বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


ভাইজানকে লেখা থানবি রহ. এর চিঠি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

[জামিয়া দারুল উলুম করাচির মুখপাত্র ‘ماہنامہ البلاغ মাহনামা আল-বালাগ’ এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত বিশ্বনন্দিত আলেম, স্কলার আল্লামা তাকি উসমানির আত্মজীবনী আওয়ার ইসলামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।

এ বিষয়ে আল্লামা তাকি উসমানি আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ার ইসলামকে ভাষান্তর করে প্রকাশের অনুমতি দিয়েছেন। গত ২ জানুয়ারি জামিয়া দারুল উলুম করাচির তাখাসসুস ফিল ইফতার শিক্ষার্থী, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের শুভাকাঙ্ক্ষি উমর ফারুক ইবরাহীমীর মাধ্যমে আল্লামা তাকি উসমানি ও পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মজীবনী ‘ইয়াদে’ অনুবাদের অনুমতি চাওয়া হলে তারা খুশি মনে রাজি হন এবং আওয়ার ইসলামকে ধন্যবাদ জানান বাংলাভাষায় ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য।

আল্লামা তাকি উসমানির নতুন ধারাবাহিক আত্মজীবনী “یادیں ইয়াদেঁ ” মাহনামা আল-বালাগে সফর ১৪৩৯ হিজরি, নভেম্বর ২০১৭ ইংরেজি মাস থেকে। আওয়ার ইসলামে লেখাটি প্রতি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হচ্ছে। আজ ছাপা হলো ৯ম কিস্তি। অনুবাদ করেছেন মাওলানা  উমর ফারুক ইবরাহীমী।]

পূর্ব প্রকাশের পর: ছোট্ট বয়সে যখন ভাইজান সবেমাত্র লিখতে শিখেছেন,আব্বাজান ভাইজানের প্রথম চিঠি হজরত আশরাফ আলি থানবি রহ.বরাবর লিখিয়েছেন। চিঠির জবাবে হজরত থানবি রহ. যা বলেছেন,সেটা আমাদের জন্য অনেক বড় শিক্ষণীয় বিষয়। আর ভাইজানের জন্য সৌভাগ্যের সোপান।

হজরত লিখেছেন- ‘প্রিয়,সাল্লামাহু!
তোমার প্রতি রইলো সালাম এবং অনেক অনেক দোয়া। তোমার লেখা দেখে খুশিতে দিল ভরে গেছে। তোমার ইলমি, আমলি উন্নতির দোয়া করি। লেখা আরেকটু পরিষ্কার করে নিয়ো, যেনো পাঠকের পড়তে সহজ হয়। এতে তোমার সওয়াবও মিলে যাবে।

দেখো! আমি তোমাকে বাল্যকাল থেকেই সুফি বানিয়ে দিচ্ছি। মাথাব্যথার এই তাবিজ মাথায় বেঁধে নিয়ো। ঘরের সবার প্রতি সালাম এবং দোয়া রইলো।
-আশরাফ আলী’

সাধারণ মানুষ ভাবছেন- লেখা পরিষ্কার করে নেয়ার সাথে তাসাউফের কী সম্পর্ক? কিন্তু হজরত থানবির অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিলো- তিনি শরিয়ত ও তরিকতের গুরুতপূর্ণ বিষয়াদি অর্থাৎ আদাব, মু'আশারাত, আখলাক এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি স্বীয় মুতা'আল্লিকিনদের সেই সময়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, যখন দ্বীনের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে দ্বীন বহির্ভূত ধরে নেয়া হয়েছিলো।

হজরত কখনোই দৈনন্দিনের ওজিফা, নফলে অলসতার কারণে কাউকে ভর্তসনা করেননি।তবে কেউ আদাব, মু'আশারাত অথবা মু'আমালাত ইত্যাদির ক্ষেত্রে ত্রুটি করলে, অথবা অন্যের কষ্ট হয় এমন কোন কাজ করলে সেটার জন্য অবশ্যই কঠিনভাবে পাকড়াও করেছেন।

হজরতের এই শিক্ষা, তরবিয়তের প্রভাব ভাইজানের উপর এতটাই বিস্তার করেছিলো, তিনি সর্বদা নিজের উঠাবসায় এই বিষয়টির প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতেন, যেন তাঁর দ্বারা কারো কষ্ট না হয়।

হজরত হাকিমুল উম্মতের হাতে ভাইজানের বায়'আতের ঘটনাটাও বড় আশ্চর্যের! তখনো ভাইজান অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছিলেন। হজরতের নিঃস্বার্থ স্নেহ, অতুলনীয় ভালোবাসা দেখে তিনি একদিন নিজ থেকেই হজরতের কাছে বাই'আতের দরখাস্ত পেশ করলেন।

সাধারণত হজরত অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বাই'আত করতেন না। তাই হজরত স্বভাবজাত খুশমেজাজে বললেন, বাই'আত বুঝি খালি হাতে হয়! যাও! আমরুদ (পেয়ারা) নিয়ে এসো, তবেই বাই'আত করবো!

তখন আমরুদের মৌসুম না হওয়ায় তা বাজারেও পাওয়া যেতো না। তাই হজরত ভাইজানের কথা না রাখার জন্যই এমনটা বলেছেন। হজরতের ধারণা ছিলো, এই অসময়ে সে আমরুদ আনতে পারবে না, আর বাই'আতও হবে না। কিন্তু ভাইজান কোত্থেকে যেনো আমরুদ নিয়ে হাজির! হজরত দেখে তো থ' বনে গেলেন! তবে তিনি যেহেতু ওয়াদা করেই ফেলেছিলেন, তাই খুশিখুশি বাই'আত করে নিলেন।

যেভাবে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম

কিন্তু হজরতের মতো করে শরয়ি বিধানাবলির প্রতি কেইবা লক্ষ রাখবে? ভাইজান তখনো অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছিলেন, আর অপ্রাপ্ত বয়স্কদের হাদিয়া বাবা-মায়ের অনুমতি ছাড়া কবুল করতে ইসলাম অনুমতি দেয় না। তাই তিনি ভাইজানকে ফেরত পাঠালেন, যাও! আব্বু, আম্মুকে জিজ্ঞেস করে এসো।

ভাইজান অনুমতি নিয়ে আসলেন, তবেই হজরত হাদিয়া কবুল করেছেন।

এই ঘটনার পর ৭ রবিউস সানি, ১৩৫৬হিজরি সনে আব্বাজান, হজরত মারফত পত্র প্রেরণ করলেন, সেখানে লিখেছেন- ‘মুহাম্মদ জাকি'র (সাল্লামাহু) বাই'আতের বরকত দিনদিন স্পষ্টতর হচ্ছে। এখন তার নামাজের প্রতি সীমাহীন শওক পরিলক্ষিত হচ্ছে। আগে ঈশার নামাজের পূর্বেই শুয়ে পড়তো, আর এখন বসে বসে নামাজের ইন্তেজার করে।

হজরত হাকিমুল উম্মত এই পত্রের জবাবে লিখেছেন- ‘মাশা'আল্লাহ! আমিও দোয়া চাই,আল্লাহ্‌ যেনো আমাকেও এই নিষ্পাপ, মাসুম বাচ্চাদের বরকত নসিব করেন এবং আমলের হিম্মত, দৃঢ়তা ও ইখলাস দান করেন। চলবে ইনশাআল্লাহ...

আগের পর্বগুলো পড়তে: থানবি রহ.মজা করে ভাইজানের নাম রেখেছিলেন ‘পানী’


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ