শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


পৃথিবীর প্রধান ৫ তাবলিগি ইজতেমা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবরার আবদুল্লাহ
বিশেষ প্রতিবেদক

ইজতেমা তাবলিগ জামাতের সাধারণ সভা।  তাবলিগ জামাতের সর্বশ্রেণির কর্মী, সাথী ও দায়িত্বশীলগণ এ সভায় অংশগ্রহণ করেন।  পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই তাবলিগি সাথীদের ইজতেমা বা সাধারণ জমায়েত হয়।  এমনকি মুসলমানের জন্য চরম বিরূপ রাষ্ট্র ইসরাইলেও হয় তাবলিগি ইজতেমা।

অধিকাংশ ইজতেমা দেশীয় পরিমণ্ডলে সীমাবদ্ধ থাকলেও তার কয়েকটি রূপ নেয় আলমি বা বৈশ্বিক ইজতেমায়।  এসব ইজতেমার তারিখ ও সময় বাংলাদেশের ইজতেমা থেকে নির্ধারণ করা হয়।

পৃথিবীর প্রধান পাঁচটি বৈশ্বিক ইজতেমা হলো, বাংলাদেশের টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা, ভারতের ভূপাল ইজতেমা, পাকিস্তানের রায়বন্ড ইজতেমা, জর্ডান ইজতেমা, যুক্তরাজ্য ইজতেমা।

টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা
অন্যান্য ইজতেমার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক বা আলমি শব্দ ব্যবহার করলেও প্রকৃত বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের টঙ্গীতে।  কারণ এখান থেকেই নির্ধারিত হয় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ছোট-বড় সব ইজতেমার তারিখ ও সময়।

বাংলাদেশে ১৯৪৬ সালে সর্বপ্রথম তাবলিগি ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।   বাংলাদেশের প্রথম ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় তাবলিগের মারকাজ কাকরাইল মসজিদে।  এরপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রাম হাজি ক্যাম্পে, ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে, ১৯৬৫ সালে টঙ্গির পাগারে এবং সর্বশেষ ১৯৬৬ সালে টঙ্গির ভবেরপাড়া তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর থেকে এখন পযন্ত টঙ্গী তুরাগ তীরেই  বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।  একাধিকবার সম্প্রসারণের পর বর্তমান ইজতেমার মাঠের আয়তন দাঁড়িয়েছে ১৬০ একর।

বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশের চল্লিশ লক্ষ মুসল্লিসহ পৃথিবীর শতাধিক দেশ থেকে তাবলিগের কর্মী, দায়িত্বশীল ও সাধারণ মুসলিম অংশগ্রহণ করেন।

মানুষের ভিড় বেড়ে যাওয়াই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে ২০১১ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়।  এক সপ্তাহের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত প্রত্যেক পর্বে ৩২ জেলার তাবলিদের মুসল্লিগণ অংশগ্রহণ করেন।

এছাড়াও ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করে থাকেন।

রায়বন্ড ইজতেমা, পাকিস্তান
টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার পর উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তানের রায়বন্ডে।  পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রায়বন্ডে এ ইজতেমা শুরু হয় আজ থেকে ৬৬ বছর পূর্বে।

কথিত আছে ১৯৫২ সালে লাহোরের সাধারণ মুসল্লিদের উদ্যোগ অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরে এ ইজতেমা শুরু হয়।  কিন্তু দিনে দিনে তার আয়তন বৃদ্ধি পেতে থাকে।

বর্তমানে পাকিস্তানের প্রায় ২০ লাখ মুসল্লি এবং বিশ্বের প্রায় ৪০টির বেশি দেশের তাবলিগি সাথীরা এ ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন।

তাবলিগের প্রবীণতম মুরব্বি ও পাকিস্তান তাবলিগের জিম্মাদার হাজি আবদুল ওয়াহাব-এর পাকিস্তানের বৃহৎ ইজতেমা পরিচালিত হয়।  ২০০৭ সাল থেকে তিনিই ইজতেমার প্রধান মুরব্বি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ইজতেমায় বয়ান করেন বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ তাবলিগি মুরব্বিগণ।

প্রথাগত নিয়মে রায়বন্ড ইজতেমা বৃহস্পতিবার বাদ ফজর শুরু হয়ে রবিবার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়।  তাতে অংশ নেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ কয়েক মিলিয়ন সাধারণ মুসল্লি।

ভুপাল ইজতেমা, ভারত
উপমহাদেশের প্রাচীনতম ইজতেমা বলা হয় ভারতের ভুপাল ইজতেমাকে।  ভারতের স্বাধীনতা লাভের বছর ১৯৪৭ সালে এ ইজতেমা শুরু হয়।  তাবলিগের মুরব্বি মাওলানা মিসকিন রহ. মাত্র ৪ জন লোক নিয়ে ইজতেমা শুরু করেন।

মাওলানা মিসকিন রহ. ভুপালের প্রাচীনতম পাহাড়ি শহর ভাদভূঞ্জার চামেলি মসজিদে এ ইজতেমা শুরু করেন।  এরপর  ভুপালের শাকুর খান মসজিদ, জামা মসজিদ ও তাজুল মসজিদে তা স্থানন্তরিত হয়।

২০০৫ সাল পযন্ত তা ভুপালের তাজুল মসজিদেই অনুষ্ঠিত হতো।  কিন্তু মুসল্লিদের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়াই ঘাসিপুরায় স্থানন্তর করা হয়।  ২০০৫ থেকে বর্তমান সময় পযন্ত ভুপাল ইজতেমা ভুপাল শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঘাসিপুরাতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

কালক্রমে ৪ জন থেকে ভুপাল ইজতেমায় এখন প্রায় ১৪ লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন।

সূচনাকাল থেকে ভুপাল ইজতেমা ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয়ে আসলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ভারতের সর্ববৃহৎ ও তাবলিগের তৃতীয় বৃহৎ এ ইজতেমা চলে সপ্তাহের শনি, রবি ও সোমবার।  সোমবার বাদ আসর ইজতেমার আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।  এতে প্রায় ২০ লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

ভারতের মধ্যপ্রদেশে আয়োজিত ইজতেমার বিদ্যুৎ, পানি, নিরাপত্তা ও গাড়ি পার্কিংয়ের সার্বিক ব্যবস্থা করে থাকেন প্রাদেশিক সরকার।

জর্ডান আরব ইজতেমা

আরব বিশ্বে তাবলিগের কাজ দীর্ঘদিন ধরে চললেও ইজতেমার মতো বড় আয়োজন সেখানে খুব বেশি দেখা যায়।  আরব বিশ্বের প্রতিটি দেশে ইজতেমা হলেও আবরদের প্রধান ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় জর্ডানে।

এখনও এক দশক পূর্ণ না করা এ ইজতেমায় বিভিন্ন আরব রাষ্ট্র থেকে লক্ষাধিক মুসল্লি এখানে অংশগ্রহণ করেন।

জর্ডানের রাজধানী আম্মানের রুসাফিয়াতে অবস্থিত জর্ডানের প্রধান মারকাজে আরব বিশ্বের সর্ববৃহৎ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।

মসজিদে মদিনা আল হুজ্জাজ নামে পরিচিত মারকাজে আয়োজিত এ ইজতেমা অন্যান্য ইজতেমার মতোই তিন দিনব্যাপী হয়।

ইউরোপীয় ইজতেমা, লন্ডন

ইউরোপের সর্ববৃহৎ ইজতেমা অনুষ্ঠিত বৃটেনের রাজধানী লন্ডনে।  শুধু লন্ডন শহরে রয়েছে তাবলিগ জামাতের একাধিক মারকাজ।

তিন দিনব্যাপী লন্ডন ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় লন্ডনের কেন্দ্রীয় মারকাজ ডুইসবেরি মারকাজ মসজিদে।

ইউরোপের এ ইজতেমায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েক হাজার মুসল্লি অংশগ্রহণ করে থাকেন।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ