মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


বহুল আলোচিত রায়; সাজা না খালাস!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন

তারিখ অপরিবর্তিত থাকলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আজ পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান রায় ঘোষণা করবেন। এ মামলার অন্যতম আসামি খালেদা জিয়া।

রায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা, না খালাস পাবেন-তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। তবে এটি ছাড়িয়ে জনমনে প্রবল শঙ্কা, আতঙ্ক। কী ঘটতে যাচ্ছে আজ?

এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। খালেদা জিয়াসহ ৬ আসামি হলেন- তার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও শহীদ জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজধানীসহ সারা দেশে ত্রিমুখী প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার ও আওয়ামী লীগ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক শক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে সরকার।

ইতিমধ্যে মামলাটির রাজনীতিকরণ ঘটেছে। বলা যায়, বিএনপি এটিকে রাজনৈতিক হয়রানি হিসেবে চিহ্নিত করছে। আর আওয়ামী লীগের নেতারা খালেদা জিয়াকে ‘এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী’ বলে বক্তৃতা করছেন।

বইমেলার সব বই ঘরে বসে পেতে অর্ডার করুন রকমারিতে

অবশ্য জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট থেকে কোনো টাকা তসরুপ হয়নি বলে দাবি করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, সমস্ত টাকা প্রতিষ্ঠানের নামেই ব্যাংকে জমা আছে। এখন সুদাসলে সেই টাকা বেড়ে প্রায় তিনগুণ হয়েছে। ৭ ফেব্রুয়ারি গুলশানে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন।

দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সাবেক সেনাশাসক এইচ এম এরশাদ ছাড়া কোনো শাসককেই মামলায় জেল খাটতে হয়নি। সাংবিধানিকভাবে তিনবার এবং গণ রায়ে দুইবারের নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়ে দণ্ড দিলে আজই তাকে জেলে যেতে হবে। পরের দু’দিন সরকারি ছুটি থাকায় খালেদা জিয়াকে থাকতে হবে কারাগারেই।

মামলার সার্টিফাইড কপি ১০ ফেব্রুয়ারি, রোববার সংগ্রহ করে উচ্চ আদালতে আপিল করলে আদালত যদি জামিন দেন তাহলে হয়ত তিনি মুক্তি পেতে পারেন। তাহলে এটি হবে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল একটি ঘটনা।

অরফানেজ ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারের গতি-প্রকৃতির এই যখন অবস্থা, তখন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে আরও ১৪টি মামলা বিশেষ আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে মামলার জট তৈরি হয়েছে নিম্ন আদালতে। সেদিকে সরকারের তেমন নজর না থাকলেও বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোয়।

তবে নিম্ন আদালতে সাজা হলেই কেউ নির্বাচন করতে পারবেন কি-না, বিষয়টি আসলে আমাদের আইনে স্পষ্ট নয়। নিম্ন আদালতে খালেদা জিয়ার সাজা হলে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করবেন, এটা স্বাভাবিক।

উচ্চ আদালত যদি নিম্ন আদালতের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ না দেয় এবং আপিল বিচারাধীন থাকলে আইনের স্বাভাবিক হিসাব বলে-কারাগারে থেকেই তিনি নির্বাচন করতে পারবেন। আর উচ্চ আদালত যদি তার আপিল খারিজ করেন তাহলে অন্য কথা। তাছাড়া উচ্চ আদালতের ইদানীং কিছু রায়ে বিষয়গুলো নিয়ে অস্পষ্টতা দেখা দিয়েছে।

যেমন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সাজা হয়েছিল। হাইকোর্ট তার আপিল খারিজ করে দেয়, এরপর আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ খারিজ করে নতুন করে শুনানির নির্দেশ দেয়। এর অর্থ হচ্ছে, মামলাটি এখনো হাইকোর্টে বিচারাধীন।

কিন্তু মায়ার মন্ত্রিত্ব কিংবা সংসদ সদস্য পদ তো যায়নি। আপিল করা অবস্থায় তিনি সংসদ সদস্য পদে বহাল আছেন। কাজেই এখানে মন্ত্রী মায়ার বিষয়টি একটি উদাহরণ হয়ে থাকছে। এই উদাহরণ টেনে বলা যায়, উচ্চ আদালতে আপিল থাকলে কেউ নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ার কথা নয়।

খালেদা জিয়ার মামলার পরিণতি নিয়ে আলোচনা শুধু আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। গোটা রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ নিয়ে নানামুখী আলোচনা ও বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হবে কি না, সাজা হলে কী হবে, না হলে কী হবে, নিম্ন আদালতে সাজা হলেই খালেদা জিয়া নির্বাচনে অযোগ্য হবেন কি না, সাজা হলে উচ্চ আদালতে আপিল করার পর কী হবে, নিম্ন আদালতের রায় উচ্চ আদালত স্থগিত করলে বা না করলে কী হবে, স্থগিত না হয়ে উচ্চ আদালতে শুধু বিচারাধীন থাকলে কী হবে বিএনপিতে ভাঙন হবে কি, বিএনপি ছাড়াই কি আবারও একতরফা নির্বাচন হবে? -এ রকম খুঁটিনাটি হিসাব-নিকাশ চলছে রাজনীতির অলিগলিতে।

সেই সাথে দেশবাসী আছেন আতঙ্কে। আছে উৎকণ্ঠাও। বিশেষ করে চলমান এসএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বেশি। রায় বিএনপির বিপক্ষে গেলে কী কর্মসূচি আসতে পারে? সরকার বিরোধী দলকে দমন করতে কী পদক্ষেপ নেবে? পুলিশ কি আবারও দেশব্যাপী ধরপাকড় শুরু করবে?

বিএনপি-জামায়াত সন্দেহে সাধারণ মানুষকেও হয়রানিতে পড়তে হবে নতুন করে? আবারও কি গুম-নিখোঁজ বেড়ে যাবে দেশজুড়ে? এমন নানা প্রশ্ন আর পাল্টা প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে।

এ রায়কে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন ধরে বিএনপি একের পর এক বৈঠক করছে। করণীয় নির্ধারণ করতে শলাপরামর্শ করছে। দলীয় পর্যায়ে করছে, আবার জোটগতভাবেও করছে। বিদেশি কূটনৈতিকদের সঙ্গেও বৈঠক করেছে। এগুলো ভালো লক্ষণ। কেননা, ভালো-খারাপ যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক না কেন সেটা কারও একার মস্তিষ্কজাত না হওয়াই ভালো।

তবে এক্ষেত্রে সরকারকেও বুঝতে হবে-মাত্রাতিরিক্ত দমন-পীড়ন মানুষকে পীড়িতদের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তোলে। শক্তির জোরে জয়ী হওয়া যায় সাময়িকভাবে। স্থায়ী জয় যুক্তির জোরেই। সরকারকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। আর বিএনপি অংশ না নিলে সে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক ও প্রশ্ন থাকবেই। তাই বিএনপি ভীতি কাটিয়ে ওঠার রাজনৈতিক স্থায়ী উপায় সরকারকে খুঁজে বের করতে হবে।

আমরা সরকার ও বিরোধী দল উভয়ের কাছ থেকে ইতিবাচক ভূমিকা আশা করি। আমরা শুনতে চাই না যে, আওয়ামী লীগ নেতিবাচক রাজনীতি করছে বলে বিএনপি বা অন্যরাও নেতিবাচক রাজনীতি পরিহার করবে না। কিংবা বিএনপি নেতিবাচক রাজনীতি করছে বলে ক্ষমতাসীনরাও উদার হবে না। আমরা চাই-কেউ কারও ভুল পথের অনুগামী না হয়ে বরং সঠিক পথের দিশারি হবে।

লেখক : কবি, কলামিস্ট ও সাংবাদিক
সহযোগী সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ