলো তিনি কি জানেন? মুসলামন কি কমে গেছে এই কারণে? ভারতে কী দেশ ভাগ হওয়ার কারণে মুসলমান কমে গেছে? যায় নি বরং বেড়েছে।

গত একবছর আগে রামলিলা ময়দানে মাওলানা আরশাদ মাদানী বারো লক্ষ মানুষ জড়ো করলেন এটাও তিনি জানেন না।  এ বিষয়গুলো না জেনে তিনি যে ভরতীয় আলেমদের সমালোচনা করলেন এটা কিন্তু ভদ্রতার আওতায় পরে না।

 

প্রতেবেদক বাংলাদেশের মুফতি বোর্ডের দুইজন মুফতির কথা তুলে এনেছেন তাদের ব্যপারে কী বলবেন?

বাংলাদেশে মুফতি পরিষদ হচ্ছে এটা আমরা জানি না এটা কীভাবে সম্ভব। অথচ এখানে আল্লামা হিসেবে যাদের কথা লেখা আছে তাদের থেকেও আমাদের যারা ছাত্র তারা আরো প্রসিদ্ধ।

বাংলাদেশে সম্মিলিত মুফতি পরিষদ হচ্ছে আর বাংলার সবচেয়ে বড় মুফতি সাহেবরা এটা জনেনই না বিষয়টা কেমন হয়ে গেল না?

আর সম্মিলিত মুফতি পরিষদ বলতে কোনো কিছুর অস্তিত্ব বাংলাদেশে আছে কী না তাও আমার সন্দেহ হচ্ছে। এরা ভারতীয় এলার্জি টাকে কোনো দেশ থেকে ধার করে আনছে কী না এটাও খতিয়ে দেখার জন্য আমরা অনুরোধ জানাবো সরকারকে।

কারণ তারাও সরকারকে এই বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তাই আমরাও সরকারকে আমন্ত্রণ জানাবো সম্মিলিত মুফতি পরিষদ এমন কোনো বস্তু আছে কী না খতিয়ে দেখতে।

আবার এরাই কিন্তু গাউসুল আজম তাইয়্যেব শাহ আর তাহের শাহসহ আরো কতজনকে পাকিস্তান থেকে আনছেন এটা কিন্তু বলেন নি তিনি।

এখানে তাদের পাকিস্তানপ্রীতিটাই যেনো বেড়িয়ে আসছে।  তাহলে এই বিষয়টি নিয়ে এত এলার্জি  আমাদের বুঝে আসে না।  সুতরাং এ বিষয়টি নিয়ে অনর্থক কথাবার্তা বলা মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

‘নবী নুহ আ. এর প্রপৌত্র থেকেই বাংলাভাষার প্রচলন ঘটেছিল’


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ