শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় : সভ্যতার প্রাচীনতম বাতিঘর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবরার আবদুল্লাহ
বিশেষ প্রতিবেদক

ইসলাম আধুনিক সভ্যতার জনক।  পৃথিবী আজ জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষ নিয়ে গৌরব করে ইসলামের হাতেই তার সূচনা হয়েছিলো।  তার সাক্ষ্য বহন করছে পৃথিবীর প্রাচীন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

মুসলিম বিশ্বের প্রাচীন যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনও টিকে আছে তার মধ্যে আল আজহার অন্যতম। এটি শুধু মুসলিম বিশ্বের নয়; বরং পৃথিবীরও অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়।


দিগন্ত বিস্তৃত আল আজহারের সবুজ ক্যাম্পাস

মিশরের রাজধানী কায়রোতে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান শিয়া ধর্মাবলম্বী ফাতেমি শাসকগণ। মূলত বাগদাদের সুন্নি মতাদর্শী শাসকের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক বিজয়ের জন্য ৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়।


প্রাচীন আল আজহার

তবে আল আজহারে সূচনা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে হয় নি। শিয়া ইসমাইলি ইমাম ও ফাতেমি খলিফা আল মুয়িজ বিল্লাহ-এর নির্দেশে ফাতেমি সেনাপতি জাওহার কায়রো একটি মসজিদ নির্মাণ করেন ৯৭০ সালে। পরবর্তী সব ফাতেমি খলিফা ও মিসরের শাসকগণ এ মসজিদের সম্প্রসারণ করেন।

Al Azhar, Mosque, Cairo, Egypt, Africa, North Africa
দৃষ্টিনন্দন জামে আল আজহার।  এ মসজিদে এক সাথে ২০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে।

আল আজহার মসজিদকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তিত করা হয় ৯৭৫ সালে। শায়খ সাইয়েদ আল ফারিদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শায়খ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। সূচনাকালে আল আজহারে বিভাগ ছিলো ৫টি। তাহলো, ইসলামি ধর্মতত্ত্ব, আইন, আরবি ভাষা ও সাহিত্য, ইসলামিক জ্যোতির্বিজ্ঞান, ইসলামিক দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা।

খ্রিস্টীয় বারো শতকে সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবি মিসর বিজয় করার পর আল আজহারকে শিয়া প্রভাবমুক্ত করেন। সেই থেকে আজ পযন্ত আল আজহার আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মতাদর্শের অনুসারী।


একটি শিক্ষাভবন

আধুনিক আল আজহারের যাত্রা শুরু হয়েছে ১৯৬১ সালে। মিসরের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদুন নাসের আল আজহারের হাজার বছরের অবকাঠামো ও ঐতিহ্য ভেঙ্গে তাকে একটি সেকুল্যার বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করেন।

তিনি আধুনিক অনেকগুলো বিভাগ ও অনুষদ যুক্ত করেন। যেমন, ব্যবসায় অনুষদ, অর্থনৈতিক অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ ও কৃষি অনুষদ ইত্যাদি।


মিসরের একমাত্র নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসি ও শায়খুল আজহার

জামাল আবদুন নাসেরই সর্বপ্রথম আল আজহারে নারী শিক্ষক ও অনুষদের ডিন নিযুক্ত করেন।

বর্তমানে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদগুলো তিনটি ইউনিটে ভাগ করা হয়েছে। তাহলো, ইসলামিক ও আরবি, বিজ্ঞান ও মানবিক। প্রত্যেক ইউনিটে রয়েছে একাধিক অনুষদ ও বিভাগ। আল আজহারে মোট ৮৭টি অনুষদ রয়েছে। যার ৪০ মেয়েদের জন্য এবং ৪৭টি ছেলেদের জন্য।


ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ

বর্তমানে আল আজহারের ১৫১৫৫ শ্রেণি কক্ষে ৩০ হাজার শিক্ষক পাঠদান করেন। তাদের কাছ থেকে পাঠগ্রহণ করেন ৫ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ২০ ভাগ বিদেশি। বর্তমানে ১০২টি দেশের শিক্ষার্থী আল আজহারে লেখাপড়া করছে।

শিক্ষকসহ আল আজহারের কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের সংখ্যা প্রায় ১৩১০০০ জন।

তবে আল আজহারের অধীনে মিশরের প্রায় ৪ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়। এ হিসেবে আল আজহারের বর্তমান শিক্ষার্থী ২০ লাখ প্রায়।


ঐতিহ্যবাহী পোশাকে শায়খুল আজহার

আল আজহারের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করতে সেখানে রয়েছে ৭ নিজস্ব হাসপাতাল। সর্বশেষ নির্মিত হাসপাতালের আয়তন ১ লাখ ২৪ হাজার স্কয়ার ফিট।

কায়রোর সবচেয়ে বড় বাগানের মালিক আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়। মোট ৩০ হাজার হেক্টর জমির এ বাগানটির দৈর্ঘ্য ১.৫ কিলোমিটার। পাঁচশো বছরের প্রাচীন এ বাগানে রয়েছে ৮০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ।  এ থেকেই ধারণা করা যায় আল আজহারের আয়তন কতো বড়।


আল আজহার পার্ক

আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানকে প্রেসিডেন্ট বলা হয়। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের নাম ড. মুহাম্মদ হুসাইন মাহরাসাভি।


সম্পর্কিত খবর