বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


মাওলানা সাদ কান্ধলভি : যেভাবে বেড়ে ওঠা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: বর্তমান তাবলিগ জামাতের অন্যতম মুরব্বি ও দিল্লির নিজামুদ্দিনের যিম্মাদার মাওলানা সাদ কান্ধলভি সময়ের একজন আলোচিত ব্যক্তিত্ব।

সম্প্রতি তাবলিগ জামাতের ইজতেমায় অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ তার আগমন ও ইজতেমায় অংশগ্রহণ না করে তার ফিরে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও বিশ্ব মিডিয়ার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন তিনি।

মানুষ তাকে একজন তাবলিগের মুরব্বি হিসেবে জানলেও তার পারিবারিক ঐতিহ্য, বর্ণাঢ্য শিক্ষা ও কর্মময় জীবন সম্পর্কে বলতে গেলে তেমন কিছুই জানেন না অনেকে।

সাধারণ মানুষের আগ্রহ ও পাঠকের কৌতুহল সামনে রেখে মাওলানা সাদ কান্ধলভির সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রকাশ করা হলো। ইংরেজি ও উর্দু ভাষার বিভিন্ন সূত্র থেকে লেখাটি তৈরি করেছেন আওয়ার ইসলামের বার্তা  সম্পাদক আতাউর রহমান খসরু।

জন্ম ও পরিবার
১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ১৩৮৫ হিজরিতে দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজে জন্মগ্রহণ করেন।
যতোদূর জানা যায়, দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজ তাবলিগের প্রতিষ্ঠা হজরত ইলিয়াস রহ. এর পৈতৃক ভিটায় গড়ে উঠেছে। তার বংশধরগণ এখনও দিল্লি মারকাজে বসবাস করেন।

মাওলানা সাদ কান্ধলভি হজরত ইলিয়াস রহ. এর বংশধর। তার পিতা হজরত মাওলানা হারুন কান্ধলভি রহ. ছিলেন হজরত ইউসুফ রহ. এর একমাত্র ছেলে। আর ইউসুফ রহ. ছিলেন হজরত ইলিয়াস রহ. এর ছেলে।

মাওলানা সাদ কান্ধলভির বংশপরাম্পরা ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. এর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এজন্য তাদেরকে সিদ্দিকিও বলা হয়।

তবে ভারতের উত্তর প্রদেশের কান্ধলা জেলার দিকে সম্পৃক্ত করে তাদেরকে কান্ধলভি বলা হয়। মাওলানা সাদ কান্ধলভির পূর্বপুরুষগণ এ জেলায় বসবাস করতেন। তারা ছিলেন কান্ধলার অন্যতম ধনাঢ্য মুসলিম পরিবার।

হজরত মাওলানা ইলিয়াস রহ. এর পিতা মাওলানা ইসমাইল কান্ধলভি দিল্লির নিজামুদ্দিনে এসে বসবাস শুরু করেন। তার হাতেই অত্র এলাকা আবাদ হয়েছে বলে জানা যায়। সাধারণ মানুষের মাঝে ইসলাম ও ইসলামি শিক্ষা বিস্তারে মাওলানা ইসমাইল কান্ধলভির ভূমিকা অপরিসীম। এজন্য নিজামুদ্দিনে মাওলানা সাদ ও তার পরিবারের প্রভাব অত্যন্ত বেশি।

কান্ধলা থেকে দিল্লিতে বসবাস শুরু করলেও মাওলানা সাদ ও তার পরিবার এখনও কান্ধলার বিপুল পরিমাণ ভূ-সম্পত্তির মালিক।

শিক্ষা ও শৈশব
মাওলানা সাদ কান্ধলভি দিল্লির নিজামুদ্দিনেই বেড়ে উঠেছেন। তার লেখাপড়াও হয়েছে এখানে। বিংশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নদভি রহ. এর কাছে মাওলানা সাদের হাতে-খড়ি হয়। তিনি তাকে মসজিদে নববির রওজাতুম-মিন রিয়াজিল জান্নাতে বসে প্রথম পাঠদান করেন।

নিজামুদ্দিন মারকাজে অবস্থিত কাশিফুল উলুম মাদরাসা তিনি ১৯৮৭ সালে তাকমিল সম্পন্ন করেন। ছাত্রজীবনে তার সার্বিক নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে ছিলেন তার নানা মাওলানা ইজহারুল হাসান রহ.।

তার অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন, মাওলানা ইনামুল হাসান রহ., মাওলানা উবায়দুল্লাহ বলিয়াভি রহ., মাওলানা ইলিয়াস বারাবানকি, মাওলানা ইবরাহিম দেওলা, মাওলানা মুঈন রহ., মাওলানা আহমদ গুদনা রহ., মাওলানা সাব্বির রহ. প্রমুখ।

কর্মময় জীবন
মাওলানা সাদ কান্ধলভি লেখাপড়া শেষ করে নিজামুদ্দিনের কাশিফুল উলুমে শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত সুনানে আবু দাউদ ও হেকায়াতুস সাবাহ-এর পাঠদান করেছেন।  বর্তমানে তিনি কাশিফুল উলুমে সহি বুখারির দরস প্রদান করেন।

এছাড়াও তিনি নিজামুদ্দিন মারকাজের নানা দায়িত্ব পালন শেষে এখন তার আমির হিসেবে তাবলিগের খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছেন।

বিয়ে ও পরিবার
১৯৯০ মাওলানা সাদ কান্ধলভি ভারতের বিখ্যাত দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাজাহিরুল উলুম, সাহরানপুর-এর প্রিন্সিপাল মাওলানা সালমান-এর কন্যা বিয়ে করেন।

দাম্পত্যজীবনে তিনি ৩ ছেলে ও ২ কন্যার পিতা।  তার তিন  ছেলে হলেন, মাওলানা ইউসুফ, মাওলানা সাঈদ ও মাওলানা ইলিয়াছ।  তার বড় দুই ছেলে কাশিফুল উলুম থেকে তাকমিল সম্পন্ন করেছেন এবং ছোট ছেলে তাকমিল সম্পন্ন করে এখনও সাল লাগাচ্ছেন।

আধ্যাত্মিক সাধনা ও খেলাফত লাভ
প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাশাপাশি মাওলানা সাদ কান্ধলভি আধ্যাত্মিক সাধনায়ও আত্মনিয়োগ করেন। তিনি দুজন মহান ব্যক্তিত্বের খেলাফত লাভ করেন। তারা হলেন, সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নদভি রহ. ও মুফতি ইফতিখারুল হাসান কান্ধলভি। তিনি মাত্র ১৯ বছর বয়সে খেলাফত লাভ করেন।

এছাড়াও তিনি মাওলানা ইনামুল হাসান রহ., মাওলানা সাইয়েদ আহমদ খান মক্কি রহ., মাওলানা উবায়দুল্লাহ বলিয়াভি, হাজি আবদুল ওয়াহাব, মুফতি যাইনুল আবিদিন প্রমুখের সান্নিধ্য লাভ করেন।

বৈশ্বিক তাবলিগের নেতৃত্বে যেভাবে
পারিবারিক সূত্রে মাওলানা সাদ কান্ধলভি তাবলিগি কাজের সাথে সম্পৃক্ত। শৈশব থেকেই তিনি তাবলিগের কাজে মেহনত করছেন।

তাবলিগের কাজে তার শ্রম ও নিষ্ঠার কারণেই হজরত ইনামুল হাসান রহ. ১০ সদস্যের শুরা কমিটির অন্তর্ভূক্ত করেন এবং অনেক প্রবীণ ও বিজ্ঞ লোকের উপস্থিতিতে তাকে ৩ জন আমিরে ফায়সালের একজন  মনোনীত করেন।

এইচজে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ