বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


প্রথম কেবলা মসজিদুল আকসা: কিছু কথা কিছু ইতিহাস

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ড. মেহরান মাহমুদ

প্রথম কেবলা মসজিদুল আকসা: ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ এবং প্রথম কেবলা ‘মসজিদুল আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাস’ সুপ্রাচীন শহর জেরুসালেমে অবস্থিত। মহানবী সা. মক্কার মসজিদুল হারাম, মদিনার মসজিদুন্নববী ও মসজিদুল আকসার উদ্দেশে সফরকে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, যা অন্য কোনো মসজিদ সম্পর্কে করেননি।

এর গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী সা. বলেছেন, ‘ঘরে নামাজ পড়লে এক গুণ, মসজিদে ২৫ গুণ, মসজিদে নববী ও আকসায় ৫০ হাজার গুণ, মসজিদে হারামে এক লাখ গুণ সাওয়াব।’ (ইবনে মাজাহ)।

প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও ষড়যন্ত্র : হজরত ইব্রাহিম আ. কর্তৃক কাবাঘর নির্মাণের ৪০ বছর পর হজরত ইয়াকুব আ. জেরুসালেমে আল-আকসা মসজিদ নির্মাণ করেন। অতঃপর হজরত সুলায়মান আ. জিনদের মাধ্যমে এই পবিত্র মসজিদের পুনর্নির্মাণ করেন। ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে পুরো বায়তুল মুকাদ্দাস এলাকা মুসলমানদের অধীনে আসে।

১০৯৯ সালের ১৫ জুলাই খ্রিষ্টান ক্রুসেডারেরা নামধারী মুসলিম শাসকদের সহায়তায় সমগ্র সিরিয়া ও ফিলিস্তিন দখল করে। এরপর তারা ১০৯৯ সালের ৭ জুন বায়তুল মুকাদ্দাস অবরোধ করে এবং ১৫ জুলাই মসজিদের ভেতর প্রবেশ করে ব্যাপক পরিবর্তন করে একে গির্জায় পরিণত করে।

১১৬৯ সালের ২৩ মার্চ। ফাতেমি খিলাফতের কেন্দ্রীয় খলিফার নির্দেশে সালাহউদ্দিন আইয়ুবি র. গভর্নর ও সেনাপ্রধান হয়ে মিসরে আগমন করেন। এরপর ১১৮৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রক্তয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলিম বীর সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবি র. জেরুসালেম শহর মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন।

অতঃপর ১১৮৭ সালের ২ অক্টোবর শুক্রবার সালাহউদ্দিন আইয়ুবি র. বিজয়ী বেশে বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করেন। বায়তুল মুকাদ্দাস মুক্ত হওয়ার পর সেখানকার মুসলিমরা প্রায় ৯০ বছর পর ক্রুসেডারদের অত্যাচার থেকে রেহাই পেয়েছিল।

মহানবী সা: ও মসজিদুল আকসা : হিজরতের এক বছর আগে ২৭ রজব মিরাজের রাতে মহানবী সা: প্রথমে তারা বায়তুল আকসায় উপনীত হন। বোরাককে বাইরে বেঁধে মহানবী সা. মসজিদে প্রবেশ করেন এবং সেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন।

এ প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীযোগে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাঁকে আমার নিদর্শন দেখাবার জন্য।’ (সূরা বনি ইসরাইল, ১৭:১)। মহানবী সা. মিরাজ শেষে পুনরায় মসজিদুল আকসায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং ইমাম হয়ে নবী-রাসূলদের নিয়ে নামাজ আদায় করেন।

মসজিদুল কিবলাতাইন ও মসজিদুল আকসা : ‘মসজিদে কিবলাতাইন’ ইসলামের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক ঘটনার জ্বলন্ত সাী। হজরত আদম আ. থেকে শুরু করে হজরত ঈসা আ. পর্যন্ত লাধিক নবী-রাসূলের একমাত্র কেবলা ছিল মসজিদুল আকসা।

কিন্তু মহানবী সা. ও তাঁর কিছু সৌভাগ্যবান উম্মতের ভাগ্যে মসজিদুল আকসা ও পৃথিবীর প্রথম ঘর পবিত্র কাবা এই উভয় কিবলার দিকে ফিরে নামাজ আদায়ের বিরল সৌভাগ্য হয়েছিল।

মহানবী সা. মদিনায় হিজরত করার পর প্রায় ১৬ মাস মসজিদুল আকসার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হিজরি দ্বিতীয় সালের শাবান মাসে মতান্তরে রজব মাসের মাঝামাঝি সময়ে মহানবী সা. কিছুসংখ্যক সাহাবায়ে কেরামসহ মদিনার অদূরে মসজিদে বনু সালামায় জোহর মতান্তরে আসর নামাজ আদায় করেন।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাকাতের মাঝামাঝি আল্লাহর নির্দেশে মহানবী সা. ও সাহাবায়ে কেরাম চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের দুই রাকাত কাবা শরিফের দিকে ফিরে আদায় করেছিলেন বিধায় ইসলামের ইতিহাসে মসজিদটি মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলা হিসেবে সুপরিচিত ও সমাদৃত।

আল কুদ্স দিবস : অভিশপ্ত ইহুদিদের হীন ষড়যন্ত্রে মসজিদুল আকসা ও জেরুসালেম নগরীতে মুসলমানদের পদচারণা আজ নিষিদ্ধ।

ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনি ইরানের ইসলামি বিপ্লবের সাফল্যের পর ১৯৭০ সালের আগস্টে পবিত্র রমজানের শেষ শুক্রবারকে বিশ্ব আল কুদ্স দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিশ্ববাসী বিশেষ করে মুসলমানেরা প্রতি বছর এ দিনটি বিশ্ব আল কুদ্স দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন।

শেষ কথা : লর্ড কার্জনের সেই উদ্ধৃত উক্তি ছিলো ‘আমরা মুসলিমদের মেরুদণ্ড খিলাফতকে ধ্বংস করে দিয়েছি, তারা আর দাঁড়াতে পারবে না’। তারা, সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবির কবরে লাথি মেরে বলেছিল, ‘ওঠো সালাহউদ্দিন! তোমরা বায়তুল মুকাদ্দাসকে রক্ষা করো।’

আর আমরা কী করলাম? পেরেছি কি সেই খেলাফতকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে? পেরেছি কি সেই বায়তুল মুকাদ্দাসকে রক্ষা করতে? আজ সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাতিলের মোকাবেলার।

লেখক : গবেষক

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ