শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


থার্টি ফাস্ট নাইট: ঈমান বিধ্বংসী একটি উৎসব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুস্তাকিম আল মুনতাজ

কালের পরিবর্তনে আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ইংরেজী একটি বছর, ২০১৭ সাল। ৩১ শে ডিসেম্বরের ১২.০১ মিনিট থেকে শুরু হবে ১লা জানুয়ারী। নতুন একটি বছর। নতুন একটি সাল ২০১৮।

এই ৩১ ডিসেম্বরের মধ্য রাতে বর্ষবরণের নামে বাঙালী মুসলমানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের যুবক-যুবতী মেতে উঠে বেপর্দা, বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা, আর মাতলামীর এক হারাম আনন্দে।

কিন্তু কোন মুসলমান ঘরের সন্তান একটি বারের জন্য ভেবে দেখেছে কি? আমরা যা করছি তা কি ঠিক? নাকি দুনিয়ার মোহে পড়ে ভোগ বিলাশিতায় মত্ত হয়ে আছি। এটাই কি আমাদের সংস্কৃতি? ইসলাম কি এ শিক্ষাই দিয়েছে? কিন্তু না, ইসলাম আমাদেরকে এই শিক্ষা দেয়নি।

বরং ইসলামের অন্যতম প্রধান শিক্ষা হলো হক্বের উপর দৃঢ় চিত্ত থাকা। কিন্তু এই বেপর্দা, বেহায়াপনা, আর মাতলামী কি হক্বের উপর দৃঢ় চিত্ত থাকার নমুনা? আমাদের কি আদৌ বোধ হবে না? নাকি আজীবন এভাবেই হেলায়- অবহেলায় কাটিয়ে দিবো?

মূলতঃ ১লা জানুয়ারী পালনের ইতিহাস ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত নয়। আর তা পালন করা মুসলমানদের কাজ নয়। বরং তা মুসলমানদের জন্য হারাম। এবং তা পরিহার করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য কর্তব্য।

ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজী নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করেন। সাধারণভাবে প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জমশীদ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সালে এই নওরোজের প্রবর্তন করেছিল এবং এ ধারাবাহিকতা এখনো পারস্য তথা ইরানে নওরোজ ঐতিহ্যগত নববর্ষের জাতীয় উৎসব পালিত হয়।

ইরান হতেই ইহা একটি সাধারণ সংস্কৃতির ধারা বয়ে মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে। মেসোপটেমিয়ায় এই নববর্ষ বা আকিতু শুরু হতো নতুন চাঁদের সঙ্গে। ব্যাবিলনিয়ায় নববর্ষ শুরু হতো মহাবিষুবের দিনে ২০ মার্চ। অ্যাসিরিয়ায় শুরু হতো জলবিষূবের দিনে ২১ সেপ্টেম্বর। মিসর, ফিনিসিয়া ও পারসিকদের নতুন বছর শুরু হতো ২১ সেপ্টেম্বর।

গ্রীকদের নববর্ষ শুরু হতো খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত ২১ ডিসেম্বর। রোমান প্রজাতন্ত্রের পঞ্জিকা অনুযায়ী নববর্ষ শুরু হতো ১ মার্চ এবং খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩-এর পরে ১লা জানুয়ারিতে। ইহুদীদের নববর্ষ বা রোশ হাসানা শুরু হয় তিসরি মাসের প্রথম দিন গোঁড়া ইহুদীদের মতে সেই মাসের দ্বিতীয় দিন।

মোটামুটি ভাবে তিসরি মাস হচ্ছে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর। মধ্যযুগে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে নববর্ষ শুরু হতো ২৫ মার্চ, তারা ধারণা করতো, এদিন দেবদূত গ্যাব্রিয়েল যিশুমাতা মেরির কাছে যিশু খ্রিস্টের জন্মবার্তা জ্ঞাপন করে। অ্যাংলো-স্যাকসন ইংল্যান্ডে নববর্ষের দিন ছিল ২৫ ডিসেম্বর।

পহেলা জানুয়ারি পাকাপোক্তভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর। ধীরে ধীরে শুধু ইউরোপে নয়, বরং সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালন করা হচ্ছে। যা আজ আমাদের কাছে থার্টি ফাস্ট নাইট বা বর্ষবরণ নামে পরিচিত।

সুতরাং, ইতিহাস যাচাই করলে দেখা যায় যে, থার্টি ফাস্ট নাইট বা বর্ষবরণ পালন করা মুসলমানদের কোন উৎসব নয়, বরং এটি বিজাতীয় বিধর্মীদের একটি উৎসব। এতে বুঝা যাচ্ছে, থার্টি ফাস্ট নাইট পালন করার অর্থ হলো বিজাতীয় বিধর্মীদের অনুসরণ, অনুকরণ করা। অথচ ইসলাম হল একটি পরিপূর্ণ দ্বীন।

সুতরাং সকল মুসলমানদের এই সমস্ত বিজাতীয় বিধর্মীদের সংস্কৃতির অনুসরণ থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। আর এজন্যই আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিষ্কারভাবে মুসলিমদের উৎসবকে নির্ধারণ করেছেন, ফলে অন্যদের উৎসব মুসলিমদের সংস্কৃতিতে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই।

হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ (খুশী) রয়েছে। আর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা হল মুসলমাদের ঈদ। (বুখারী ও মুসলিম)

অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুস্মরণ করবে, সে সেই জাতির অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য হবে। (সুনানে আবু দাউদ)

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যথাযথভাবে, এর পূর্বের কিতাবের সত্যায়নকারী ও এর উপর তদারককারীরূপে। সুতরাং আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তুমি তার মাধ্যমে ফয়সালা কর এবং তোমার নিকট যে সত্য এসেছে, তা ত্যাগ করে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। তোমাদের প্রত্যেকের জন্য আমি নির্ধারণ করেছি শরীআত ও স্পষ্ট পন্থা এবং আল্লাহ যদি চাইতেন, তবে তোমাদেরকে এক উম্মত বানাতেন।

কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান। সুতরাং তোমরা ভাল কাজে প্রতিযোগিতা কর। আল্লাহরই দিকে তোমাদের সবার প্রত্যাবর্তনস্থল। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন, যা নিয়ে তোমরা মতবিরোধ করতে। (সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াতঃ ৪৮)

সুতরাং ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে ইংরেজি নববর্ষ সংক্রান্ত যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ এতে
নিম্নলিখিত শ্রেণীর ইসলাম বিরোধী বিষয় রয়েছে।যেমন- (১) শিরকপূর্ণ অনুষ্ঠানাদি, চিন্তাধারা ও সংগীত। (২) নগ্নতা, অশ্লীলতা, ব্যভিচারপূর্ণ অনুষ্ঠান। (৩) গান ও বাদ্যপূর্ণ অনুষ্ঠান। (৪) সময় অপচয়কারী অনর্থক বাজে কথা ও কাজ।

এ অবস্থায় প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব হচ্ছে নিজে এগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকা এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজ থেকে এই প্রথা উচ্ছেদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। মহান আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমীন।

লেখক: সৃজনঘর সাহিত্য ফোরাম মৌলভীবাজার-এর প্রচার সম্পাদক।

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ