শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে তো?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন

সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে না থাকলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না।’ বলা যায়, দেশের রাজনৈতিক মহল এমনকি সাধারণ মানুষও বিষয়টি উপলব্ধি করছে। তবে সিইসির বক্তব্যের ভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে। কারণ দেশে একটি প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব যে নির্বাচন কমিশনের।

বিএনপি ছাড়া নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য তাকে সত্যিকার অর্থেই অগ্নিপরীক্ষার মুখে দাঁড় করিয়েছে বলে মনে করছি। কারণ বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও এ নিয়ে সব ধরনের আশঙ্কা দূর করার উদ্যোগ নেওয়াও যে এখন তার দায়িত্ব। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে সরকার বা সরকারি দলের যেকোনো অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধের সক্ষমতা তাদের রয়েছে।

২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগে ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় এ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত বছরের ১৬ জুলাই নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ করে ইসি। সাতটি কর্মপরিকল্পনা সামনে রেখে বই আকারে এ রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে কমিশন। ইসির রোডম্যাপে যে সাতটি কর্মপরিকল্পনা রয়েছে সেগুলো হচ্ছে­-আইনি কাঠামোগুলো পর্যালোচনা ও সংস্কার। নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও যুগোপযোগী করতে সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ গ্রহণসহ আরও অনেক বিষয়।

এদিকে গত ৩১ জানুয়ারি একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সহায়ক সরকারের দাবি আবারও নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান। সংবিধান অনুযায়ী সহায়ক সরকার বলে কোনো সরকার গঠন করার বিধান নেই। আমাদের সরকার গণতন্ত্রকে সব সময় সমুন্নত রাখবে, সে জন্য সংবিধান পরিপন্থী কোনো সরকার আমরা গ্রহণ করব না।

প্রসঙ্গত, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের নির্বাচনব্যবস্থা অনেকটাই স্বচ্ছ। কথাটা বললাম এই কারণে যে, ভারতে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনগুলোতে নির্বাচন কমিশন প্রশাসনকেই কাজে লাগাচ্ছে। বিশেষ করে জেলাপর্যায়ের নির্বাচনে ডেপুটি কমিশনার হচ্ছেন প্রধান। আর ডেপুটি কমিশনার যখন নির্বাচন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন, তখন ভারতের কোনো রাজনৈতিক দল তাকে চ্যালেঞ্জ করে বলে না যে, সে নিরপেক্ষ নয়।

প্রশ্ন হচ্ছে, ওখানে একজন ডেপুটি কমিশনার নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারছে, অথচ আমাদের এখানে কেন পারছে না? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা আজ সময়ের দাবি।

আবার একথাও সত্য যে, আমরা সবাই যার যার মতো চলব, আর নির্বাচন কমিশন আমাদের নির্বাচন করে দেবে এবং সেই নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ-এমনটিও ভাবা উচিত নয়। যেখানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, পরমতসহিষ্ণুতা, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা অনুপস্থিত-সেখানে নির্বাচন কমিশনের চার-পাঁচজন ব্যক্তি কী আর করবেন?

বলা যায়, আমাদের নির্বাচন কমিশনের সামগ্রিক কিছু দুর্বলতা অবশ্যই আছে। যা মূলত প্রশাসন দলীয়করণের কারণেই দেখা যাচ্ছে। অবশ্য প্রশাসনকে দলমুক্ত ও নিরপেক্ষ করে তার ক্ষমতা সঠিকভাবে প্রয়োগের সুযোগ দিলে দেশের নির্বাচনব্যবস্থা শক্তিশালী হবে, এতে দ্বিমত প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই।

দেশে বিদ্যমান যে পরিবেশ, তা কিন্তু একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুকূলে নয়। হতে পারে সে আশঙ্কা থেকেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন-বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। বিএনপির লোকদের আজ এমন এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে যে, তাতে আত্মরক্ষা করা ছাড়া ভিন্ন কিছু ভাবার সুযোগ তাদের নেই।

এমন পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন খুবই কঠিন এবং নামসর্বস্ব কয়েকটি দলকে নিয়ে নির্বাচনের আয়োজন করা হলে তা সত্যিকার নির্বাচন হবে না। তাই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কর্তব্য-যাতে বিএনপিসহ সব দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মতো উপযুক্ত পরিবেশ পায়। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে এখন থেকেই একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা দরকার। প্রতিটি দলের এ অধিকার রয়েছে যে, রাষ্ট্রযন্ত্র সবার সাথে সম-আচরণ করবে; কারও প্রতি অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হবে না।

এদিকে, খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাকে রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এমন পরিস্থিতি বিরাজ থাকলে বিএনপির পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সম্ভব হবে কি? সে ক্ষেত্রে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ভাগ্যে কী ঘটবে? অবশ্য বিএনপির অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিকল্প নেই। কেননা, দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপির সমর্থক হিসেবে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী রয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে না এলে এই বিপুলসংখ্যক মানুষ নির্বাচন নিয়ে তাদের উৎসাহ হারাতে পারে। ফলে তখন নির্বাচনে জনমতের সঠিক প্রতিফলন ঘটবে না।

লেখক : কবি, গবেষক ও সাংবাদিক
সহযোগী সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ