শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


হেদায়েতি বয়ান; মাওলানা আব্দুল মতিন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে আমরা এ ইজতেমায় আসতে পেরেছি। আল্লাহর রাস্তায় আসতে পেরেছি। কেউ যখন আল্লাহর রাস্তায় বের হয়, তখন তার জান, মান, ইজ্জতের দাম আল্লাহর কাছে বেড়ে যায়।

বাড়ি থাকাকালীন একজন মানুষের জানমালের যে দাম, তা থেকে অনেকগুণ বেড়ে যায় আল্লাহর রাস্তায় এলে। হাদিস শরিফে এসেছে, একদিন আল্লাহর রাস্তায় লাগানো, বাড়িতে বসে হাজার দিন ইবাদত করা থেকে উত্তম।

একদিনে যদি হাজার দিন হয়, তাহলে যে চিল্লা লাগায় তার মূল্য কতো? আর যে তিন চিল্লা বা সাল লাগায় তার দাম কতো? আল্লাহর রাস্তায় এক টাকা খরচ করলে সাত লক্ষ টাকা খরচের সাওয়াব। এক রাকাত নামাজে ঊনপঞ্চাশ কোটি রাকাত নামাজের সাওয়াব পাওয়া যায়।

আমরা আল্লাহর রাস্তায় গিয়ে জামাতের ইহতেমাম করবো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তাকবিরে উলার সঙ্গে পড়বো। এমনিভাবে সবসময় এসব বিষয়ে যত্নশীল হবো।

এর পাশাপাশি আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার পর আমরা বেশি বেশি নফল পড়বো, বেশি বেশি তাসবিহ পড়বো। আল্লাহর রাস্তায় বের হলে একটু হবে। কিন্তু এর ফলে আল্লাহ অনেক নেকি দান করবেন। বলা হয়েছে যে আল্লাহার রাস্তায় ঘুমও ইবাদত।

কিন্তু তাবলিগের সাথী ভাইয়েরা তো শুধু ঘুমান না। ঘুমান তো অল্প সময়। বাকি সবই তো দীনের কাজ করেন। গাস্ত করেন, তালিম করেন, জিকির করেন। পাশের ভাইকে একরাম করেন। একটু ভেবে দেখেন, ঘুমালেই যদি নেকি হয়, তাহলে এসব গুরুত্বপূর্ণ আমল করলে কতো নেকি?

এরপর আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার ক্ষেত্রে নিয়তকে সহিহ করতে হবে। অনেকেই এ নিয়তে তাবলিগে সময় লাগাতে আসে, এখানে সময় লাগলে আল্লাহ আমার রোগ দূর করে দিবেন।

কিংবা বাড়িতে বসে আছি, অবসর সময় নষ্ট না করে একটা চিল্লা লাগিয়ে আসি, একটু ভ্রমণও হবে, আবার চিল্লাও লাগানো হবে। আবার অনেকে বিপদ থেকে রক্ষা পেতে চিল্লা লাগাই।

দেখেন ভাই, আপনি যদি এসব নিয়তে আল্লাহর রাস্তায় বের হন, তাহলে আল্লাহ আপনার এসব আশা পূরণ করতেও পারেন, নাও করতে পারেন। কিন্তু আপনি আল্লাহর পক্ষ থেকে বিন্দু পরিমাণও সাওয়াব পাবেন না।

আমরা যে জন্য নামাজ পড়ি, সে জন্যই আল্লাহর পথে বের হতে হবে। অর্থাৎ আল্লাহর রাজি খুশির জন্য। নিয়তে যদি আমাদের সমস্যা থাকে তাহলে কোনও কিছুই আমাদের কাজে আসবে না।

আমরা আল্লাহর রাস্তায় গিয়ে তিনকাজ করবো, ১. দীন শিখবো। ২. দীনের ওপর চলবো, ৩. দীনের মেহনত করবো।

মেহনত না করলে হবে না। শুধু জানলেই হবে না। যেমন আমরা সবাই জানি, নামাজ ফরজ । অনেকেই আদায় করি না। তাই দীন শিখে তার ওপর মেহনত করবো।

দোস্ত, আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে আমরা প্রথমেই ছয় নাম্বার শিখবো। ছয় নাম্বারই পুরো দীন নয়। তবে এই ছয় নাম্বারের একটা আছর আছে।

আগুণের আছর যেমন পোড়ানো, পানির আছর যেমন ভেজানো, তেমন ছয় নাম্বারেরও আছর হলো মানুষকে দীনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া।

ছয় নাম্বার হলো, কালিমা, নামাজ, ইলম ও জিকির, তাসহিহে নিয়ত, দাওয়াত ও তাবলিগ।
আমরা সবাই মুসলমান। সবাই কালেমা পারি । তাহলে কালিমার মেহনত কেন? এর কারণ হলো ভাই, ঈমান শেখার শেষ নেই। মউত পর্যন্ত ইমান শিখলেও শেষ হবে না।

তবে কালিমা শেখার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে, এক. উচ্চারণ শুদ্ধ করা। দুই. অর্থ জানা। তিন. এর বিশ্বাস অন্তরে গাঁথা। প্রত্যেক জামাতের আমিরের দায়িত্ব হলো তার সাথীদের কালিমা শেখানোর ক্ষেত্রে যত্নশীল হওয়া।

কালিমার বিশ্বাস অন্তরে গাঁথা মানে হলো, দুনিয়ার যা কিছু আছে সবকিছু আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। এ সবই মাখলুক। মাখলুক কিছুই করতে পারে না খালেক ছাড়া , খালেক সব করতে পারেন মাখলুক ছাড়া।

কোরআন শরিফে মাত্র পাঁচশ আয়াত হলো করণীয় বিষয়ের আলোচনা। এছাড়া বাকি সব আয়াতে খালেক কে? তার পরিচয় ও তার সৃষ্টির সমাহারের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

সৃষ্টির কোনো ক্ষমতা নেই। আগুন আল্লাহর হুকুম ছাড়া চাইলেই কিছু জ্বালিয়ে দিতে পারে না। হযরত ইবরাহিম আ. কে ৪০ থেকে ৫০ দিন আগুনে ফেলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর হুকুম হয়নি, তাই আগুন তাকে জ্বালাতে পারেনি।

লোহা ইচ্ছে করলেই কাটতে পারে না। হযরত ইসমাইল আ.কে জবাই করার জন্য ধারালো ছুরি দিয়ে ইবরাহিম আ. চেষ্টা করেছেন । কিন্তু বিন্দু পরিমাণও কাটেনি। কেননা সেখানে আল্লাহর হুকুম ছিল না।

তেমনিভাবে পানির ক্ষমতা নেই ভেজানোর । হযরত মুসা আ. যখন নীলনদে নেমে ছিলেন, তখন পানি তাকে ভেজাতে পারেনি। কেননা তাকে ভেজানোর হুকুম দেওয়া হয়নি।

ভাই এভাবে সবকিছুই আল্লাহর আদেশে চলে। তার হুকুম ছাড়া কেউ একচুলও নড়তে পারে না।

দুনিয়ার কিছুই আমাদের হাজত পুরো করতে পারে না। ব্যবসা, চাকরি, দোকান, কিছুই না। হাজত আল্লাহ পুরো করেন।

তার প্রিয় হাবিবের দেখানো তরিকাই নাজাতের তরিকা। কেয়ামতের দিন যার লেবাস আচার আচরণ নবীর সঙ্গে মিলে যাবে তাকে বিনা হিসেবে জান্নাত দেওয়া হবে।

তাই ভাই লেবাস পোশাকের অনেক দাম । সুন্নতি লেবাস পড়তে হবে। যে যার লেবাস ধরে তার ওই ব্যক্তির সঙ্গে হাশর হবে।

আল্লাহর রাস্তায় তিন মেহনত করতে হবে। এক. দাওয়াত । দুই. হালকা বানিয়ে দাওয়াত। তিন. ইমানের ভিখারি হয়ে দাওয়াত।

সাত জমিন সাত আসমান এক পাল্লায় আর কালিমা এক পাল্লায় রাখলে কালিমা ভাড়ি হয়ে যাবে। এরপর নামাজ। নামাজ শিখতে হবে। আর তা হতে হবে নবী ওয়ালা নামাজ।
নামাজের দাওয়াত দিতে হবে।

কেউ নামাজ ছাড়লে কাজা হলেও পড়িয়ে নিবো।এরফলে তার কত বড় উপকার জানেন, তাকে দুই কোটি ৮৮লক্ষ বছরের শাস্তি থেকে বাচিয়ে দিলেন। নামাজের জাহেরি বাতেনি উভয় দিক ঠিক করতে হবে।

জাহিরি দিক হলো, কুরআন নামাজে পড়ার মতো করে শুদ্ধ করা ফরজ।এছাড়া অন্যান্য আহকাম যেমন, আত্তাহিয়াতু, তাসবিহ ঠিক করতে হবে। আর বাতেনি দিক হলো, আমি আল্লাহ কে দেখছি, এই ধ্যানে নামাজ পড়া।

নামাজে তিন জিনিস আমাদের ধ্যানে থাকতে হবে, এখন আমি আল্লাহর সামনে দাড়াচ্ছি। আল্লাহকে আমার সবকিছু শোনাচ্ছি। যা ভাবি সব আল্লাহ দেখছেন।

নামাজের পর দোয়া করবো। শুকরিয়া আদায় করবো। কেননা আল্লাহর দয়ায় তা আমরা আদায় করতে পেরেছি। নামাজ দৌলত । কেউ দিনে পাঁচবার গোসল করলে যেমন তার গায়ে  কোনো ময়লা থাকতে পারে না। তেমনি কেউ দিনে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে তার মনেও কোনো গোনাহ থাকে না।

এরপর হলো ইলম। ইলম ছাড়া নবীর তরিকা জানতে পারবো না। তিনভাবে ইলম শিখবো।
এক. ইলিমের দাওয়াত। তাহতে পারে গাস্তের মাধ্যমে। তালিম যতক্ষন গাস্ত তক্ষণ চলবে।

দুই. মশক্ এর মাধ্যমে। ফাজায়েল আমরা ফাজায়েলে আমল থেকে শিখবো। মাসায়েল, আলেম কিংবা যে পুরাতন সাথীরা আলেমদের থেকে মাসালা শিখেছে, তাদের থেকে শিখবো।

মশক্ হিসেবে কোরআন পড়তে পারি। কোরআনহলো সর্বোত্তম জিকির। এটা দুনিয়া থেকে না শিখে গেলে কী জবাব দেবো?

ভাই চিল্লাতে গিয়ে যদি আলিফ বা শেখা অবস্থায় মারা যাই, তাহলে কেয়ামাতের দিন আল্লাহ আমাদের কুরআন পারনে ওয়ালাদের সঙ্গে উঠাবেন।

তিন. দোয়া করা। যেন আল্লাহ মেহেরবানী করে ইলম দান করেন। এটা একশ ভাগ মেনে চলতে পারলে, আল্লাহ ইলেম দিবেনই । ইলেম শিখতে এসে কেউ যদি মারা যায় সে শহিদ।

এরপর জিকির। এটা আল্লাহর ধ্যান বাড়ানোর জন্য। তিন কাজের মাধ্যমে জিকিরের প্রসার ঘটানো।  এক. জিকিরের দাওয়াত।  দুই. মশক্।  তিন. দোয়ার মশক এর মাধ্যমে ।

এরপর একরামুর মুসলিমীন।এর ক্ষেত্রেও তিনকাজ  এক. সবাইকে মায়ার নজরে দেখা। সে খারাপ হোক আর ভালো। কেননা , কেউ যদি খারাপও হয় তার মর্যাদা আল্লাহর কাছে , সাত আসমান, সাত জমিন থেকে বেশি।

দুই. একরামুল মুসলিমিনের দাওয়াত দেওয়া ।  তিন. সবার মাঝে মায়ামমতা ফিরে আসার জন্য দোয়া করা।

এরপর সহিহ নিয়ত। ভাই, ইমান আমল ইখলাস ছাড়া কবুল হবে না। কেউ ফতোয়া দিতে পারবে না যে কার ইখলাস ঠিক আছে। এটা একমাত্র আল্লাহ জানেন।  এর জন্যও তিন কাজ।

এক. এর দাওয়াত দিতে হবে। দুই. এর মশক্ করতে হবে। তিন. এ বিষয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।

ভাই সহিহ নিয়তে একটা খেজুর আল্লাহর রাস্তায় দান করলে , পাহাড় সমান দানের চেয়েও বেশি সাওয়াব হয় ।

এরপর ভাই, আমাদের নবী শেষ নবী তারপরে আর কোনও নবী আসবে না। তাই নবী চলে যাওয়ার পর আল্লাহর সে নবী ওয়ালা কাজ আমাদেরই করতে হবে। আমরা নবীর নায়েব। এ দীন আমাদের কাছে আমানত। তাই এ আমানতের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।

সাহাবায়ে কেরাম তিন লাইনে তাদের জান মাল লাগিয়েছেন। এক. আল্লাহর কলিমা উচু করার জন্য।  দুই. গরিবদের পিছনে। তিন. নিজ পরিবারের জন্য।

ভাই , আমাদরে জান মাল কোথায় খরচ করেছি বা করবো তা শেখার জন্য আল্লাহর রাস্তায় বের হতে হবে।

ভাই কেউ এ রাস্তায় বের হয়ে কখনও আমির হওয়ার লিপ্সায় বসে থাকবো না। সাহাবায়ে কেরাম তিন জিনিস থেকে দূরে থাকতেন ইমামত, ইমারত , আমানত। তবে যদি কারও কাছে এ দায়িত্ব এসে পরে , তাহলে যথাযথভাবে তা আদায় করতে হবে।

কোনো সাথীকে আলাদা নজরে দেখা যাবে না।সবাইকে সমান নজরে দেখতে হবে। ভাই এছাড়া এপথে গিয়ে সর্বদা আমল আখলাকে থাকতে হবে। এবং সব তালিম, আমল ঠিকভাবে আদায় করতে হবে।

আল্লাহ আমাদের এবিষয়গুলো মেনে চলার তাওফিক দিন। আমিন। অনুলিখনে কাওসার লাবীব।

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ