শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


ঢাকার সমস্যা সমাধানে পাঁচ দফা সুপারিশ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম : মানুষের ভিড় ঠেকাতে ঢাকায় প্রবেশ পথে বাইরে থেকে আসা মানুষের কাছ থেকে উচ্চহারে ফি নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমি মাঠে তিন দিনব্যাপী উন্নয়ন মেলার শেষ দিনে ‘বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ প্রস্তাব দেন তিনি। অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন ফরাসউদ্দিন। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর যে বিশাল সমস্যা এটার সমাধান করা প্রয়োজন। এ জন্য আমি চার-পাঁচটি সুপারিশ করব। খবর ভোরের ডাক’র।

স্কুলের ভর্তিটা কেনো আঞ্চলিক ভিত্তিতে হবে না- প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘সব দেশে হয়, যে জায়গায় বাস করে সেই জায়গার স্কুলে ভর্তি হবে। কোনো স্কুলে যাতায়াত করা ছেলেমেয়েরা বাসে যাবে না? এ দুটো জিনিস করা হলে ট্রাফিক সমস্যার সমাধান হবে। আর যেটা হবে আমাদের কচিপ্রাণ ছেলেমেয়েরা যারা একই স্কুলে পড়বে তাদের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান হবে। এ যে আমরা জঙ্গির বিরুদ্ধে ফাইট করছি এতে এটা শক্তিশালী উপাদান হবে।’ ‘আর কি দরকার-লেফট লেইন মাস্ট টার্ন লেফট, পৃথিবীর সব জায়গায় হয়। এখানে কী হয় যে গাড়ি বামে যাবে তিনি মাঝখানে চলে এসে অন্যদের আটকে দিচ্ছেন। যারা সামনে যাবেন তারা বামে গিয়ে অন্যদের আটকে দিচ্ছেন। লেফট লেইন মাস্ট টার্ন লেফট- এ আইনটি করতে পারলে যানজট সমস্যার একটা বড় সমাধান হয়ে যাবে।’

ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘স্কুল টাইম, অফিস টাইম ফ্ল্যাক্সিব্যাল আওয়ারে করা দরকার, যেটা উন্নত বিশ্বে আছে। কেউ কেউ অফিস শুরু করবেন ৯টায় কেউ কেউ শুরু করবেন ১১টায়। সময়টা ভাগ করা হয়ে যাবে।’ ‘আর কী করবেন- ঢাকা মহানগরীতে প্রবেশ করার জন্য ছয়টি রাস্তা আছে। সব জায়গায় মেশিন-টোল বসান। টোল বসিয়ে বেশ উচ্চহারে প্রবেশ ফি নেয়া যেতে পারে। তাহলে অনেক ভিড় কমে যাবে’ বলেন অর্থনীতিবিদ ফরাসউদ্দিন।

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতে যারা ভূমি দখল করে যারা কর ফাঁকি দেয় তাদের বিরুদ্ধে এমন শাস্তি দেয়া হয় যে বাপতো দূরের কথা দাদার নাম পর্যন্ত ভুলে যায়। আইন প্রয়োগ করতে হবে। আইন প্রচুর আছে।’ ‘বিশেষ করে আইন প্রয়োগ শুরু হতে পারে যারা আমাদের জলাধার দখল করে আছে তাদের বিরুদ্ধে। ঢাকা জেলা প্রশাসনকে আমি দরখাস্ত দিয়ে রাখলাম, তারা যেনো ভূমিকা রাখে। জলাধার যেভাবে দখল হচ্ছে, সেভাবে চললে কী হবে জানি না।’

ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাংলাদেশের একটা বড় সমস্যা উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর বলেন, ‘এখানে ট্যাক্স জিডিপি রেশিও ১০। পৃথিবীতে এটা সর্বনিম্ন। এ রেশিও নেপালে ১৫, ভারতে ২৪। এটাতে কার দোষ জানি না। কারো দোষ দিতে চাই না। বোস্টন কনলাল্টিং গ্রুপ বলেছে, বাংলাদেশে সোয়া কোটি মানুষের মাথাপিছু আয় চার হাজার ডলার। চার হাজার ডলারে হয় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ সোয়া কোটি মানুষের ট্যাক্স দেয়ার কথা।’

তিনি বলেন, ‘মানুষের হাতে টাকা-পয়সা আছে কোটিপতি হবে। কিন্তু ট্যাক্সেসন সিস্টেম, ট্যাক্সের অফিসারদের প্রশিক্ষণ, কর্মপরিবেশ, কেনো তারা কর দেবে- সেটা ভালোভাবে বুঝিয়ে ঐক্যমত সৃষ্টি করে রাজস্ব আদায় করা দরকার। যাতে আমরা ২০২৫ সালে ট্যাক্স জিডিপি রেশিও ২০ করতে পারি। ইনভেস্টমেন্ট জিডিপি ৩৫ ভাগ করতে পারি যাতে আমাদের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১০ ভাগে উন্নীত হয়।’

ভোরের ডাক’র প্রতিবেদনে জানা যায় এইচটি ইমাম তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা স্কুল জোনিং করতে পারিনি। আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ফরিদাবাদের শিক্ষার্থীরা কেনো উত্তরায় যাবে। আরেকটি আমার খুব প্রিয় বিষয় যে, পৃথিবীর সর্বত্র স্কুল বাস আছে। আমাদের দেশে কেনো স্কুল বাস করতে পারবে না। এটা করতে পারলে যানজট কমবে।’ স্কুল বাস প্রচলন ও স্কুল জোনিং করা উচিত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্য গাড়ি কিনে অর্থ প্রদর্শন কমাতে হবে। এদের ওপর বেশি বেশি হারে ট্যাক্স ধার্য করা উচিত।’

ভূমিদস্যুদের অত্যাচারে আমরা নির্যাতিত-মন্তব্য করে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘দখল হওয়া জলাশয় আমাদের উদ্ধার করতে হবে। শুধু জলাশয় নয় সরকারি ভূমি, সরকারি জায়গাগুলো উদ্ধার করতে হবে। শুধু ভূমি দস্যু নয় অন্যান্য দস্যুরও তো অভাব নেই দেশে। এটিও বড় করণীয়।’

সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে চিরাচরিত উপাদানের সঙ্গে আইসিটি যুক্ত হয়েছে আর খুব জোরেশোরে যুক্ত হয়েছে নেতৃত্ব। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের এতো ক্ষমতা যে, স্রোতের বিপরীত দিকে গিয়ে ওই স্রোতেকে তার পক্ষে আনার ক্ষমতা তিনি রাখেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের বিভীষণ, তার নাম বলে আমি আমার মুখটাকে কলঙ্কিত করতে চাই না এবং বড় বড় কিছু প্রতিষ্ঠানের কুমন্ত্রণায় বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুর টাকা নিয়ে গড়িমসি করেছিল। বাংলাদেশ সরকার টাকা দিতেই মানা করে দিয়েছিল।’

ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘এক সময় আমার ছড়া পড়তাম- ওই দেখা যায় তালগাছ, ওই আমাদের গাঁ। এখন বলতে পারব-ওই দেখা যায় পদ্মা সেতু, এই আমাদের সোনার বাংলা। এটা এখন বাস্তবতা, নিজস্ব সম্পদ।’ ঢাকার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক সামসুজ্জামান খান।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ