বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
বৃষ্টি প্রার্থনায় জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ায় ‘সালাতুল ইস্তিসকা’  আদায় হাসপাতালে সৌদি বাদশাহ সালমান সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পাঠ্য তালিকার সাথে বেফাকের পাঠ্য তালিকার সম্পর্ক নেই: বেফাক সৈয়দপুরে তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ, ‘হিটস্ট্রোকে’ ১ জনের মৃত্যু স্বর্ণের দাম আরও কমলো, ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ইরান-পাকিস্তানের ঢাবিতে বৃষ্টির জন্য ‘সালাতুল ইসতিস্কা’র অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘বৃষ্টির জন্যে সালাত আদায় করলেই অবশ্যম্ভাবী বৃষ্টি চলে আসবে—বিষয়টা তা নয়’ মালয়েশিয়ার সিটি ইউনিভার্সিটিতে সম্পন্ন হলো বিয়াম'র চ্যাপ্টার কমিটি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত জ্যামাইকার

ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে হাতিরঝিলের ভাসমান মসজিদ!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জুনাইদ শোয়েব
বিশেষ প্রতিবেদক

শেষ রক্ষা হচ্ছে না হাতিরঝিলের আলোচিত ভাসমান মসজিদটির। ১৯৮৯ সালে ওয়াকফকৃত ৬ শতক ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত মসজিদটি খুব শিগগির ভেঙ্গে ফেলা হতে পারে বলে জানা গেছে। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে এ তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।

হাতিরঝিলে বড় মগবাজার মৌজার উত্তর নয়াটোলা মোড়লবাড়ি অংশে বংলা মোটরগামী সড়ক থেকে ঝিলের প্রায় ৫০ ফুট ভেতরে পানির উপর বাশের মাচায় মসজিদটির অবস্থান। দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল উন্নয়ন প্রকল্পে এটিই সর্বশেষ একমাত্র মসজিদ।

সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রয়োজনে ইতিমধ্যে হাতিরঝিল থেকে ভাঙ্গা হয়েছে আরো সাতটি মসজিদ ও মাদরাসা।

এসব মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা হলেও কোনোটারই জায়গা সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা করা হয়নি বলে জানা গেছে।এখন এই মসজিদে বায়তুল মাহফুজ ভাঙ্গা হলে এর জায়গাও সংরক্ষণ হবে না বলেই আশংকা কতৃপক্ষের।

অপরদিকে হাতিরঝিল উন্নয়নে প্রকল্পে সব ধরনের বিনোদন সুবিধার পরিকল্পনা থাকলেও নেই নতুন কোন মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প । অথচ প্রকল্প পরিকল্পনার শুরুতে সবধরনের সুবিধার পাশাপাশি দর্শনার্থীদের ইবাদাতের সুবিধার্থে একটি মসজিদ নির্মাণেরও সিদ্ধান্ত ছিলো।

ইতোমধ্যে পুরো হাতিরঝিল প্রকল্পটি একটি পূর্ণাঙ্গ থানার অনুমোদন পেয়েছে। বায়তুল মাহফুজ মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলা হলে বাংলাদেশে একমাত্র মসজিদ শুন্য থানা হবে এই হাতিরঝিল থানা।

মসজিদ ভাঙ্গার বিষয়ে জানা যায় মুসুল্লীদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় মসজিদের বৈধ জায়গায় কিছুদিন আগে সম্প্রসারণ কাজ শুরু করেছিলো কর্তৃপক্ষ। কাজ চলাকালীন সময়ে এ সম্প্রসারণে সরাসরি বাধা প্রধান করে হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর সদস্যগণ।

মসজিদ সম্প্রসারণ না হওয়ার ফলে জুমাসহ অন্যান্য নামাজে মুসুল্লীদের দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানান মজসিদ কর্তৃপক্ষ।

এদিকে মসজিদ সম্প্রসারণ কাজে বাধা দেয়ার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রকল্প উন্নয়নে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর তত্তাবধানে মসজিদে বায়তুল মাহফুজ সংলগ্ন রাস্তার উল্টো দিকে ৩৬ নং আমবাগান ওয়ার্ডে মেইন রাস্তা থেকে ভেতরে একটি টিন শেড মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে।

শ্রুতি রয়েছে নির্মাণাধীন এ মসজিদেই স্থানান্তর করা হতে পারে মসজিদে বায়তুল মাহফুজ। তবে এলাকাবাসীর দাবি ভাসমান মসজিদ হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নিয়ে নিজের জায়গাতেই থাকুক।

তবে মসজিদ ভেঙ্গে দেয়া বা স্থানান্তর প্রসঙ্গে এখনও পর্যন্ত নোটিশ বা মৌখিক কোনভাবেই কিছু জানানো হয়নি মসজিদ কর্তৃপক্ষকে ।

কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০০৭ সালে হাতিরঝিল উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য মসজিদের জন্য ওয়াকফ সূত্রে পাওয়া চার কাঠা জমি থেকে দুই কাঠা অধিগ্রহণ করেছিলো রাজউক। বাকি দুই কাঠায় মসজিদ ঘর বিদ্যমান থাকায় তা অধিগ্রহণ করতে পারেনি অধিগ্রহণ কর্মকর্তারা।

পরবর্তীতে ২০১১ সালে হাইকোর্ট রায়ে বলা হয়, মসজিদ মহল্লায় সমপরিমাণ ভূমি ও তাতে মসজিদ ভবন নির্মাণ করে পুরনো মসজিদ সরানো যেতে পারে।

কিন্তু হাইকোর্টের এ রায়ের পর দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও এখনো এই মহল্লায় কোন জমির ব্যবস্থা করা হয়নি এবং এদতপ্রসঙ্গে কাগজপত্র মূলে কোনো আলোচনাও হয়নি।

৩৬ নং ওয়ার্ড আমবাগান এলাকায় নির্মিত মসজিদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মসজিদ কর্তৃপক্ষ বলে ওই ওয়ার্ড ৩৬ নং আমবাগান আর এই ওয়ার্ড ৩৫ নাম্বার। হাইকোর্ট রায় অনুযায়ী মসজিদ ভিন্ন এলাকায় নেয়ার অধিকার রাখে না প্রশাসন।

নয়াটোলা এলাকার বাইরে ভিন্ন এলাকায় কোন মসজিদ হলে তা মসজিদে বায়তুল মাহফুজ সংক্রান্ত আলোচনার সুযোগ রাখে না বলেও জানান তারা।

সরেজমিনে বায়তুল মাহফুজ কর্তৃপক্ষের দাবির সত্যতা পাওয়া যায়। দেখা যায় নির্মানাধীন নতুন মসজিদটি বর্তমান মসজিদ মহল্লা থেকে বাইরে ভিন্ন এলাকায়। এর পাশে অন্য একটি মসজিদও চালু অবস্থায় বিদ্যমান।
পাশাপাশি দুই মসজিদের যথার্থতা নিয়ে এলাকাবাসী ও মুসুল্লীদের মাঝেও দেখা গেছে চরম অসন্তোষ।

এলাকাবাসীর প্রশ্ন, বিনোদনের জন্য সৌন্দর্যমণ্ডিত হাতিরঝিলে থিয়েটার স্টেডিয়ামসহ বহুতল পার্কিং স্থাপনা করা গেলে ইবাদতের জন্য মসজিদ রাখা কেন গুরুত্ব পাবে না?

দর্শনার্থী বলছেন, হাতিরঝিলে কোন মসজিদ না থাকায় এমনিতেই ভোগান্তিতে পড়তে হয় এরমধ্যে শেষ মসজিদটিও ভেঙ্গে ফেললে পুরো হাতিরঝিল জুরে বড় ধরনের শূন্যতা সৃষ্টি হবে।

এ শূন্যতা বিবেচনা করে বায়তুল মাহফুজ কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী যৌথভাবে সরকার প্রধান ও রাজউকের কাছে আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে একটি মসজিদ নির্মাণের আবেদন করে আসছে অনেক আগে থেকেই।

এর জন্য ভাসমান শাপলা ফুলের আদলে একটি প্রতীকি ডিজাইনও পেশ করা হয়েছিলো হাতিরঝিল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু এ প্রসঙ্গে কোনো সাড়া মেলেনি।

এ সম্পর্কিত সামগ্রিক বিষয়ে কথা বলতে চাইলে হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক মেজর সাদিকুল ইসলাম মসজিদ সম্পর্কে কথা বলতে রাজি হননি।

এলাকাবাসীর আশঙ্কা কোনোরুপ পূর্ব প্রস্তুতির সুযোগ না দিয়ে আচমকা মসজিদ ভেঙ্গে ফেলতে পারে সেনাবাহিনীর লোকজন। তাই কথা বলতে চাচ্ছেনা তারা।

মসজিদে বায়তুল মাহফুজ এর প্রতিষ্ঠাকালীন ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৯৮৯ সালে জমিদাতা নুর মুহাম্মদ মিয়ার দানকৃত ৬ শতক ভূমিতে বাশের মাচা বানিয়ে মসজিদের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে রেজিস্ট্রি করে ৬ শতক জমি মসজিদের নামে ওয়াকফ করা হয়।

হাতিরঝিলের সৌন্দর্য অনুযায়ী মসজিদ কর্তৃপক্ষ এ ডিজাইনে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ করতে চান

মসজিদটি পানির উপর হওয়ায় একটি সাকো দিয়ে যাতায়াত করতে হতো মুসুল্লীদের। প্রথম দিকে মুসুল্লী সংখ্যা কম থাকলেও বর্তমানে এই মসজিদে প্রায় তিনশ মুসুল্লী একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে।

বহু চড়াই উৎরায় পেরিয়ে মসজিদটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে। হাতিরঝিলের অন্যান্য মসজিদগুলোর কাগজপত্র দুর্বলতার ফলে সেগুলো ভেঙ্গে ফেললেও মসজিদে বায়তুল মাহফুজ এসব মোকাবেলা করে গৌরব ধরে রেখেছিলো আজ অবধি।

কিন্তু বর্তমানে সকল দলিল দস্তাবেজ পাশ কাটিয়ে মসজিদটির অস্তিত্ব এখন চরম হুমকির মুখে। হুমকির মুখ থেকে মসজিদটি রক্ষা করতে এবং সরিয়ে নিলে তা যথাযথ আইন অনুসরণ করে সমাধা করতে আলেমগণের সহযোগিতা কামনা করেন মসজিদ কর্তৃপক্ষ।

‘কয়েন দান করে মসজিদ কমিটিকে বিপদে ফেলবেন না’


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ