বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


এক কবরে ১০ রোহিঙ্গা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রাখাইনে ধীরলয়ে জাতি হত্যা চালানোর অভিযোগ করে আসছেন মং জার্নিসহ দেশটির নির্বাসনে থাকা মানবাধিকারকর্মীরা। সাম্প্রতিক সময়ে সাত লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জাতি হত্যার বিষয়টি জোরেশোরেই বলছে। যুক্তরাজ্যের বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ‘ম্যাসাকার ইন মিয়ানমার’ শীর্ষক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর হাতে রোহিঙ্গাদের নৃশংসভাবে খুন হওয়ার চিত্র। গত বৃহস্পতিবারের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইনের ইন দিন গ্রামে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার পর একটি কবরে পুঁতে ফেলা হয়।

কবর খননকারীদের দুজন রয়টার্সকে জানান, ১০ রোহিঙ্গার মধ্যে অন্তত দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করে তাদের প্রতিবেশীরা। আর সেনাসদস্যরা নির্বিচারে গুলি করে খুন করে অন্য ৮ জনকে। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি তৈরি করতে গিয়ে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর মিয়ানমার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন বার্তা সংস্থাটির দুই সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিউ সোয়ে ওকে। পুলিশ মিয়ানমারের ওই দুই নাগরিকের বিরুদ্ধে রাখাইনসংক্রান্ত গোপন দলিল সংগ্রহের অভিযোগ এনেছে। এখনো তাঁরা কারাবন্দী রয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে ১০ রোহিঙ্গা মুসলমানকে আটক করে সেনাসদস্যরা। আটক হওয়ার পর ১০ রোহিঙ্গা দেখতে পায় প্রতিবেশী কয়েকজন বৌদ্ধ একটি অগভীর কবর খুঁড়ছে। গ্রেপ্তারের পরদিন সকাল ১০টার পর তাদের হত্যা করে ওই কবরে মাটিচাপা দেওয়া হয়।

হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বৌদ্ধ গ্রামবাসীর কাছে পাওয়া তিনটি ছবি আর ওই কবর খননের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাবেক এক বৌদ্ধ সেনাসদস্য হত্যার সাক্ষ্য দেয়। প্রথম দুই ছবিতে গ্রেপ্তারের পর হাঁটু গেড়ে রোহিঙ্গাদের বসে থাকার দৃশ্য আর তৃতীয় ছবিতে হত্যার পর কবরে তাদের লাশের দৃশ্য তুলে ধরেছে। কবর খননকারীদের একজন ও হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী সাবেক সেনাসদস্য সো চায় বলেন, ১০ জনের জন্য একটি কবর। প্রত্যেককে দু-তিনবার গুলি করে সেনারা। যখন কবর দেওয়া হচ্ছিল তখনো কারও কারও গোঙানির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেওয়া নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা ওই ছবি দেখে তাদের চিহ্নিত করেছেন। নিহত ব্যক্তিরা ছিলেন জেলে, দোকানি, দুই ছাত্র এবং একজন মাওলানা।

 উত্তর রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তে থেকে প্রায় ৫০ মাইল দূরে মাইয়ু নদী আর বঙ্গোপসাগরের মাঝে অবস্থিত ইন দিন। সেখানে একটি স্কুল, ক্লিনিক আর প্যাগোডার আশপাশে বিচ্ছিন্ন কিছু পাড়া নিয়ে বসতি গড়ে উঠেছে। গ্রামের উত্তরাংশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন বাস করে আসছে। প্রায় সাত হাজার গ্রামবাসীর মধ্যে ৯০ শতাংশই হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলমান। দীর্ঘদিন ধরে বৌদ্ধ ও মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করলেও তারা সেখানে বসবাস করে আসছে। উপকূলে মাছ ধরে আর ধান চাষ করে জীবন কাটায় সেখানকার গ্রামবাসীরা।

নিরপেক্ষ তদন্ত চায় যুক্তরাষ্ট্র

১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার বিষয়টি নিয়ে একটি স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত দাবি করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হিদার নুয়ার্ট বলেন, এ ধরনের তদন্ত সেখানে কী ঘটেছে, ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের পরিচয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের চিহ্নিত করা এবং বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার বিষয়ে সেটার সার্বিক চিত্র তুলে ধরবে।

মোদি-ট্রাম্প ফোনালাপ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। হোয়াইট হাউস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দুই নেতা ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা জোরদারে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা আফগানিস্তানের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ব্যাপারে পুনরায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মালদ্বীপের রাজনৈতিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধার বিষয়ে জোর দিয়েছেন দুই নেতা। তাঁরা মিয়ানমারের পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে মতবিনিময় করেছেন।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ