শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


মসজিদে কর্ডোভায় ৭শ বছর পর আল্লামা ইকবালের প্রথম আযান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতিক বিন নূর কাসেমী

স্পেনের মসজিদে কর্ডোভা, মুসলমানদের দীর্ঘ সাতশ' বছরের ইতিহাসের স্বাক্ষী৷ ৭৮৪সালে খলীফা আব্দুর রহমানের আমলে তৎকালীন রাজধানী কর্ডোভায় এই ঐতিহাসিক মসজিদটি নির্মিত হয় ৷

মুসলমানগণ এশিয়া থেকে নিয়ে গোটা ইউরোপ ওআফ্রিকা এখানে বসেই শাসন করতেন৷ মসজিদটি শরয়ী আইন ও সালিসের কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা হতো ৷

ইউরোপিয়ানরাএখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে গিয়ে গর্ববোধ করতো ৷স্পেনের মুসলমা নদের আবিষ্কৃত জিনিষ ব্যবহার করে গোটা বিশ্ব উপকৃ তহতো ৷ মুসলমানদের নিয়ম-কানুন অনুযায়ী পুরো দুনিয়া চলতো ৷

মোটকথা, মুসলমানগণ তখন উন্নতির চরম শিখরে পৌছেছিলো। এই মসজিদেই আল্লামা কুরতুবীর তাফসীর চলতো, ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া অন্দুলুসীর দরস হতো, ইবনে হাযাম যাহেরীর ফিকহী প্রবন্ধ পাঠ করা হতো, ইবনে আরাবী তাসাউ ফের সুক্ষ্ম ওজটিল বিষয়াদী বর্ণনা করতেন এবং বাকি ইবনে মাখলাদের মতো ব্যক্তিত্ব এখানে বসেই ‘কালাল্লাহ’ এবং ‘কালার রাসূল সা.’ বলতেন ৷

কিন্তু, ১২৩৬ সালে ক্যাসলের রাজা তৃতীয় ফার্ডিনান্দ ও রাণী ইসাবেলা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা করে স্পেন দখল করে নেয় আর মসজিদটিকে রোমান ক্যাথলিক গির্জায় রুপান্তরিত করে ৷

আজো সেখানে ক্রুশ টানিয়ে রাখা হয়েছে ৷ নামাজ পড়া সম্পূর্ণ নিষেধ ৷এমনকি কেউ যেন রুকুও না করতে পারে, সেজন্য বিভিন্ন স্থানে লোক রাখা হয়েছে ৷

[caption id="" align="alignnone" width="600"] মসজিদে কর্ডোভার ভিতরের দৃশ্য[/caption]

২০১০ সালে এক দল মুসলিম পর্যটক শুধু রুকু করতে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ৷ একজন সত্যিকারওচিন্তাশীল মুসলমান মস জিদে কর্ডোভায় দাড়িয়ে না কেঁদে থাকতে পারে না৷বিশিষ্ট দা'য়ী মাওলানা তারিক জামি ল সাহেব যখন এই মসজিদটি পরিদর্শন করেছিলেন, তখন প্রতিটি দেয়াল ও স্তম্ব দেখে তাঁর চোখে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছিল৷

স্পেন থেকে মুসলমানগণ বিতাড়িত হওয়ার পর দীর্ঘ ৭০০শত বছর পর্যন্ত এখানো কোন আজান ও নামাজ হয়নি ৷ আল্লামা ইকবালের দীর্ঘ দিনের তামান্না ছিলএই মসজিদ দু'রাকাত নামাজ পড়া ৷

১৯৩৩ সালে স্পেন সফরকালে আল্লামা ইকবাল এই মসজিদ পরিদর্শন করেন ৷ মসজিদে নামাজ পড়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও শুধু আল্লামা ইকবালকে মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয় ৷ তবে, প্রবেশের পর ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিতে বলা হয় ৷

মসজিদেপ্রবেশ করেই তিনি উচ্চ আওয়াজে আযান দেন ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আ কবার’ ৷ দীর্ঘ সাতশ' বছর পর এটি ছিলো প্রথম আযান৷ মসজিদের দেয়াল ও স্তমগুলো দীর্ঘকাল পর আযানের ধ্বনীশুনতে পায় ৷ আযানের পর আল্লামা ইকবাল জায়নামাজ বিছিয়ে দু'রাকাত নামাজ আদায় করেন৷

নামাজে এমন এক অবস্থা সৃষ্টি হয় যে, তিনি বেহুশ হয়ে যান ৷ জ্ঞান ফিরার পর তিনি মোনাজাত করেন ৷ মোনাজাতের প্রতিটি বাক্যই কাব্যাকারে বের হচ্ছিল ৷ এই মোনাজাতটিই ‘বালে জিবরীল’ নামে পরিচিত ৷

মোনাজাতে তিনি বলেছিলেন, ہے یہی میری نماز ہے یہی میرا وضوء میرے نواؤوں میں ہے میرے جگر کا لہو صحبت اہل صفا نور وحضور وسرور

আল্লামা ইকবালের কর্ডোভার মসজিদের এই যিয়ারত ইতিহাসে এখনো চির অমর হয়ে আছে এবং থাকবে৷ গুগলে যেখানেই এই মসজিদের কথা আলোচনা করা হয়েছে, সেখানেই আল্লামা ইকবালের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আল্লামা ইকবালের লেখনীতে ইসলামী পুনর্জাগরণ ও ইনকিলাবের আওয়াজ ভেসে ওঠে। তার লেখনী বহু মানুষকে প্রভাবান্বিত করেছে পাকিস্তানের কায়েদে আযম মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ, আরব জাহানের পরিচিত মুখ বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবীদ সাইয়্যেদ আবুল হাসান নদভী তার বিপ্লবী চিন্তাধারায় খুব প্রভাবান্বিত ছিলেন৷

আল্লামা ইকবালের রচিত ‘মুসলিম হে হাম ওয়াতন হ্যায়, সারে জাহাঁ হামারা’ কবিতা দ্বারা তার ইসলামী পুনর্জাগরণ ও বিপ্লবী চিন্তাধারা আন্দাজ করা যায় ৷ আমাদের গর্ব জাগ্রত কবি মুহিব খান কবিতাটিকে চার ভাষায় গেয়ে বিশ্ববাসির কাছে কবিতাটিকে পরিচিত করে দিয়েছেন৷ আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের সেই হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার তৌফিক দিন।

সূত্রঃ কুল্লিয়াতে ইকবাল, ইন্টারনেট উইকিপিডিয়া।

লেখক: শিক্ষার্থী উচ্চতর ইসলামী আইন গবেষণা বিভাগ, ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ এন্ড স্পেশালাইযেশন ইন ইসলামিক সাইন্স, হায়দারাবাদ, ইন্ডিয়া ৷

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ