বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


ইশা ছাত্র আন্দোলন কী সত্যিই দৃশ্যমান হতে পারবে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

পলাশ রহমান
ইতালি থেকে

কদিন আগে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকার বায়তুল মোকাররমে তারা সম্মেলন করেছে। প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।

আমি ওই সম্মেলনের কিছু অংশ লাইভ দেখেছি। কেউ একজন ফেসবুকে লাইভ দেখাচ্ছিল। সেই সুযোগটা গ্রহণ করেছিলাম। যদিও সবটা দেখা সম্ভব হয়নি, যাদের বক্তব্য শুনেছি তাদের মধ্যে ছিলেন, সাবেক দুই ছাত্র নেতা গাজী আতাউর রহমান এবং শেখ ফজলে বারী মাসউদ।

তারা দুজনই বেশ মেধাবী এবং জনপ্রিয় ছাত্র নেতা ছিলেন। তাদের সাংগঠনিক চিন্তা, রাজনৈতিক চিন্তা, দল গোছানের কৌশল এবং পড়াশুনায় যে যতেষ্ঠ গভীরতা আছে তা তাদের কথা শুনলেই বোঝা যায়। গাজী আতাউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকারের চেতনা তুলে ধরেছিলেন, যা ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারেও লেখা ছিল।

ফজলে বারী মাসউদ বলেছিলেন, উত্তর ঢাকার সিটি নির্বাচন স্থগিতের পেছনে সরকারের মদদ আছে। তিনি নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা তুলে ধরেছিলেন। এছাড়া আরো কয়েক জনের বক্তব্য শুনেছিলাম, কিন্তু মনে রাখার মতো কোনো অ্যালিমেন্ট পাইনি। তাদের বক্তব্য গতানুগতিক আওয়াজ মনে হয়েছে।


আমি একটা বিষয় কিছুতেই বুঝতে পারি না, এরা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলে না কেনো? ইসলামের অর্থনীতি কেমন হবে, সমাজনীতি কেমন হবে, স্বরাষ্ট্রনীতি কেমন হবে, পররাষ্ট্রনীতি কেমন হবে, নির্বাচন কেমন হবে এসব নিয়ে কথা বলে না কেনো?

রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিকদের সাথে ইসলামি সরকারের আচারণ কেমন হবে, মানুষের অধিকার কীভাবে সংরক্ষিত হবে, শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন হবে, মুসলিম এবং অমুসলিম শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় কোনো পার্থক্য হবে কিনা, সংসদ কেমন হবে, মন্ত্রী পরিষদ কেমন হবে, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দায়িত্ব কীভাবে বণ্টন হবে, শ্রমজীবী মানুষের নিত্য প্রয়োজন কীভাবে মিটবে, দুর্নীতি, জুলুম কীভাবে দমন হবে, মিডিয়া কীভাবে চলবে, নিরাপত্তা আইন কেমন হবে এসব বিষয়ে বক্তৃতা করে না কেনো?

তাদের জনসমাবেশের বক্তব্য আর কর্মী সমাবেশের বক্তব্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। কিছু মুখস্ত কথার মধ্যেই তারা প্রায় সবাই সীমাবদ্ধ থাকেন। কিন্তু এই গণ্ডির বাইরে বের হওয়া দরকার। সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তর নিয়ে তাদের নিজস্ব মনোভাব, চিন্তা. কমেন্ট এবং ইসলামের ফয়সালা মানুষ জানতে চায়, এটা তাদের বুঝতে হবে। এর জন্য দক্ষ মানুষ তৈরি করতে হবে। অন্যদের সাথে টিকে থাকার মতো দক্ষ রাজনীতিক তৈরি করতে হবে।

যেমন অল্প কদিন আগে ফেনীর একজন সাবেক ছাত্র নেতা, বর্তমানে প্রবাসী কমরুল হাসানের বক্তব্য ফেসবুকে শুনেছি। তিনি মাত্র ১০ মিটিনের বক্তব্য শুরু করেন কুরানের আয়াত দিয়ে, শেষও করেন কুরানের আয়াত বলে। মাঝখানে মাত্র কয়েক মিনিটে তিনি ইসলামি আন্দোলনের দক্ষকর্মী বাহিনী গঠনের জন্য ঘোষিত ১০ দফা তুলে ধরেন বেশ চমৎকারভাবে। অল্প ক'মিনিটে বেশ গোছালো ব্যাখ্যাও তুলে ধরেন, যা একজন মানুষকে ইসলামি আন্দোলন সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে। আগ্রহী করে তুলবে। এসব বিষয়ে তাদের একটু মনোযোগী হওয়া দরকার।


ছাত্র আন্দোলনের সম্মেলনে সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম সংগঠনের নতুন সভাপতি শেখ ফজলুল করীম মারুফ এবং সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল ইসলামের নাম ঘোষণা করেন। এদের কারো সাথে আমার ব্যক্তিগত আলাপ নেই।

তবে আওয়ার ইসরামে প্রকাশিত আমার একটা লেখার সূত্র ধরে ফজলুল করিম মারুফ লম্বা একটা চিঠি লিখেছিলেন। এফবি ইনবক্সে লেখা ওই চিঠিতে তিনি আমার প্রতি বেশ হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন।

ছাত্র আন্দোলনের নতুন সভাপতি হিসেবে তার নাম ঘোষণা হওয়ার পর একটু আগ্রহ বোধ করলাম। তার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করলাম। এর মধ্যে আওয়ার ইসলামে তার একটা দীর্ঘ সাক্ষাতকারও পেয়ে গেলাম। সব মিলিয়ে তাকে বেশ মেধাবী মানুষ মনে হয়েছে।

ইসলামী যিন্দেগী: সবার জন্য প্রয়োজনীয় একটি অ্যাপ

তিনি বলেছেন, এখন থেকে ছাত্র আন্দোলন দেশের সব ক্যাম্পাসে দৃশ্যমান হবে। আমি বিশ্বাস করতে চাই তার এই কথার পেছনে দীর্ঘ কোনো পরিকল্পনা আছে। কারণ যদ্দুর জেনেছি তিনি সংগঠনের একদম প্রাথমিক পর্যায় থেকে উঠে এসেছেন। বিভিন্ন স্তরের দায়িত্ব পালন করেছেন। নেতাকর্মীদের সাথে তার রসায়ন ভালো।

তিনি একদম শেষ মাথার কর্মী সমর্থকেরও খোঁজ রাখার চেষ্টা করেন। মাদরাসা থেকে শুরু করে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। সুতরাং তার চিন্তা করার ধরণ, কথা বলার ঢং, সংগঠন ভাবনা একটু ব্যতিক্রম হবে এটাই স্বাভাবিক। শুভান্যুধায়ীদের প্রত্যাশাও তাই।


ছাত্র আন্দোলনের একটা অসাধারণ দিক হলো এই সংগঠনটি একদম গোড়া থেকেই সব সময় মেধাবী নেতৃত্ব পেয়েছে। কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদকরা বরাবরই মেধাবী ছিলেন। তারা বিভিন্নভাবে সংগঠনকে সামনে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পরবর্তিতে তাদের অনেকেই ঝরে পড়েছেন। বড় সংগঠন তাদের সবাইকে ধরে রাখতে পারেনি। তাদের জন্য আনুকুল্য সৃষ্টি করতে পারেনি।

যারা জাগতিক অনেক কিছু উপেক্ষা করে সংগঠনের সাথে লেগে আছেন, লেগে থেকেছেন তাদের সবাইকে যোগ্য মূল্যায়ন করা হয়নি, করা হয় না। এর কারণ হতে পারে তাদের প্রায় সবাই মেধাবী, ছাত্র সংগঠন থেকে উঠে এসেছেন, দেশবিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছেন, তারা নিজেদের চিন্তা চেতনার সাথে অন্যদের চিন্তা চেতনার ব্যালান্স করতে পারেন নি, পারছেন না।

ইসলামি আন্দোলনের একজন কেন্দ্রীয় নেতার ভাষায় 'নাড়া-কুডা'দের সাথে খাপ খাওয়ানো সত্যিই সহজ বিষয় নয়। তার পরেও সময়ের দাবি বুঝতে হবে। বড় সংগঠন যতো তাড়াতাড়ি এসব বাস্তবতা বুঝবে ততই মঙ্গল তরান্বিত হবে।


মেধাবী ছাত্র নেতা হিসাবে শেখ ফজলুল করীম মারুফের পরিচিতি বেশ পুরনো। এখন তার মেধা প্রকাশের সঠিক সময়। তিনি তার মেধা এবং যোগ্যতা দিয়ে অনেক প্রকূলতা, সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেন শুভান্যুধায়ীরা।

তিনি নিশ্চই বড় কোনো পরিকল্পনা থেকে বলেছেন, এখন থেকে ছাত্র আন্দোলন দেশের সব ক্যাম্পাসে দৃশ্যমান হবে। শুভান্যুধায়ীরা তার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে চায়, সফলতা প্রত্যাশা করে।

তবে অনেক কিছুর আগে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একদল সত্যিকারের যোগ্য কর্মীবাহিনী গড়ে তোলার প্রতি তার এবং তাদের মনোযোগ বেশি দেয়া দরকার বলে মনে করি। তাছাড়া বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মৌলিক ১০টি ত্রুটি ও তার সমাধান, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ১০টি অধিকার এবং তা বাস্তবায়নের কৌশল ও শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গড়তে ১০টি পরিকল্পনা নির্ধারণ করে সুনির্দিষ্ট ভাবে ছাত্র সমাজের কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন।

দেশের মানুষ এবং সচেতন শিক্ষার্থীরা যেনো বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়, দাড়ি টুপিওয়ালারা শুধু ওয়াজ নসিহতের জন্যই যোগ্য নয়, দেশ এবং সমাজ গঠনের জন্যও তারা মৌলিক ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

লেখক: প্রডিউসার, রেডিও বেইস ইতালি

‘এখন থেকে দেশের সব ক্যাম্পাসে দৃশ্যমান রাজনীতিতে যাওয়ার ইচ্ছে আছে’


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ