শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


পুলিশের নতুন আইজিকে অভিনন্দন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন

পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। তিনি এর আগে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অতিরিক্ত আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন। প্রজ্ঞাপন জারি করে বলা হয়েছে, আগামী ৩১ জানুয়ারি হতে এ নিয়োগ কার্যকর হবে। ওইদিন বর্তমান আইজিপি একেএম শহীদুল হক অবসরে যাবেন। তার স্থলাভিষিক্ত হবেন জাবেদ পাটোয়ারি।

২৫ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রের সাধারণ একজন নাগরিক হিসেবে অভিনন্দন জানাচ্ছি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীকে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ পুলিশ শুধু আইন পালন আর অপরাধ প্রতিরোধ বা দমনই নয়, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গত এক দশকে জঙ্গিবাদ দমন এবং নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ পুলিশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। পুলিশের সদস্যরা তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা আর পেশাদারিত্ব দিয়ে অপরাধ মোকাবিলায় প্রতিনিয়ত সৃজনশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন।

তবে এক্ষেত্রে বলতে হয়, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক প্রতিরোধ, জুয়া, বাল্যবিবাহ, নারী ও শিশু নির্যাতন সকল ক্ষেত্রে পুলিশের যে ভূমিকা তার চেয়ে জনগণের ভূমিকা কোনো অংশে কম নয়। যে কোনো অপরাধ নির্মূল করতে হলে পুলিশ ও জনতা মিলে কাজ করতে হবে। তাহলে সমাজে আর কোনো অপরাধ থাকবে না। তাই পুলিশ বাহিনীকে আরও বেশি গণমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

পুলিশকে গণমানুষের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে। জনগণ ও পুলিশের মধ্যে যে দূরত্ব আছে তা দূর করে একটি সেতুবন্ধ তৈরি করতে হবে; যাতে পুলিশ জনমুখী ও সেবামুখী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়। এজন্য কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থাকে আরও সুদৃঢ় ও সুসংহত করতে হবে, যাতে এর মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা দেওয়া যায়।

বছরের শুরুতেই পুলিশ বাহিনীতে একজন নতুন মহাপরিদর্শক নিয়োগ জাতির সামনে নতুন বার্তা তুলে ধরছে বলেই মনে করি। নতুন বছরের শুরুতেই নতুন নির্বাচনের হাওয়া এবং সরকারের পতনের আন্দোলনের ঘোষণায় দেশে আবারও রাজনৈতিক সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এসব সত্ত্বেও আমরা নয়া আইজিপির কাছে একটি গণতান্ত্রিক সমাজের নাগরিক প্রত্যাশা পূরণে শ্রমনিষ্ঠা ও মেধাবী পেশাদারিত্ব প্রত্যাশা করব। একই সাথে শান্তি-শৃংখলা রক্ষা ও যানজট নিরসনের নামে সংবিধানপ্রদত্ত নাগরিক অধিকার হরণে পুলিশের অতি উৎসাহী বাড়াবাড়ির হাত থেকেও জনগণ নিষ্কৃতি পাবে বলে আশা করছি।

অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রদান, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকসহ সামগ্রিক অপরাধ নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য ২০১১ সালে স্বাধীনতা পুরষ্কার লাভ করে বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশ বাহিনীর সম্মান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বৃদ্ধি পেয়েছে।

পারিবারিক ও সামাজিক গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশি নারী পুলিশের জাতিসংঘ মিশনে ভূমিকা, তাদের বীরত্বগাঁথা, ত্যাগ, তিতিক্ষা নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ পুলিশের কার্যক্রমে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ২০১৬ সালের অক্টোবরে চালু করা হয় বিডি পুলিশ হেল্পলাইন নামের একটি মোবাইল অ্যাপলিকেশন। এর মাধ্যমে কোনো অভিযোগ করা হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট থানা থেকে শুরু করে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

১৯৮৯ সালে নামিবিয়ায় বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম জাতিসংঘের শান্তি মিশনের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে কাজ করে। এর পর থেকে যথাক্রমে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা আইভরি কোস্ট, সুদান, দারফুর, লাইবেরিয়া, কসোভো, পূর্ব তিমুর, ডিআর কঙ্গো, অ্যাঙ্গোলা, হাইতিসহ অন্যান্য মিশনে কাজ করে। ২০০৫ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশন আইভরি কোস্টে প্রথম সন্নিবেশিত পুলিশ ইউনিট এফপিইউ কাজ শুরু করে। শান্তিরক্ষী মিশনে সর্বোচ্চ সংখ্যক পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি বাংলাদেশের।

আন্তর্জাতিক মিশনে কাজ করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে বাংলাদেশ পুলিশ। সেই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে অপরাধ দমন করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এই বাহিনীর ভূমিকা অপরিসীম। পুলিশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক- নতুন আইজিপির কাছে এই আমাদের প্রত্যাশা।

আশা করি, নিজের সর্বোচ্চ মেধা, দক্ষতা ও শ্রম দিয়ে পুলিশ বাহিনীকে তিনি আরও ভালো অবস্থানে নিয়ে যাবেন। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নতুন কর্ম পরিকল্পনাও ঠিক করবেন। সবাইকে সঙ্গে নিয়েই তিনি দেশের জনগণের প্রত্যাশিত সেবা নিশ্চিত করবেন। কারণ পুলিশের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক।

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন : কবি, কলাম লেখক ও সাংবাদিক
সহযোগী সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ