শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুমুখে সাবেক এমপি: প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে হাসপাতালে ভর্তি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

অনলাইন ডেস্ক: দেশ ও জনগণের জন্য জীবনবাজি রেখে রাজনীতির শীর্ষে অবস্থান করেও তিনি অর্থ বিত্তকে প্রাধান্য দেননি। অর্জন করেছেন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর ও মানুষের ভালোবাসা। অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকতে থাকা সেই রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ ইউসুফকে অবশেষে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গতকাল রবিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

যুদ্ধাপরাধী সালাহ উদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে মোহাম্মদ ইউসুফ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন আটদলীয় জোট থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে।

অর্থ-বিত্ত না থাকা অতি সাধারণভাবে জীবনযাপন করা অসাধারণ এই রাজনীতিবিদ দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে ভাইয়ের ভাড়া বাড়িতে পড়েছিলেন। টাকার অভাবে ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতে না পারা মোহাম্মদ ইউসুফ চিকিত্সা করাবেন তাঁর কোনো উপায় ছিল না।

এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে ফেসবুকে আলোচনার ঝড় বইছিল। এর পরও কারো সাড়া পাওয়া যায়নি। এই অবস্থায় বিষয়টি সরকার প্রধান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী গতকাল সন্ধ্যায় গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, 'উনার (মোহাম্মদ ইউসুফ) মতো বড় মাপের একজন নেতা সততা ও ত্যাগের কারণে শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীতে বিরল।

তিনি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা  ও সাবেক সংসদ সদস্য। অথচ অতি সাধারণ জীবন যাপন করেছেন। এ রকম নেতা আমি দেখিনি। আজকে (গতকাল) উনার বাড়িতে গিয়ে তাকে দেখে আমার চোখের জল চলে এসেছে।'

সিভিল সার্জন বলেন, 'আমি গতকাল (শনিবার) রাতে ফেসবুকে বিষয়টি জানার পরই সদ্ধিান্ত নেই আজকে (গতকাল) সকালে উনাকে দেখতে যাব। রাতে আমি তা রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের জানিয়ে রেখেছিলাম।

পরে সকাল পৌনে ৯টায় রাঙ্গুনিয়ায় তাঁর বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিই। সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে গিয়ে সাবেক এই সংসদ সদস্যের ঘরে প্রবেশ করব; সেই মুহূর্তে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাসুকুর রহমান সিকদার সাহেব প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়ে তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন। আমি তখন উনাকে বলেছি, আমি সেখানে রয়েছি।'

আইসিইউ ইনচার্জ সহযোগী অধ্যাপক ডা. হারুনুর রশিদ বলেন, '২ নম্বর শষ্যায় তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি এর আগে একবার স্ট্রোক করেছিলেন। সেপটিসেমিয়ার কারণে হঠাৎ করে তাঁর স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে। সারা শরীরে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়েছে। তঁার অবস্থা আশঙ্কাজনক।'

জানা যায়, মোহাম্মদ ইউসুফের অসহায় অবস্থা নিয়ে গত ৫ জানুয়ারি ফেসবুকে একটি মর্মস্পর্শী লেখা পোস্ট করেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক ছাত্র নেতা হাসান ফেরদেৌস। এরপরই বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়।

বর্তমানে চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদেৌস বলেন, 'রাজনৈতিক কারণে সিপিবির অন্য নেতাদের সঙ্গে মোহাম্মদ ইউসুফ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। এর আগেই তিনি এমপি হয়েছিলেন।

তবে এমপি হয়ে শুল্কমুক্ত কোটায় গাড়ি, গুলশান-বনানীতে প্লট, সরকারি সুযোগ কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যের কমিশন নেননি। সত্-নির্লোভ বলেই হয়তো মৃত্যুপথযাত্রী এই রাজনীতিকের পাশে কেউ নেই। তবে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী উনার চিকিৎসার উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ।'

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভাই আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। ইউসুফ ভাইয়ের সুচিকিৎসা হবে। আমরা দলীয়ভাবে উনার পাশে আছি।'

জানা যায়, ছোট একটি চায়ের দোকানের উপার্জন দিয়ে পরিবারের ব্যয় নির্বাহের পাশাপাশি ১৭ বছর ধরে বড় ভাই মোহাম্মদ ইউসুফের দেখাশোনা করছেন মো. সেকান্দর।

২০০১ সালে মসি্তষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে চলৎশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর থেকে রাঙ্গুনিয়া পৌর সদরের কলেজ রোডে ভাইয়ের বাসায় শয্যাশায়ী হয়ে রয়েছেন। সর্বশেষ সপ্তাহখানেক আগে হাঁটাচলার শক্তি একেবারেই হারিয়ে ফেলেন। একটি দুই তলা ভবনের নিচতলায় একটি তিন কক্ষের ছোট বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন সেকান্দর। ওই বাসার একটি কক্ষ বরাদ্দ ইউসুফের জন্য।

সুত্র: কালেরকন্ঠ

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ