বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


পাগলা মসজিদের দানবাক্সে কোটি টাকা জমা হওয়ার নেপথ্যে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রকিব মুহাম্মাদ
আওয়ার ইসলাম

কিশোরগঞ্জ শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক থেকে এবার রেকর্ড পরিমাণ অর্থ এসেছে।  এবার ১ কোটি ২৭ লাখ ৩৬ হাজার ৪ শত ৭১ টাকা পাওয়া গেছে।

গত ৬ জানুয়ারি সকালে মসজিদের ৫টি দান বাক্স খোলা হয়।  ৯ ঘণ্টা গণনা শেষে বিকালে এই টাকার হিসাব পাওয়া যায়।  নগদ অর্থ ছাড়াও অনেক স্বর্ণালঙ্কার ও বিদেশি মুদ্রা পাওয়া গেছে। বরাবরের মতো মসজিদ-মাদরাসা কমপ্লেক্সের শিক্ষার্থীগণ অর্থ গণনা করে।

প্রতি চার মাস পর পর মসজিদের দানবাক্স খোলা হয়ে থাকে, প্রতিবারই নগদ মেলে কোটি টাকার ওপরে সাথে থাকে  বিদেশি মুদ্রাসহ স্বর্ণালঙ্কার। এবার ১ কোটি ২৭ লাখ ৩৬ হাজার ৪ শত ৭১ টাকা পাওয়া গেছে।এর আগে গত বছরের ২৬ আগষ্ট প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা পাওয়া গেছে।

Image result for পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জ

২০১৭ সালে যে ক’বার মসজিদের দান বাক্স খোলা হয়েছে, প্রতিবারই মিলেছে কোটি টাকার ওপরে, সঙ্গে মিলেছে প্রচুর স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা। সঙ্গে পাওয়া যায় প্রচুর স্বর্ণ ও রূপার অলঙ্কার; যা এখনও পরিমাপ করা হয়নি। এছাড়াও বেশ কিছু মার্কিন ডলার, সিঙ্গাপুরি ডলার, সৌদি রিয়াল, মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত ও মিয়ানমারের মুদ্রাও পাওয়া যায়। সেগুলো এখনও ভাঙানো (টাকায় বিনিময়) হয়নি।

টাকা গণনার কাজ তদারকি করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর হোসাইন, সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের মো. সাঈবিদ, সিন্দুক খোলা কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আসাদউল্লাহ, সাংবাদিক সাইফুল হক মোল্লা দুলুসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ ও সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ।

তিন তলা মসজিদটির ভেতরে রয়েছে চারটি বড় সিন্দুক বা দানবাক্স। প্রতি শুক্রবার হাজারো মানুষ জুমার নামাজ আদায় করেন এ মসজিদে। তিন তলায়ও স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাইরের রাস্তায় নামাজ পড়তে দেখা যায় অনেককে। সপ্তাহের অন্যান্য দিনও মানুষজন দান খয়রাত করলেও শুক্রবার এর পরিমাণ হয় অনেক বেশি।

এই ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হওয়ার পর দেশজুড়ে আলোচনায় উঠে আসে কিশোরগঞ্জ-এর পাগলা মসজিদ। সকলের মনে প্রশ্নে জাগে কেন এত টাকা জমা হয় পাগলা মসজিদের দানবাক্সে?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয়রা বলেন, এই মসজিদে দান করার পেছনে মানুষের উদ্দেশ্য একটাই যে তাদের  মনবাসনা পূরণ হবে। লোকমুখে শোনা যায়, পাগলা মসজিদে দান করলে মনের সকল আশা পূরণ হয়। এজন্যই, মানুষ ‍দুহাত খুলে দান করে এখানে। প্রতিমাসে মসজিদের আয় প্রায় অর্ধকোটি নগদ টাকা।

news-image

মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আজিমুদ্দিন বিশ্বাস জানান, সব টাকা ব্যাংকে জমা করা হয় এবং পরে ব্যয় করা হয় দুস্থদের সহায়তাসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজে।

তিনি বলেন,  মানুষের দানের অর্থ মসজিদটির উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয়। মসজিদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়। মসজিদটির একটি এতিমখানা রয়েছে, সেই এতিমখানার ছেলেমেয়েদের থাকা, খাওয়া, পোশাকসহ তাদের লেখাপড়ার যাবতীয় খরচ এখান থেকেই দেওয়া হয়।’

তিনি আরও জানান, এছাড়াও বিভিন্ন এলাকার মসজিদের উন্নয়ন ও সংস্কার কাজেও অনুদান দেওয়া হয়। তাছাড়া, মসজিদটির তহবিল থেকে বিভিন্ন দরিদ্র অসহায় লোকদের আর্থিক সহযোগিতা করা, চিকিৎসা সহায়তার পাশাপাশি লেখাপড়া বা বিয়ের সময় আর্থিকভাবে দুর্বলকেও সহযোগিতা করা হয়।

জানা গেছে, মসজিদের সিন্দুক খোলা ও টাকা গণনা করারও একটি উপ-কমিটি রয়েছে। সেই কমিটির সদস্যরা ও পাশের মাদ্রাসার ছাত্ররা মিলে টাকা গণনায় সহযোগিতা করে থাকে। সারাদিন লেগে যায় টাকা গুনতে।

হারুয়া এলাকার আবদুল আলী বলেন, ‘পাগলা মসজিদের প্রতি মানুষের ভক্তি অন্যরকম। কোনও সমস্যা ও সঙ্কটে পড়লেই মানুষ এ মসজিদে মানত করে। নিশ্চয়ই মানুষ এ মসজিদের দান করে শান্তি পায়। নইলে মানুষ এভাবে বিশেষ একটা মসজিদে দান খয়রাত করতো না। শহরে তো মসজিদের অভাব নেই। অন্য কোনও মসজিদে তো লোকজন এভাবে দান করে না।’

কেবল টাকা নয়, এমন বাক্সভর্তি স্বর্ণালংকারও পাওয়া যায় এই মসজিদের দানবক্সেমসজিদটি পরিচালনার জন্য একটি কমিটি রয়েছে। কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক (পদাধিকারবলে) মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস আর সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র মাজহারুল ইসলাম ভুঁইয়া কাঞ্চন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এটি প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো একটি মসজিদ। এ মসজিদে নারীদেরও নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। নারীরা মসজিদের পৃথক স্থানে নামাজ আদায় করেন। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজে প্রচুর লোক সমাগম হয়। সেদিনই দান খয়রাত বেশি করে লোকজন।

জনশ্রুতি রয়েছে, পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে এসে বর্তমান মসজিদের কাছে থামেন। তাকে ঘিরে সেখানে অনেক ভক্তকুল সমবেত হন। ওই পাগলের মৃত্যুর পর তার সমাধির পাশে এই মসজিদটি গড়ে ওঠে।

পরে কালক্রমে এটি পাগলা মসজিদ নামে পরিচিত হয়। কালক্রমে মসজিদটি মুসলমানদের পাশাপাশি অন্য ধর্মাবলম্বীদের কাছেও পবিত্র ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

প্রথমে হয়বতনগর দেওয়ানবাড়ির ওয়াকফকৃত মসজিদের ভূমির পরিমাণ ছিল ১০ শতাংশ। বর্তমানে এর পরিমাণ তিন একর ৮৮ শতাংশ। মসজিদের ব্যয়ে ২০০২ সালে মসজিদের পাশেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসা। পাগলা মসজিদের ইমরাতের নির্মাণশৈলী বেশ চমৎকার।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ