বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

বাবরি মসজিদ ইস্যু : কোন পথে মাওলানা সালমান হুসাইনি নদভি?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতাউর রহমান খসরু: বাবরি মসজিদ ইস্যুতে সাইয়েদ সালমান হুসাইনি নদভির এক বক্তব্যে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেছেন, বাবরি মসজিদের বিষয়টি আদালতের বাইরে সমাধান হওয়া প্রয়োজন।

বাবরি মসজিদের জায়গা হিন্দুদের হাতে তুলে দিয়ে অন্যত্র মসজিদ ও ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা যেতে পারে।

গত শুক্রবার মুসলিম পার্সনাল ল’ বোর্ডের বার্ষিক সম্মেলনের প্রস্তুতি সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

মাওলানা সালমান হুসাইনি নদভির এ বক্তব্য ভারতের সর্বস্তরের মুসলিমদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। পার্সনাল ল’ বোর্ডের মিটিংয়ে এ বক্তব্য প্রদানের পর সাথে সাথে তার প্রতিবাদ করেন আমেলার একাধিক সদস্য। এতে সভায় বিশৃংখল পরিবেশ তৈরি হয়।

হট্টগোলের মধ্যে মুসলিম পার্সনাল ল’ বোর্ডের সভাস্থল ত্যাগ করেন মাওলানা সালমান হুসাইনি নদভি।

এরপর স্থানীয় গণমাধ্যমে তিনি তার অবস্থানের ব্যাখ্যা করেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন,
মুসলিম পার্সনাল ল’ বোর্ডে উলামায়ে কেরামের সম্মান প্রদর্শন করছে না। ল’ বোর্ডের দুজন স্থায়ী সদস্য কামাল ফারুকি ও কাসেম রাসুল ইলিয়াস হট্টগোল করছেন। অথচ তারা আলেম নয়। শরিয়ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদানে তাদের যোগ্যতা নেই। এ সময় তিনি পৃথক ল’ বোর্ড গঠনের ইঙ্গিতও দেন।

মাওলানা সালমান হুসাইনি নদভি বলেন, বাবরি মসজিদের মতো ইস্যুতে আদালতের উপর নির্ভর করা ঠিক হবে না। বরং উভয় সম্প্রদায়ের মান্যবর ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের একত্রে বসে সমস্যার সমাধান করা উচিৎ এবং তিনি সমঝোতার চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন।

তিনি আরও বলেন, বিতর্কিত ভূমি মন্দির নির্মাণের জন্য অর্পণ করা হবে এবং অন্যত্র মসজিদ ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করা হবে। মসজিদের নাম হবে মসজিদুল ইসলাম।

নিজ বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে সালমান নদভি বলেন, ১৯৪৯ সাল থেকে এ মসজিদে কোনো নামাজ হয় না। সেখানে মূর্তির উপাসনা হয়। আর ফিকহে হাম্বলি অনুযায়ী মসজিদ স্থানন্তর করা বৈধ। জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এবং দীর্ঘদিনের বিতর্কিত বিষয়ের সমাধানের জন্য এ মত আমরা গ্রহণ করতে পারি।

তিনি আরও বলেন, মুসলিম পার্সনাল ল’ বোর্ডের কোনো সিদ্ধান্ত কুরআন সুন্নাহ নয়। এর বিরোধিতা করার অধিকার তার রয়েছে। এ সময় তিনি পার্সনাল ল’ বোর্ডের নাম পরিবর্তন করে ‘শরিয়ত এ্যাপলিকেশন বোর্ড’ করার দাবি করেন। কেননা এ নাম ইংরেজ সরকারের দেয়া।

অন্যদিকে মাওলানা সালমান নদভির বক্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মাওলানা সাইয়েদ আরশাদ মাদানি, মাওলানা মাহমুদ মাদানি ও মাওলানা ওয়ালি রাহমানি। মুসলিম পার্সনাল ল’ বোর্ডের প্রধান মাওলানা রাবে হাসানি নদভি তার বক্তব্যের সরাসরি সমালোচনা না করলেও তার মতের বিপক্ষে মুসলিম পার্সনাল ল’ বোর্ডের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন।

মাওলানা সালমান নদভির বক্তব্যের পর অল ইন্ডিয়া পার্সনাল ল’ বোর্ড তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে গতকাল শনিবার একটি বিবৃতি প্রদান করেছে।

বার্ষিক সম্মেলনের প্রস্তুতি সভা শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে এ বক্তব্য রাখেন ল’ বোর্ডের সেক্রেটারি মাওলানা ওমর মাহফুজ রাহমানি ও প্রস্তুতি সভার সেক্রেটারি আসাদুদ্দিন ওয়াইসি এমপি।

তারা বলেন, বাবরি মসজিদের ব্যাপারে পার্সনাল ল’ বোর্ডের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয় নি। ল’ বোর্ড মনে করে এর সমাধান আদালতেই হওয়া উচিৎ। কেননা কোনো স্থান একবার নামাজের জন্য নির্ধারিত হলে তা কেয়ামত পর্যন্ত নামাজের জন্য ওয়াকফ হয়ে যায়। তাই কোনো মুসলিম স্বেচ্ছায় নামাজের স্থান মন্দির নির্মাণের জন্য ছেড়ে দিতে পারে না।

তারা আরও বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই তবে মুসলিম ধর্মবিশ্বাসকে পরিহার করে না। আদালত যদি কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের উপর চাপিয়ে দেয় তবে আমরা তা বাধ্য হয়ে মেনে নেবো।

মনে রাখতে হবে, বাবরি মসজিদ নিছক কোনো ভবন নয়। এটি আল্লাহর ঘর মসজিদ।
ল’ বোর্ডের সদস্যদের দাবির মুখে মাওলানা সালমান হুসাইনি নদভির বক্তব্য, তার ব্যাখ্যা ও অবস্থান বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য উচ্চতর ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে গতকাল প্রস্তুতি সভা শেষ হওয়া পর্যন্ত মাওলানা সালমান নদভির বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানা যায় নি।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর বক্তব্য অনুসারে মাওলানা নদভিকে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে ডাকতে পারেন ভারতের শীর্ষ আলেমগণ। তারা চাচ্ছেন এ ইস্যুতে যেনো কোনোভাবেই নতুন বিভক্তি তৈরি না হয় মুসলিম সমাজে।

এদিকে তীব্র সমালোচনার মুখে আজ আবারও নিজের অবস্থানে অটল থাকার ঘোষণা দিয়েছেন মাওলানা সালমান হুসাইনি নদভি।

সূত্র: ডেইলি সিয়াসাত, ইউএনএ নিউজ, উর্দু নিউজ ডটকম।

এইচজে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ