শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


বেফাক কাউন্সিল : কাফিয়া জামাতে বোর্ড পরীক্ষাসহ আসছে ৫ পরিবর্তন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতাউর রহমান খসরু

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার ১০তম কাউন্সিল। ঢাকার ফরিদাবাদ মাদরাসায় এ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

ইতোমধ্যে কাউন্সিলের প্রস্তুতি খানিক দূর এগিয়েছে। কাউন্সিলের আগে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের মহাপরিচালক মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী।

১০ম কাউন্সিলে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার ডেলিগেট অংশগ্রহণ করবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভোটপ্রদান করবেন। বেফাকের অন্তর্ভূক্ত মাদরাসার মুহতামিমগণ পদাধিকার বলে বেফাকের কাউন্সিলে ভোটাধিকারের প্রয়োগ করেন।

১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ শিক্ষাবোর্ডের পূর্বের ৯ কাউন্সিলে ৫ জন সভাপতি ও ৩ জন মহাসচিব দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
সভাপতিগণ হলেন, আল্লামা হাজি ইউনুস আহমদ রহ., আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী রহ., আল্লামা নুরুদ্দিন গহরপুরী রহ. ও আল্লামা আহমদ শফী (বর্তমান)।

এ পর্যন্ত যারা মহাসচিবের দায়িত্বপালন করেছেন তারা হলেন, শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ., মাওলানা আতাউর রহমান খান রহ. ও মাওলানা আবদুল জব্বার জাহানাবাদী।

বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা আবদুল কুদ্দুস।

বেফাকে নতুন মাদরাসার অন্তর্ভূক্তি, কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি ও হাইআতুল উলয়ার সঙ্গে কার্যক্রমের সমন্বয় ইত্যাদি কারণে এবারের কাউন্সিল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আর এসব বিষয় সামনে রেখে বেফাকের সংবিধানে বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে বলে আওয়ার ইসলাম বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছে।

এবারের কাউন্সিলের সম্ভাব্য পরিবর্তনগুলোর মধ্যে রয়েছে, কাফিয়া জামাতে বোর্ড পরীক্ষার প্রবর্তন, বোর্ডভূক্ত জামাতে পরীক্ষা না দিলে পরবর্তী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ বন্ধ করা, আমেলা ও শুরার পরিধি বৃদ্ধি করা ইত্যাদি।

বেফাকের মহাপরিচালক জানান, আমেলার পরিধি ৩১ জন থেকে ৫০ জনের অধিক এবং শুরার সদস্য ১১১ জন থেকে ২০০ জন পর্যন্ত বাড়তে পারে। আর ১০ম কাউন্সিলে প্রথমবারের মতো মহিলা মাদরাসা থেকে আমেলা সদস্য নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

No automatic alt text available.

তিনি আরও জানান, কাজের সহজতার জন্য বেফাকের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বসে আমেলা ও শুরার একটি খসড়া প্রস্তুত করতে পারেন। যা কাউন্সিল অনুমোদন করবে।

তবে আল্লামা আহমদ শফী চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকার সম্ভাবনাই বেশি বলে তিনি জানান।

মাওলানা আবদুল কুদ্দুসকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব থেকে পূর্ণ মহাসচিব করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।

কিন্তু একজন মহাসচিব প্রার্থীর মাদরাসায় কাউন্সিল হলে নির্বাচন প্রভাবিত হওয়ার প্রশ্ন অন্য প্রার্থীদের থেকে আসতে পারে কিনা জানতে চাইলে মাওলানা যোবায়ের আহমদ বলেন, না। প্রভাবিত হবে না। কারণ, উলামায়ে কেরামের উপর এতোটুকু আস্থা রাখা যায়। তাছাড়া তিনি কোনো প্রার্থী নন। ভোটারাই ঠিক করবেন তিনি থাকবেন, না অন্য কেউ আসবেন।

তবুও অফিস ছেড়ে মাদরাসা কেনো? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাদরাসায় কাউন্সিল করা বেফাকের ঐতিহ্য বলতে পারেন। ৮ম কাউন্সিল হয়েছিলো জামিয়া শরইয়্যা মালিবাগে এবং ৯ম কাউন্সিল দারুল কুরআন চৌধুরীপাড়া মাদরাসায়।

অফিসে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। আমার শুরা মিটিংয়ের আয়োজন করতেই হিমশিম খাই সেখানে এতো বড় আয়োজন অফিসে কিভাবে করবো?’ বলেন আল্লামা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী।

বেফাকের কার্যক্রমে বড় ধরনের সম্ভাব্য পরিবর্তন হলো কাফিয়া জামাতকে বেফাকভূক্ত করা। অর্থাৎ এখন বেফাকের পরীক্ষা হবে ৭ স্তরের পরিবর্তে ৮ স্তরে। তাকমিলকে মাস্টার্সের মান ধরে জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমের স্তরগুলোর মিল রাখতেই এ সংযুক্তি। আর নতুন সংযুক্ত কাফিয়া ধরা হবে এসএসসি সমমানের।

বেফাকভূক্ত মাদরাসাগুলোতে বর্তমানে ৮ম শ্রেণি স্তরের সাধারণ শিক্ষা রয়েছে। এর পরিধি বাড়িয়ে ১০তম শ্রেণি পর্যন্ত করা হবে বলেও জানান বেফাক মহাপরিচালক।

তবে বেফাক মহাপরিচালক মনে করেন এতে কওমি মাদরাসার মৌলিক শিক্ষাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ, কওমি মাদরাসায় সাধারণ সিলেবাসের বিষয়গুলো যেমন অর্থনীতি, সমাজকল্যাণ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি আগ থেকেই পড়ানো হয়। এখন শুধু ভাষার পরিবর্তন হবে। তাছাড়া বইগুলো বেফাকের প্রণীত। তাই তা অবশ্যই সার্বিক বিষয় মাথায় রেখে প্রণয়ন করা হচ্ছে।

এবারের কাউন্সিলে প্রত্যেক স্তরের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। তখন এক শ্রেণিতে পরীক্ষা না দিলে অন্য স্তরের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। তবে তা কাযকর করতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগতে পারে।

ইজতেমার বয়ান ২য় পর্ব; ১ম দিন বাদ ফজর


সম্পর্কিত খবর