বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
‘মানতিক; যুগের চাহিদার সাথে মিলে না’ এ ধরেণের কথা অযৌক্তিক: মুফতি হিফজুর রহমান দাওরায়ে হাদিসের ফলাফল নজরে সানীর আবেদনের সময় বাকি ৩ দিন  বৃষ্টি প্রার্থনায় জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ায় ‘সালাতুল ইস্তিসকা’  আদায় হাসপাতালে সৌদি বাদশাহ সালমান সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পাঠ্য তালিকার সাথে বেফাকের পাঠ্য তালিকার সম্পর্ক নেই: বেফাক সৈয়দপুরে তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ, ‘হিটস্ট্রোকে’ ১ জনের মৃত্যু স্বর্ণের দাম আরও কমলো, ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ইরান-পাকিস্তানের ঢাবিতে বৃষ্টির জন্য ‘সালাতুল ইসতিস্কা’র অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘বৃষ্টির জন্যে সালাত আদায় করলেই অবশ্যম্ভাবী বৃষ্টি চলে আসবে—বিষয়টা তা নয়’

‘আল্লাহর রাস্তায় সময় দিয়েও পরিবারকে আগলে রাখতে হয়’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

পীরে কামেল মাওলানা আহমাদ আলী। একজন আলেম লেখক, অনুবাদক, সফল প্রকাশক ও দায়ী। অভিজাত প্রকাশনা সংস্থা মাকতাবাতুল আখতারের সিও। বনশ্রী কেন্দ্রীয় মসজিদের সাবেক খতিব।

বর্তমানে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর বায়তুল আমান জামে মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি নরসিংদী জেলার মুছাপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা আলহাজ সামসুল হক।

১৯৯১-৯২ সালে ভারতের ঐতিহ্যবাহী দীনি বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দে পড়াশোনা করেন।
বাংলাদেশের কয়েকটি কওমি মাদরাসার পৃষ্ঠপোষকতায় আছেন। শাইখুল আরব ওয়াল আজম আবদুল হাফিজ মক্কী রহ. ও শাহ হাকিম মুহাম্মাদ আখতার রহ. এর অন্যতম খলিফা।

পারিবারিক সামাজিক ও সন্তানদের লালন-পালন বিষয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনামূলক কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের সম্পাদক মুফতি হুমায়ুন আইয়ুব এর সঙ্গে। লিখেছেন মুফতি আবদুল্লাহ তামিম।

হুমায়ুন আইয়ুব: আমরা আজকে আপনার সাথে ব্যতিক্রমধর্মী একটি বিষয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছি। আমরা জেনেছি আপনি আপনার পুত্র সন্তান মুহাম্মাদ, নয় মাসে পবিত্র কুরআন হিফজ করেছে। পারিবারিক তত্বাবধানে নিজের সন্তানকে হাফিজ করে গড়ে তোলা এটা বাংলাদেশে নতুন একটি দিগন্তের উম্মচন করবে। আপনি আপনার সন্তানের এই সাফল্যে বড় একটি শুকরানা মাহফিলের আয়োজন করেছেন। এর আগে মুহাম্মাদের হাফেজ হওয়ার যে সময়টা অতিবাহিত হয়েছে তাতে আপনি একজন বাবা বা একজন শিক্ষক হিসেবে কেমন করে দেখেছেন আমরা সেটা শুনতে চাইব।

মাওলানা আহমাদ আলী: আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া। আমি সর্ব প্রথম চাই আমাদের আজকের এই সাক্ষাতকার রেজায়ে ইলাল্লাহর জন্যই যেনো হয়। দুনিয়ার কোনো মোহ বা লৌকিকতা না থাকে সেটা কামনা করি আল্লাহর দরবারে।

নিজের সন্তানকে নিজেরাই গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে। সেই জন্য আপন ঘরের উপর পারিবারিক আর কোনো গণ্ডি নেই। এই গণ্ডিটাই সবচেয়ে সুন্দর ও কাজের একটা গণ্ডি।

বাইরের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে, যেমন ধরেন ইনল্যান্ডের রাজ পরিবারগুলোতে একদম ছোট থেকে বাচ্ছাদের ঘরের মধ্যেই আদব কায়দা ভদ্রতা শিক্ষা দেয়া হয়।আমাদের সমাজ তাদেরকে আইডল হিসেবে নেয়। তবে আমরা মডেল হিসেবে  রাসূল সা.কে গ্ওরহণ করবো।তিনি ছোটদের ঘরেই শিক্ষা দিতে আদেশ করতেন।

ইবেন আব্বাস রা. বর্ণিত একটি হাদিস আছে রাসূল সা. এর সাথে একবার আমি হাঁটছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, ছেলে আমি তোমাকে কিছু কথা শুনাচ্ছি কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনো তুমি যদি আল্লাহর হুকুমের হিফাজত কর আল্লাহ তোমার হেফাজত করবে।

আল্লাহর কাছে চাইলেই তুমি আল্লাহকে পাবে। যদি তোমার কোনো চাওয়ার থাকে আল্লাহর কাছে চাও আর যদি কোনো সাহায্য চাওয়ার থাকে আল্লাহর কাছেই চাও। আমাদের সব কিছুর আগে আল্লাহ আর সমস্ত মাখলুকের আল্লাহই একমাত্র আশ্রয়। আমি প্রায়ই বলে থাকি আমরা আমাদের একটি মোবাইল থাকলে বলি আমার মোবাইল কিন্তু কখনো কী হৃদয় থেকে বলেছি আমার আল্লাহ? আল্লাহকে আপন করে নেয়ার নামই ঈমান। ভালোবাসার নামই ইসলাম। এই ঈমানের বিষয়গুলো ছোট থেকে বাচ্চাদের কে শিখাতে হবে।

হাদিস ও কুরআনে পরিস্কারভাবে আসছে, যখন সাহবায়ে কেরাম বিপদে পড়ে আল্লাহর কাছেই চায়।পৃথিবীর সকল মানুষেই আল্লাহর কাছে চায়। তবে আমাদের ইসলামে শুধু এতটুকুই পার্থক্য যে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সর্ব বিষয়ে রাসূলের আদর্শের অনুসরণ করতে বলেছেন।

আর রাসূল সা. বাচ্চাদের যেভাবে শেখাতেন আমরা সেভাবেই শেখানোর চেষ্টা করবো। পারিবারিক একটা আবহ তৈরি করবো। হযরত আয়েশা রা. মুহাদ্দিসিনদের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু পর্যায়ে রয়েছে। তাঁর কথাই যদি ধরি, তিনি বিয়ের আগে বাবার কাছে শিখেছেন। বিয়ের পর স্বামীর কাছে শিখেছেন।

এছাড়াও আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা রাসূল সা. এর কাছেই শিখেছেন। ওমর রা.ও শিখেছেন। সব সাহাবীরাই ঘরে সর্ব প্রথম শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।

আমি সেটাই বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছি। আর একটু গোড়ার কথা বললে, আমি যখন ছোট। স্কুলে ভর্তি হয়েছি পাঁচ বছর বয়সে। আমাকে ক্লাস থ্রিতে ভর্তি করে। কয়েকদিন যাওয়ার পর শিক্ষকরা বলল, তাকে ক্লাস ফোরে ওঠিয়ে দেয়া হোক।

ফোরের প্রথম পরীক্ষায় আমি প্রথম হই। আর ফাইভের ছাত্রদের তখন আমি গণীত শিখিয়ে দিতাম। স্যার এটা জানতে পেরে আমাকে ফাইভে ওঠিয়ে দিলেন। আমার এটা সৌভাগ্য ছিলো যে, আমার বড় বোন তিনি একাধারে লেখিকা ছিলেন, শিক্ষিকা ছিলেন। আমি তার থেকেই হাতে কলমে অনেক কিছু শিখেছি।

তিনি ২০০৭ সালে হজ থেকে ফেরার সময় আল্লাহর দরবারে চলে গেছেন। তাঁর থেকে দীনি ও দুনিয়ার অনেক কিছু শিখেছি আমি। তিনি স্কুলের গণ্ডি পাড় হন নি কিন্ত তখন তিনি আজাদ পত্রিকায় লিখতেন।

আমার আম্মা স্বভাবজাত কবি ছিলেন। আমার বাবাও ফক্বিহ ছিলেন। আমার বাবা স্কুলে ভালো করার কারণে আব্বা আমাকে মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দেয়ার চিন্তা করলেন।

আমাকে মাদরাসায় ভর্তি করিয়েও দিলেন। তিনশ ছাত্রের জন্য তিনটা সৌচাগার এটা খুবুই কষ্ট হতো। যাক এটা অনেক কষ্টের ছিলো। সেই কষ্টের মধ্য দিয়েই আমি হাফেজ হয়েছি। যাক আমার ছেলে মুহাম্মাদও আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে নয় মাসে হাফেজ হয়েছে। মুহাম্মাদকে আল্লাহ তায়ালা তার খাস রহমতে বিশেষ মৌজেজার মাধ্যমে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিয়েছেন অন্যভাবে। বলতে গেলে অনেক কথা। মুহম্মাদ জন্মের পর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত তার কোনো শারীরিক উন্নতি হয় নি। তিন বছর পর্যন্ত উপোড় হতে পারে নি। তার শরীরের কোনো হাড়ই জোড়া লাগা ছিলো না। হাড়গুলো গুড়ো গুড়ো ছিলো। তার শরীর গঠন ও বেড়ে ওঠার কোনো লক্ষণই ছিলো না।

সে বড় বড় তিনটি রোগ নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে। আমরা কারো কাছে কিছু বলিনি, শুধু রব্বে কারীম মহান আল্লাহর কাছে বলেছি। হে আল্লাহ তুমি তাকে সৃষ্টি করেছ ভালোও তুমিই করতে পারবে। তিন বছর পর আমার এক ডাক্তারের স্ত্রী আমার বাসায় এসে অবাক হয় মুহাম্মাদকে দেখে। তারপর তাদের উদ্যোগে ডাক্তার দেখানো হয়। আমাদের ভরসা ছিলো শুধুই মহান আল্লাহ।  বড় বড় ডাক্তাররাও চিন্তিত ছিলো এই রোগ নিয়ে। ডাক্তাররা বলল, তার রিইকেস, অস্ট্রিয়াজিনিসিস ইন পারফেক্টা ও সিপি তিনটি রোগ রয়েছে।

ভারত, জাপানসহ ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তাররা বোর্ড বসে তারা সিদ্ধান্ত দিলো, সে ঠিক হবে না। এভাবেই থাকবে। ভারতের ডাক্তাররা আমাকে অনেক অর্থ ও অফার করেছিলো যে আমি মুহাম্মাদকে দিয়ে দিলে তারা তার শরীর নিয়ে গবেষণা করবে।সব কিছু বাদ দিয়ে আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করে বায়তুল্লাহ চলে গেলাম।

মুহাম্মাদকে নিয়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেছি। আর রব্বে কারীমের নিকট ফরিয়াদ করেছি। তাকে কোলে নিয়ে সেখানে শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম। একদিন বায়তুল্লাহয় আমি মুহাম্মাদকে নিয়ে বসে ছিলাম। হঠাৎ মুহাম্মাদ বলল আব্বু আমি দাঁড়াই। আম্মুর কাছে যাই। জন্মের পর তার মুখ থেকে এই প্রথম কথা বের হলো আর সে ওঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো দীর্ঘ  তিন বছর পর। সুবহানাল্লাহ। রব্বে কারীমের দয়া দেখে আমরা মাহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতায় পাগল হয়ে যাওয়ার দশা। অপার করুনার নিদর্শন দেখিযেছন আল্লাহ পাক। আলহামদুলিল্লাহ তখন তাকে যা শিখিয়ে দেয়া হতো সে বলতো।

তাকে বলা হলো হাজা বায়তুল্লাহ, সে বলল হাজা বায়তুল্লাহ। পুলিশরা দেখে তাকে কোলে নিয়ে হাজরে আসওয়াদে চুমু দিতে নিয়ে গেলো।এতো ছোট বাচ্চা কথা বলে, তাও আবার আরবিতে। তারা আশ্চর্য হচ্ছে এতো ছোট বাচ্চা আরবি বলে কীভাবে। তখন যেহেতু তার গ্রোথ হয় নি। দেখতে ছোট দেখাচ্ছিল।

এই প্রথমবারের মত মদিনা থেকে তার জন্য জুতা কিনি। ও তখন হাঁটতে শিখে। আর ও তার আম্মুর কাছেই সব শিখেছে। আল্লাহ তাকে অনেক কিছু দান করেছে। এরপর ডাক্তাররা একবার বলেছিল, তাকে টেস্ট করে দেখি। আমরা বললাম, না আল্লাহ প্রদত্ব বরকতে হাত দেয়া ঠিক হবে না।

বর্তমানে বাচ্চারা যেন খারাপ দিকে ঝুঁকে না পড়ে সে জন্য সরকার কত কিছুই করছে। তাই আমরা পারিবারিকভাবে আমার বাচ্চাদের আল্লাহ ওয়ালা কীভাবে হবে সেই মেহনতটাই করেছি।

আমার বড় মেয়েও তার মার কাছ থেকে হিফজ শেষ করেছে। পরে আমি দশ পাড়া করে শুনেছি। এভাবেই আমরা চেষ্টা করেছি পারিবারিকভাবে তাদের বেড়ে ওঠার পাশাপাশি শিক্ষাটাও যেনো দীনি পদ্ধতিতে সুন্দর উপায়ে হয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের চেষ্টাকে কবুল করেছেন।

হুমায়ুন আইয়ুব: মুহতারাম আপনার এত ব্যস্ততার মধ্যেও কীভাবে আপনার সন্তানকে সময় দেয়া সম্ভব হয়েছে এই বিষয়ে কিছু বলুন।

মাওলানা আহমাদ আলী: এটার জন্য মূলত সর্বপ্রথম ইচ্ছাটা জরুরি। আল্লাহ বলেছেন, যে চেষ্টা করে আমি তার জন্য পথ খুলে দেই। সেই জন্য আমি আমার স্ত্রী সর্বপ্রথম এই সিন্ধান্ত নেই আমাদের সন্তানকে আমরা ঘরেই পড়াশোনা করাবো।

আলহামদুলিল্লাহ আমার স্ত্রীও কুরআন পড়তে পারে আমার থেকেই শিখেছে। বিয়ের পূর্বে সে দ্বীনদার ফ্যামিলিতে না থাকলেও ভদ্র ফ্যামিলিতে ছিলো। এখন আলহামদুলিল্লাহ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠা দীনদার মহিলা আমি মনে করি।

তো মূলত চেষ্টাটাই মানুষের সফলতার দার খুলে দেয়। মুহাম্মাদ তার মায়ের কাছেই বাংলা ইংরেজি ও নাজারা শেষ করে। আর আমি তখন খুব ব্যস্ত। আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যেই আমি ছয়টা মহাদেশ সফর করেছি। তখন খুব ভালোবাসা দিয়ে ছেলে আর মেয়েকে তাদের মা আগলে রেখেছিলো।

আমি সবসমই বলি, পারিবারিক ভালোবাসা চাইলে ছেলেমেয়ের সামনে কখনো কথা কাটকাটি ঝগড়া করা উচিত নয়। বর্তমান সময়ে এটার জন্যই বেশির ভাগ পরিবারে খারাপ প্রভাব পড়ছে।

হুমায়ুন আইয়ুব: এখানে একাটা অভিযোগ আসে যে তাবলিগে যারা সময় দেয় তারা পরিবারকে সময় দিতে পারে না বা সময় দেয় না। কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন আপনি ছয়টি মহাদেশ সফর করে আবার আপনার সন্তানের শিক্ষকও আপনি এটা কীভাবে সম্ভব হলো?

মাওলানা আহমাদ আলী: সন্তানকে মূলত তার সঠিক সময়ে সময় দিতে হয়। আমার ছেলের বয়স যখন নয় আমি তখনই কাকরাইলকে বলেছি- আমি তো দীর্ঘ সময় আল্লাহর রাস্তায় সময় দিয়েছি এখন পরিবারকে সময় দিতে চাই। কারণ আমি তো আমার পরিবারকে রাসূলের উম্মাত হিসেবেই সময় দিয়েছি।

আর রাসূল সা. পরিবারকে যথেষ্ট সময় দিয়েছেন এটা বিভিন্ন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

হুমায়ুন আইয়ুব: আপনার মাকতাবা ও তাবলিগের বড় দায়িত্ব ও ব্যবসা এত ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে আপনি নয় মাস সময় আপনার সন্তানকে কীভাবে দিয়েছেন?

মাওলানা আহমাদ আলী: এ ক্ষেত্রে আমি বলবো, সন্তানের বয়স যখন আট নয় হয় তখন তার মায়ের সাথে সাথে বাবার উপস্থিকিটা জরুরি হয়ে পড়ে। শুধু একজন মা তাকে সামলাতে পারে না। তাই এই উপযুক্ত সময়টাতেই মুহাম্মাদের বয়স যখন ৯ আমি তাকে সময় দিতে শুরু করলাম। এখন তার বয়স দশ। আলহামদুলিল্লাহ সে ৯ মাসে হিফজ শেষ করেছে। তাই সময় মত সন্তানকে তার বাবার সময় দেয়াটা সন্তানের হক।

হুমায়ুন আইয়ুব: আমরা জানি, আল্লামা মাহমুদুল হাসান সাহেবের পরিবারে ওনার মায়ের কাছ থেকে প্রায় ৫০ জন হাফেজ হয়েছে। আবার শাইখুল হাদীস আল্লামা আজীজুল হক রহ. এর পরিবারেও অসংখ্য হাফেজ তাদের মায়েদের থেকে হয়েছে। বড় বড় অনেক আলেমের পরিবারের এমন ইতিহাস আছে। কিন্তু বিপরীতে অনেক বড় বড় আলেম আছে যাদের সন্তানের জন্য তারা আফসোস করতে হচ্ছে। অনেক বাবার চোখের পানিও পর্যন্ত ফেলতে হচ্ছে। তাদের ব্যপারে কী মেসেজ আশা করি আমরা।

মাওলানা আহমাদ আলী: প্রথমে আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া যে আমি আল্লাহর কাছে যা চেয়েছি তাই পেয়েছি। এর জন্য আমি যেটা করেছি আমি খুব বেশি বেশি আল্লাহর দরবারে আমার শত্রুদের সন্তানের জন্য অনেক দোয়া করেছি যাতে ফেরেশতারা আমার সন্তানের জন্য দোয়া করে।

এখানে দোয়া আর চেষ্টার উপর আর কিছুই নেই। যাকারিয়া রহ. এর পিতা ইয়াহইয়া রহ. প্রতিদিন দুই রাকাত নামাজ সন্তানের জন্য পড়তেন। আমরা পড়ি কখনো। পড়ি না। কিন্তু সবাই চায় আমার সন্তান মানুষে মত মানুষ হোক।

হুমায়ুন আইয়ুব: আপনার সন্তানকে আপনি কেমন করে গড়ে তুলতে চান। কী বানাতে চান?

মাওলানা আহমাদ আলী: মুহাম্মাদ যখন ছোট ছিলো, রাস্তার পাশে গরিবদের দেখে বলতো আমি বড় হয়ে ওদের বলবো খালি গায়ে থাকতে হয় না। এছাড়া সে তার আম্মুকে বলতো আমি বড় হয়ে পৃথিবীকে সাজাবো। তার আম্মু আমাকে বলতো শুনছেন আপনার ছেলে কী বলে।

আমি বলতাম দেখ আল্লাহর রহমতে আমি ছয় মহাদেশ সফর করে লাখো লাখো মানুষের সাথে পরিচিত হয়েছি আর তোমার ছেলে সারা পৃথিবী সাজানোর কথা বলবে এটাই স্বাভাবিক।

আল্লাহ চাহে তো সে করে দেখাতে পারবে। আর সারা পৃথিবী সাজাতে হলে সর্ব প্রথম মানুষের মত মানুষ হওয়া চাই। তাই আমি তাকে মানুষের মত মানুষ বানাতে চাই। আর শুধু মানুষ হলেই হয় না সাথে শিক্ষারও প্রয়োজন হয়। আলহামদুলিল্লাহ সেটাও চেষ্টা করছি।

হিফজ শেষ করলো সাথে ২০১৮ সালের শেষে আমরা তাকে পিএসসিও দেয়াবো। সেই জন্য আপনাদের কাছে খাছ করে দোয়াও চাই। আমি ও তার আম্মু ছোটবেলা থেকেই তাকে শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করেছি। আর আমি তার শিক্ষার জন্য অনেক উপকরণ জমা করার চেষ্টা করেছি। মাদরাসায় ছেলেরা দেয়াল পত্রিকার বের করে। আর্ট  থাকে তাতে। আমি আমার ছেলেকে আর্ট শিখাতে একজন আলেম আর্টিস্ট মাওলানা আব্দুর রহমানকে রেখেছি। সে চারুকলায় থার্ড  ইয়ারে পড়ছে। অসম্ভব দক্ষতায় সে এগিয়ে যাচ্ছে সে। তার পরিবার এ িলাইনে তাকে সাপোর্ট করে নি। আমি তাকে সাপোর্ট করেছি। এখন সে চলমান দৃশ্য ধারণ করতে সক্ষম। অসম্ভব ভালো করায় পরিবারও এখন তাকে নিয়ে গর্ব করে। মাওলানা আবদুর রহমান মুহাম্মাদকে আর্ট শিখায়।

এখন আলহামদুলিল্লাহ মুহাম্মাদ বাংলায় অর্থ বললে তার আরবি কুরআনের আয়াতও বলতে পারে। সে অনেক বইও পড়ে। আমরা বাসায় বইয়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে থাকি সবচেয়ে বেশি। আমার গ্রন্থাগারের অনেক বইয়েই তার পড়া।

হুমায়ুন আইয়ুব: একজন বাবা হিসেবে বাবা ও সন্তানের মাঝে সম্পর্ক কেমন হওয়া চাই। যখন আপনি তার শিক্ষক তখন এই বিষয়টা কীভাবে দেখবো আমরা?

মাওলানা আহমাদ আলী: এই বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমি বাবা হিসেবে এক রকম আর শিক্ষক হিসেবে শিক্ষই। যখন ক্লাসে যাই তখন আলাদা পরিবেশ লাগবে। তখন আমিও মনে করি আমি তার শিক্ষক আর সেও মনে করে আমি তার শিক্ষক।

আবার ক্লাস শেষে আমাদের আচরণেও ভিন্নতা আসে। আমি বাবা হিসেবে তার সাথে খেলাধূলা করি। তার সাথে গল্প করি। এমনও হয় দুজন গল্প করতে করতে রাত শেষ হয়ে যায়।

এর মাঝে সে তার মনের কথাগুলো বলে আমি নবীদের কাহিনী নানান গল্প শুনাই এভাবে বাবা ও সন্তানের মাঝে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখি। এভাবেই আপনার সন্তান ভালোবাসার মাধ্যমে তার জীবনের একটা গতি পাবে।

হুমায়ুন আইয়ুব: বর্তমান উত্তর আধুনিক যুগে সন্তান ও বাবাদের মাঝে একটা রূঢ় সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এমনকি সন্তান বাবাকে হত্যা করছে। এই জায়গায় আপনাদের সম্পর্কটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?

মাওলানা আহমাদ আলী: দেখুন রাসূল সা. বলেছেন সন্তান হলো তোমার জান্নাতের খুশবু। সন্তানকে যদি মানুষ জান্নাতের খুশবু মনে করে তাহলেই এই সম্পর্কের উন্নতি সম্ভব।

আর বর্তমান মানুষ সন্তানকে ভালোবাসে না। ভালোবাসে অর্থ টাকা পয়সাকে। তাইতো সমাজের এই বিষয়টা এত অবহেলিত। সন্তানদের গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমান সমাজে শিক্ষিতরা, আলেমরা তাদের ছাত্রদের গুরুত্ব দেয় সন্তানকে তার ছাত্র মনে করে না। এই জন্য সন্তান মানুষ হচ্ছে না।

হুমায়ুন আইয়ুব: আজকে আধুনিক ছেলে মেয়েদের বৈবাহিক জীবনও ভেঙ্গে যাচ্ছে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কী?

মাওলানা আহমাদ আলী: উত্তরণের উপায় একটাই, রাসূল সা. জীবনের দিকে আমাদের দেখতে হবে। রাসূলের মত করে বিবিকে ভালোবাসতে হবে। ভালোবাসার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে হবে।

বিবির ক্ষেত্রে তাকে কেমন পেয়েছি সেটা না দেখে কী পেয়েছি সেটা দেখে তাকে মূল্যায়ন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালাই এই বিবির সাথে আপনার জীবনের মিলন ঘটিয়েছে সুতরাং তাকে খুশি করার জন্যই ভালোবাসতে হবে।

তাদের কোনো ধরনের কষ্ট যেনো না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটাতে হবে। পেছনে কে কী করেছে সেটা নিয়ে ঝগড়া না করাও সংসারে শান্তি আনয়নের মাধ্যম।

হুমায়ুন আইয়ুব: আমরা জানি আগামী ৯ তারিখ আপনি আপনার সন্তান মুহাম্মাদের হাফেজ হওয়ার খুশিতে শুকরানা মাহফিল করছেন। এই ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন সম্পর্কে কিছু বলুন।

মাওলানা আহমাদ আলী: আলহামদুলিল্লাহ আমি আকাবিরে আসলাফের অনুসরণ করেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। দাওয়াত করেছি দারুল উলূম দেওবন্দ ভারতের মুহতামিম মুফতি আবুল কাসেম নুমানী দা.বা. কে।

তিনি অত্যন্ত আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমাকে এই আয়োজনের জন্য দোয়াও দিয়েছেন।

মূলত হজরত কাসেম নানুতবী রহ. যখন হাফেজ হয়েছেন তখন তাঁর পিতা অনেক বড় অনুষ্ঠান করেছেন।

কাসেম নানুতবী রহ এর সন্তান কারী তয়্যব সাহেব যখন হাফেজ হন তখন তিনিও অনেক বড় অনুষ্ঠান করেছেন। বলেছেন, আমি হাফেজ হওয়ায় তোমার দাদা বড় অনুষ্ঠান করে আমাকে বলেছেন প্রতিদিন এক পাড়া করে কুরআন তেলোয়াত করতে তার জন্য।

তাই কারী তায়্যব সাহেব মৃত্যু পর্যন্ত দুই পাড়া কুরআন পড়তেন সবসময়। আমি তাদের অনুসরণ করেই এই শুকরানা মাহফিল করার প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়েছি।

আল্লাহ আমাদের সব কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

যেভাবে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ