শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


র‌্যাগিংয়ের স্বীকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারালো জাবি শিক্ষার্থী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: ‘ওরা আমাকে মেরে ফেলবে, গুম করে ফেলবে। মরার আগে একটু মায়ের সাথে দেখা করতে দেন ভাই।’

বন্ধুদের ভাই ভাই করে এভাবেই আকুতি জানাচ্ছিল র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারানো জাবি শিক্ষার্থী  মিজানুর রাহমান। সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে’র ১ম বর্ষের (৪৭তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী।  একই বিভাগের ২য় বর্ষের (৪৬তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীদের দ্বারা র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে বলে জানা যায়।

মিজানুর রহমানের বন্ধুদের সূত্রে জানা যায়, ‘বুধবার দুপুরে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদেরকে পরিচিত হওয়ার জন্য (সিটিং) ডাকে। সেখানে ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদেরকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন (র‌্যাগিং) করে। এ সময় মিজানুরকেও অকথ্য ভাষায় গালি দেওয়াসহ শারীরিক নির্যাতন করে।

এছাড়া সংযুক্ত শহীদ সালাম বরকত হল ছেড়ে আ. ফ. ম. কামালউদ্দিন হলে তাকে আসতে বলে। না আসলে তাকে হত্যা ও গুম করার হুমকি দেয়। এর পরের দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে আবারও তাকে বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা মানসিক নির্যাতন ও হুমকি দেয়। যার কারণে নবীন শিক্ষার্থী মিজানুর ভয় পেয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।

মিজানুরের সহপাঠীদের সূত্রে আরো জানা যায়, ‘এ ঘটনার পর মিজানুর বৃহস্পতিবার রাতে থেকে হলে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। হলের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা তাকে দেখতে এলে ‘তুই আমার জীবন শেষ করেছিস, তোরা আমাকে মেরে ফেলবি’ এমন অযাচিত আচরণ করতে থাকে। এমনকি শুক্রবার দুপুরে  তার বন্ধুদেরকে সে বলে ‘ওরা আমাকে মেরে ফেলবে ‘গুম করে ফেলবে। মরার আগে একটু মায়ের সাথে দেখা করতে দেন ভাই ’।

এমন অবস্থায় পরিবারকে বিষয়টি জানানো হলে রাতে তার পিতা ও চাচা ক্যাম্পাসে আসে। তারপর ডাক্তারের কাছে নেওয়ার জন্য গাড়িতে উঠাতে চাইলে উদ্ভট আচরণ করে মিজানুর। এদিকে মিজানুর তার বাবা ও চাচাকে প্রথমে চিনতে পারছিলনা। অনেক পরে চিনেছে। উচ্চ শিক্ষার জন্য ছেলেকে পাঠিয়ে এমন অবস্থা দেখে চাপা কান্নায় ভেঙে পড়ে মিজানুরের পিতা।’

এদিকে র‌্যাগিংয়ের সাথে জড়িত থাকা সন্দেহে শুক্রবার রাত ১টার দিকে বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের মামুন, হিমেল, সুদীপ্ত ও ক্লাস প্রতিনিধি আনোয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদকারী ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এটিএম আতিকুর রহমান বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা র‌্যাগিংয়ের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছে। তবে তাদের কথা শুনে যতোটুকু বোঝা গেছে তারা র‌্যাগিংয়ের সাথে জাড়িত ছিল।

কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘রবিবার সকালে সাড়ে ৯টায় একাডেমিক বৈঠক বসবে। সেখানে ঘটনার সাথে জাড়িতদের আজীবন বহিষ্কারের সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা আবেদন জানাবো।’
এদিকে র‌্যাগিংয়ের ঘটনার জাড়িতদের নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।

/কেএল


সম্পর্কিত খবর