শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


‘রুজুর পর পুনরায় ভুল করে বসেন মাওলানা সাদ’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতাউর রহমান খসরু : আজ ৩১ জানুয়ারি দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সাদ কান্ধলভির ব্যাপারে নতুন ঘোষণা দিয়েছে।  ঘোষণায় দারুল উলুম দেওবন্দ তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার ঘোষণা দিয়েছে।

দারুল উলুম দেওবন্দের ঘোষণায় বলা হয়েছে, হজরত মুসা আ. এর ঘটনার ব্যাপারে মাওলানা মুহাম্মদ সাদ এর রুজু ঘোষণার পর বিগত ক‘দিন ধরে দেশ-বিদেশের অনেকেই দারুল উলুম দেওবন্দের অবস্থান জানতে নিয়মিত প্রশ্ন করে করে যাচ্ছেন।

যার প্রেক্ষিতে এ কথা স্পষ্ট করা প্রয়োজন যে, শুধু মুসা আ. ঘটনার ব্যাপারে মাওলানা সাদ-এর রুজুনামা  আশ্বস্ত হওয়ার মতো। কিন্তু দারুল উলুম দেওবন্দের [পূর্ব ঘোষিত] অবস্থানে মাওলানার যেই অাদর্শিক গুমরাহির ওপর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল, তা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়া সম্ভব নয়।

কারণ, একাধিকবার রুজু করার পর তাৎক্ষণিকভাবে মাওলানা সাদ এমন বয়ান করেন যাতে আগের মতই ইজতিহাদসুলভ ভঙ্গি, ভুল দলিল উপস্থাপন ও দাওয়াত সম্পর্কে তার নিজস্ব চিন্তাধারার ওপর কুরআন-সুন্নাহর ভুল প্রয়োগ দেখা গেছে।

যার কারণে শুধু দারুল উলূম দেওবন্দ সংশ্লিষ্ট উলামায়ে কেরামই নন; অন্যান্য হকপন্থী আলেমগণও মাওলানার সামষ্টিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে চরম অনাস্থা প্রকাশ করেছে।

আমরা মনে করি, আকাবিরদের চিন্তা ও আদর্শ থেকে সামান্য বিচ্যূতিও তীব্র ক্ষতির কারণ।  মাওলানাকে অবশ্যই নিজ বয়ানে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।  পূর্বসূরীদের পথ এড়িয়ে শরিয়তের ভাষ্য থেকে নিজস্ব (মতমতো) ইজতিহাদের এই ধারাবাহিকতা বন্ধ করতে হবে।  কেননা মাওলানার এই মূলচ্যূত ইজতিহাদ দেখে আমাদের মনে হচ্ছে, আল্লাহ না করুন! তিনি এমন একটি দলের সৃষ্টি করছেন,  যা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ; বিশেষত আমাদের পুণ্যাত্মা পূর্বসূরীদের মতাদর্শ বিরোধী হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে আকাবির-আসলাফের পথের ওপর অবিচল রাখুন। আমিন।

যারা দারুল উলূম দেওবন্দের কাছে বারবার শরণাপন্ন হচ্ছেন, তাদের পুনরায় বলা হচ্ছে তাবলিগ জামাতের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের সঙ্গে দারুল উলূমের কোনো সম্পর্ক নেই।

প্রথম দিন থেকেই আমরা সেই ঘোষণা জানিয়ে আসছি।  তারপরও যখনই কারো ভুল চিন্তাধারা ও মতাদর্শ সম্পর্কে দারুল উলূমকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে দারুল উলুম সবসময় উম্মাহকে পথ দেখানোর চেষ্টা করেছে।  এ কাজকে দারুল উলুম নিজের ধর্মীয় ও শরয়ি দায়িত্ব মনে করে।

ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছেন, মুফতি আবুল কাসেম নুমানি ১৩ জুমাদাল উলা ১৪৩৯ হিজরি। মাওলানা আরশাদ মাদানি ও মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরি।

উল্লেখ্য, তাবলিগ জামাতের অন্যতম মুরব্বি ও দিল্লি মারকাজের আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভির নেতৃত্ব ও তার কিছু বক্তব্য নিয়ে তাবলিগের ভেতর ও বাইরে অসন্তোষ চলছে বেশ ক’বছর ধরে।  দারুল উলুম দেওবন্দ ও উলামায়ে কেরাম তার নেতৃত্বকে তাবলিগ জামাতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে এড়িয়ে গেলেও তার বক্তব্যের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে শুরু থেকেই।

বিশেষত হজরত মুসা আ. এর ব্যাপারে তার বক্তব্যের ব্যাপারে জোর আপত্তির কথা জানায় দারুল উলুম দেওবন্দ।  দেওবন্দের আপত্তির প্রেক্ষিতে মাওলানা সাদ একাধিকবার রুজু (বক্তব্য প্রত্যাহার) করার ঘোষণা দেন এবং দেওবন্দের কাছে চিঠি লিখেন।  কিন্তু দারুল উলুম দেওবন্দ তাকে অস্পষ্ট আখ্যা দেয় এবং তাকে প্রকাশ্য ঘোষণা দেয়ার দাবি জানায়।

সেমতে মাওলানা সাদ প্রকাশ্য ঘোষণাও দেন।  কিন্তু রুজু করার সাথে সাথে একই ধরনের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন। ফলে তার রুজুর ব্যাপারে সংশয় তৈরি হয় দারুল উলুমসহ অন্যান্য দীনি প্রতিষ্ঠানের উলামায়ে কেরামের।  দারুল উলুমের নতুন ঘোষণায় সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

অন্যদিকে মাওলানা সাদের বাংলাদেশের টঙ্গী ইজতেমায় অংশগ্রহণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ, দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজ ও গুজরাট সফর করেন।

বাংলাদেশের এ প্রতিনিধি দল নির্বাচন করেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও দেশের শীর্ষ আলেমগণ পরামর্শ করে মাওলানা সাদ এ বছরের ইজতেমায় অংশ নিতে নিষেধ করেন।  তবে তার প্রতিনিধি পাঠানোর কথা বলেন।

কিন্তু উলামায়ে কেরামের মতামত উপেক্ষা করে তিনি বাংলাদেশে এলে উলামায়ে কেরাম ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ বিমানবন্দর ঘেরাও করে তার প্রতিবাদ জানান।

অবশেষে ইজতেমায় অংশগ্রহণ না করে কাকরাইল মসজিদ থেকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এ ঘটনার কয়েক সপ্তাহ না যেতেই দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে নতুন এ ঘোষণা আসলো।

চিল্লায় থাকা অবস্থায় ব্যক্তি মুসাফির নাকি মুকীম?


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ