বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫


রাসুল সা. এর জীবদ্দশায় নির্মিত ভারতের যে মসজিদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতাউর রহমান খসরু

ভারতের কেরালা রাজ্যের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কডুঙ্গুলুর শহর। ভারতের প্রাচীন ইতিহাসের বইতে যাকে চণ্ডীগর বলা হয়েছে। এ শহরেই অবস্থিত ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম মসজিদ।

এ মসজিদ নির্মিত হয়েছিলো ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে। অর্থাৎ রাসুল সা. এর জীদ্দশায়।

এ হিসেবে ইরাক, সিরিয়া, মিসর ও তিউনিয়ার পূর্বে ভারতে মসজিদ নির্মিত হয়। কেননা ইরাকের প্রথম মসজিদ নির্মিত হয় ৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে, সিরিয়ায় ৭১৫ খিস্টাব্দে, মিসরে ৬৪২ খ্রিস্টাব্দে ও তিউনিসিয়ায় ৬৭০ খ্রিস্টাব্দে।

রাসুল সা. এর সাহাবি মালিক ইবনে দিনার রা. নির্মাণ করেন উপমহাদেশের প্রথম মসজিদ। ভারতের প্রাচীনতম মসজিদের নাম চেরমান জুমা মসজিদ।

ধারণা করা হয়, মসজিদে নববীর পর পৃথিবীতে এটি তৃতীয় এবং চিনে নির্মিত হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা. কর্তৃক নির্মিত মসজিদের পর আরব ভূখণ্ডের বাইরে এটি দ্বিতীয় মসজিদ।

চেরমান জুমা মসজিদের নামকরণ করা হয়েছে চেরমান রাজার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।

কারণ, তৎকালীন চেরমান রাজা এ মসজিদ নির্মাণের ব্যাপারে মালিক ইবনে দিনারকে সহযোগিতা করেন। চেরমান মূলত চণ্ডীগরের শাসকদের উপাধি ছিলো।

চেরমান জুমা মসজিদের নির্মাণের ব্যাপারে নানা কথা পাওয়া যায় স্থানীয়দের কথোকথায়। তবে ঐতিহাসিকদের স্বীকৃতি তথ্য হলো চেরমান রাজা পরিমল রামা ভরমা মুহাম্মদ সা. কর্তৃক চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করণের একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন।

রাতের বেলা নিজ প্রাসাদের ছাদে পায়চারি করার সময় রাসুল সা. এর এ মোজেযা দেখে তিনি অভিভূত হন এবং মদিনায় রাসুল সা. এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ইসলামগ্রহণ করেন।

ইসলামগ্রহণের পর তার নাম হয় তাজুদ্দিন। তিনি কেরেলায় ইসলাম প্রচারের জন্য মালেক ইবনে দিনার রা. এর নেতৃত্বে একদল সাহাবিকে সঙ্গে নিয়ে স্বদেশের উদ্দেশে যাত্রা করেন।

কিন্তু ওমানের সিলালাহ নামক স্থানে (যার প্রাচীন নাম পোর্ট জাফর) তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পূর্বে তিনি তার ছেলেকে নির্দেশ দেন মালিক ইবনে দিনারকে সহযোগিতা করতে। তার ছেলে বাবার কথা মান্য করেন। মালিক ইবনে দিনারকে ইসলাম প্রচারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন।

মালেক ইবনে দিনার ও তার সহকর্মীরা কেরেলায় ১২টি মসজিদ নির্মাণ করেন। তার প্রথমটির নাম রাজার প্রতি সম্মানপ্রদর্শন করে ‘চেরমান’ রাখা হয়।

ভারতবর্ষের একমাত্র সাহাবির জীবনকথা : রাজা রামা ভরমা হলেন তাজুদ্দিন রা.

অন্য মসজিদগুলো যেসব স্থানে নির্মাণ করা হয় তার কয়েকটি হলো, কল্লাম, মারাভি, ফাখনুর, মাঞ্জারুর, কাঞ্জিরাকুট্টু, জারফাতান, দাহফাতান, ফান্দারিনা।

মালিক ইবনে দিনার রা. এর পর তার সন্তান হাবিব ইবনে দিনার মসজিদের তত্ত্বাবধান করেন। চেরমান মসজিদ চত্ত্বরে হাবিব ইবনে দিনার ও তার স্ত্রীর কবর রয়েছে।

নির্মাণের পর থেকে মসজিদটি কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। মসজিদের বর্তমান তত্ত্বাবধায়কদের ভাষ্য মতে এগার শতকে প্রথম, চতুর্দশ শতকে দ্বিতীয়, ১৯৭৪ সালে তৃতীয় এবং ২০০১ সালে চতুর্থ ও শেষবারের মতো সংস্কার করা হয়।

উপমহাদেশের প্রথম মসজিদটি নির্মাণ করা হয় স্থানীয় ডিজাইনে। কেরালার ঐতিহ্য হিসেবে মসজিদের মধ্যে ঝুলানো আছে প্রদীপ। কাঠের তৈরি মিম্বারেও অনুসরণ করা হয়েছে স্থানীয় রীতি।

Related image

সত্য বলতে, মসজিদটি দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের আদলে তৈরি। যদিও আধুনিক সংস্করণে তাতে গম্বুজ ও মিনার সংযোজন করা হয়েছে।

একটি অনন্য ইসলামী অ্যাপ, এখই ইনস্টল করুন

মুসল্লিদের ওজুর জন্য চেরমান মসজিদে রয়েছে একটি পুকুর। মুসলিম শিশুদের জন্য একটি পাঠশালা। পাঠশালায় হিন্দু শিক্ষার্থীরাও লেখাপড়া করে।

মসজিদ আঙ্গিনায় একটি জাদুঘরও রয়েছে। সেখানে মসজিদের প্রাচীন অনেক নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। যেমন, মসজিদে ব্যবহৃত একটি প্রাচীন ওজুর পাত্র, মসজিদের কাজে ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রি, পয়নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত প্রাচীন পাইপ।

তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় নিদর্শন হলো মসজিদের ৩৫০ বছরের প্রাচীন একটি রেপ্লিকা।
গত বছর সৌদি আরবের বাদশাহ ভারত সফরে আসলে নোরেন্দ্র মোদি তাকে চেরমান মসজিদের একটি গোল্ড রেপ্লিকা তাকে উপহার দেন।

বাংলাদেশের ৭ কারি; যাদের কেরাত শেখায় অনন্য স্রষ্টাপ্রেম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ