শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


বইমেলায় আহমাদ মুস্তাফার “দাহকালের গল্প”

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

যিয়াদ বিন সাঈদ: আহমাদ মুস্তফা। তড়তড়ে ও সাবলীল ভঙ্গিতে গদ্যের রিনিঝিনি অভিনব সৃষ্টি করা এক লেখকের নাম। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮ তে তারই হাত ধরে আসছে গল্প সংকলন ‘দাহকালের গল্প’।

১৪৪ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থটিতে রয়েছে প্রায় ত্রিশটি গল্প। প্রতিটি গল্পেই রয়েছে ভিন্ন আমেজ। ভিন্ন ভিন্ন সুর। অন্ধকার যাপিত এ দুর্দশাগ্রস্ত সময়ে মানুষ যখন প্রচণ্ড ঢেউয়ের হিংস্রতায় কালক্ষেপণ করছে, ঠিক তখনই গল্পের সুরে সুরে চিরসত্য এবং বাস্তবতার কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই এলেন যেন এ আহমাদ মুস্তফা।

বইটি হাতে নেবার পরই কাজী যুবাইর মাহমুদের নান্দনিক প্রচ্ছদে পাঠকের হৃদয় পুলক অনুভব করবে। ভেতরের নক্ষত্রগুলো কীভাবে জ্বলজ্বল করছে, তা দেখতে ইচ্ছে করবে। মনে চাইবে, একটু ছুঁয়ে দেখতে। এরপর পৃষ্ঠা ওল্টালেই আসতে থাকবে ভিন্ন ভিন্ন প্লটে গল্পের স্রোতধারা। একেকটি বইছে একেকদিকে। অকূল দরিয়ায়।

লেখক আহমাদ মুস্তফা ‘দাহকালের গল্প’ লিখেছেন নিশ্চিত পাঠকের মনকে বিচূর্ণ করে দিতে। ভেঙে দিতে হৃদয়ের সমস্থ অস্থিকোষ। আমি যখন ‘দাহকালের গল্প’ পড়ছিলাম, প্রতিটি গল্পেই আমি প্রচণ্ড কষ্ট অনুভব করেছি। কিন্তু এত এত কষ্টের ভেতরেও ছিল তীব্র সুখ। সুখের দরিয়া।

একজন পিতা সন্তানকে পৃথিবীর সমস্ত অনুরাগ আর প্রেম দিয়েই লালন করেন। তিনি নিজের চাইতেও বেশী ভাবেন সন্তানের আরামের কথা। কিন্তু বাস্তবতা তো কারো কারো ক্ষেত্রে চরম নিষ্ঠুর। কর্মজীবনে হয়তো এমন হয়ে যায় কারো কারো বেলায়, বাবাকে ভুলে গিয়ে নিজের আয়েশের কথাই তাকে বেশী ভাবতে হয়। আহমদ মুস্তফা ‘আটপৌরে’ নামক গল্পটিতে সামাজিক কিংবা পারিবারিক ব্যধির এমনই এক দৃশ্য তুলে ধরেছেন।

এরপর আসে ‘নিষিদ্ধ গোলাপ’। গল্পটিতে অন্যরকম এক নতুনত্ব আছে। যেনবা অনাগত ভবিষ্যতে এমনই এক আশঙ্কার কথা আহমদ মুস্তফা কে ভাবিয়ে তুলেছে। এর ভেতরেও আছে চাপা চাপা কষ্ট। গভীর আবেগ। পৃষ্ঠা উল্টিয়ে যখন চোখ পড়লো, ‘বিষের নীলে শোকের এধার’।

আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম। গল্পটা বানভাসিদের। সদ্য পেরিয়ে আসা দুর্দশার এক চিত্র আমাদের কাছে স্পষ্ট হয় এ গল্পের ভেতর। বন্যা থাকাকালীন যে কষ্ট আমাদের অনুভব হয়েছিলো, তারই এক অংশ এ গল্পটি। মানুষের জীবন যখন বিপন্ন প্রায়, তখন মানুষ কী পরিমাণ পর্যুদস্ত হতে পারে এবং ধ্বংসের মুখোমুখি হয়ে একজন স্বামীহারা বিধবাকে কতটুকু যাতনা সইতে হয় তার অনন্য এক নযীর দেখিয়ে আহমদ মুস্তফা আমাদের মনকে বারেবারে ভেঙে দিতে পেরেছেন। হয়তো তার লেখার অনন্যশৈলীর এই হচ্ছে প্রধান স্বার্থকতা।

ত্রিশটি গল্পকে হয়তো আলাদা করে আলোচনা করবার মত পদ্ধতি নেই। কিন্তু স্পষ্ট স্বরে বলে দেয়া যেতে পারে লেখক আহমদ মুস্তফা ‘দাহকালের গল্প’র প্রত্যেকটি গল্প পাঠকের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারবে অনায়াসে।

সবশেষে ‘দাহকালের গল্প’র আরও একটি দহনের গল্প বলে দিয়ে যাই। দীর্ঘকায় এ বইটি তে কষ্ট এবং যাতনা সয়ে সয়ে পাঠক ক্লান্ত হয়ে গেলেও শেষে এসে আবার ফিরে পাবেন পুরোনো উদ্যম। যেখানে আছে প্রেম। প্রীতির এক মেলবন্ধন। তারও পড়ে আছে সংগ্রাম। আছে ১৯৭১।

নয়মাস যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনা বাংলাদেশের এ স্বাধীনতা কচুরিপানার মত ভেসে ভেসে আসেনি। এসেছে রক্তগঙ্গায় হাবুডুবু খেতে। এসেছে প্রচণ্ড ত্যাগ-তিতিক্ষার পর। আহমদ মুস্তফা এমনই এক ত্যাগের গল্প বলে গিয়েছেন একদম শেষে। চুপিসারে। যুদ্ধ করতে গিয়ে স্বজন এবং ভিটেবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে দরদ উতলে পড়া কন্ঠে সবকিছু হারাবার শোকের যে গল্প আছে, তা আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত গিলেছি। হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে চেয়েছি। বিড়বিড় করে গেয়েছি স্বাধীনতার জয়গান।

পাঠকের কাছে নরম এবং কোমল সুরে একটি আবদার রেখে আজকের আলাপ এখানেই শেষ করি। বইটি সংগ্রহ করুন। আপনি ঠকে যাবেননা। সত্যিই জিতে যাবেন।

বই: দাহকালের গল্প । লেখক: আহমাদ মুস্তফা
প্রকাশক: পরিবার পাবলিকেশন্স। প্রচ্ছদ: কাজী যুবাইর মাহমুদ
মুদ্রিত মূল্য: ১৩৫৳। পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৪৪

ঘরে বসে রকমারিতে কিনুন যে কোনো বই


সম্পর্কিত খবর