শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


মুফতী ওয়াক্কাসের প্রতি জমিয়ত সভাপতির খোলা চিঠি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশে কিছু দিন ধরে মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাস’কে নির্বাহী সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে অস্থিরতার চলছে। গত ৯ ডিসেম্বর দলের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের নির্বাহী সদস্যপদ স্থগিত করা হলে সে অস্থিরতা স্থায়ী রূপ নেয়।

মুফতি ওয়াক্কাসও জমিয়তের বেশ কয়েকজন নেতাকে নিয়ে পাল্টা বহিস্কারের বিবৃতি দেন দলের সিনিয়র ৩ নেতাকে।

জমিয়তে চলমান এ অস্থিরতা নিয়ে গত ৩ ডিসেম্বর সভাপতি আল্লামা আব্দুল মোমিন শায়খে ইমাম বাড়ী’র পক্ষ থেকে মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে লেখা চিঠি লেখেন। আওয়ার ইসলামের হাতে আসা সেই চিঠি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।

মুহতারাম!
মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাস সাহেব

প্রথমে আমার সালাম গ্রহণ করবেন। আশা করি সুস্থ শরীরে ভাল আছেন। আমিও বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত থাকার পরেও ভাল আছি। (আল-হামদুলিল্লাহ)।

অত:পর বহু চিন্তা-ভাবনা করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি হিসাবে আপনাকে একটি চিঠি দেওয়া খুবই জরুরী মনে করছি। দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন এবং অনুমোদিত এই গঠনতন্ত্রের আলোকে আপনার নির্বাহী সভাপতির পদ না থাকাকে কেন্দ্র করে আপনি যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন, তাকে কেন্দ্র করেই আপনার কাছে আমার এই চিঠি।

আমি সভাপতি হিসাবে স্বজ্ঞানে দাবী করছি যে, গঠনতস্ত্র সংশোধন বিধিমতই হয়েছে। এর জন্য ২২-০৪-২০১৪ইং তারিখে মজলিসে আমেলা কর্তৃক যথারীতি একটি গঠনতন্ত্র সংশোধন সাব কমিটি গঠিত হয়েছে।

উক্ত সাব কমিটি কর্তৃক সংশোধিত গঠনতন্ত্র শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দলের ২৮-১১-২০১৭ ইং তারিখের আমেলায় পাঠ করে শুনানো হয়েছে, যেখানে আপনি নিজে উপস্থিত ছিলেন। পাঠ করে শুনিয়েছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী।

আমেলায় উপস্থিত সদস্যগণের নিকট এই গঠনতন্ত্রের কপি সরবরাহ করে কারো কোনো প্রস্তাব থাকলে এক মাসের মধ্যে তা কেন্দ্রে লিখিতভাবে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। সে ভিত্তিতে প্রাপ্ত সংশোধনীসমূহ বিবেচনা করে পুনরায় ১৪-০৫-২০১৬ইং তারিখের মজলিসে আমেলায় আপনার উপস্থিতিতে গঠনতন্ত্র উত্থাপন করা হয় এবং তা মজলিসে আমেলায় অনুমোদন করা হয়।

বিগত ২২ জুলাই, ২০১৭ ইং জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে দলের শুরা ও বার্ষিক কাউন্সিলে পুরো গঠনতন্ত্রটি পাঠ করে শুনানো হয় এবং তা সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।

১. উক্ত বার্ষিক কাউন্সিলে আপনি উপস্থিত থেকে সবার সামনে আপনার বক্তব্য দিতে পারতেন। কিন্তু আপনি তা করেননি।

২. ১৪-০৫-২০১৬ ইং তারিখের আমেলায় পাশ হওয়ার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত আপনি একজন নির্বাহী সভাপতি হিসাবে আমার কাছে কিংবা মহাসচিবের কাছে লিখিতভাবে কিছুই জানাননি। পরবর্তীতে আগামী এন্তেখাবী কাউন্সিল পর্যন্ত আপনি নির্বাহী সভাপতি পদে বহাল থাকবেন কিনা তারও নিস্পত্তি হয় গত ১৪-১০-২০১৭ ইং তারিখে পল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আমেলার বৈঠকে।

৩. উক্ত আমেলায় যেহেতু আপনার নির্বাহী সভাপতির পদ বহাল থাকবে কিনা তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে, তাই অন্তত: সেদিনের আমেলায় আমার অনুপস্থিতিতে আপনি সভাপতিত্ব করতে পারেন না মর্মে অধিকাংশ সদস্য মতামত জ্ঞাপন করলে অন্যতম সহসভাপতি মাওলানা জিয়াউদ্দীন সাহেব সভাপতিত্ব করেন। আপনি এ বিষয়টিও সহজভাবে মেনে নিতে না পেরে মজলিসের শুরুতেই আমেলার উক্ত মিটিং থেকে বিধি বহির্ভূতভাবে উঠে চলে যান।

৪. আপনি গঠনতন্ত্র সংশোধনীসহ দলের অভ্যন্তরীন বিষয়সমূহ যথাযথ ফোরামে আলোচনা না করে সংগঠনের ফোরামের বাহিরে বিভিন্ন স্থানে কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করে বিভ্রান্তি ছড়াতে থাকেন। জমিয়ত সুরক্ষা কমিটি নামে একটি প্যারালাল সংগঠন করে বিভিন্ন স্থানে কমিটি গঠন করে চলেছেন। আপনার এসব কর্মকান্ড সাংগঠনিক রীতিনীতির সরাসরি লঙ্ঘন নয় কি?

৫. মহাসচিবের নামে নির্বাচন কমিশন থেকে ২৮-০৮-২০১৭ইং তারিখে ইস্যুকৃত সংলাপের চিঠি কেন্দ্রীয় আমেলা থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত মাও. রেজাউল করিম মাও. শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্বাক্ষর করে চিঠিটি সংগ্রহ করে মহাসচিবের নিকট না পৌছিয়ে আপনার নিকট হস্তান্তর করে। আপনিও বিষয়টি মহাসচিবকে অবহিত করেননি।

চিঠি পাওয়ার ১৪ দিন পরে ১১-০৯-২০১৭ইং তারিখে আপনি চিঠি নিয়ে আমার কাছে আসেন। আমি মহাসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বললেও মহাসচিবের সঙ্গে আলাপ বা তাঁর কাছে চিঠি হস্তান্তর করেননি। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক মাও. রেজাউল করিমের উপর চাপ সৃষ্টি করলে সে ১৯ দিন পর এই চিঠি মহাসচিবের কাছে পৌছায়, এসব কি সুষ্ঠ দীনী রাজনীতির চর্চা?

৬. আপনি ২৪ বছর মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে নতুন আমেলার কাছে আয়-ব্যয়ের কোন প্রকার রিপোর্ট দিতে পারলেন না। আমরা আপনার সম্মান রক্ষার খাতিরেই আপনাকে দায়মুক্তি দিলাম।

৭. মহাসচিব সাহেব আমার সঙ্গে পরামর্শ করে বিগত কাউন্সিলের এজেন্ডা নির্ধারণ করলেন, কিন্তু আপনি কাউন্সিলের আগের দিন মহাসচিবকে বললেন, গঠনতন্ত্রের এজেন্ডা উত্থাপন না করতে। এটা কি সভাপতির সিদ্ধান্তের উপর হস্তক্ষেপ নয়?

মুফতী সাহেব! আপনি এম.পি ছিলেন, প্রতিমন্ত্রীর দায়ীত্বও পালন করেছেন, আপনি একজন আলেমে দীন। আপনার দৃষ্টিতে কেউ আপনার উপর অবিচার করলেওতো আপনার মত মানুষ দলের জন্য ক্ষতিকর কোনো ভূমিকা নিতে পারেন না।

রাগ-বিরাগের বশবর্তি হয়ে দলে ভাঙ্গন আসে এমন কোনো কাজ করতে পারেন না। আমি চাই বর্তমান গঠনতন্ত্রের আলোকেই দল পরিচালিত হোক। আপনার কোনো বক্তব্য থাকলে মজলিসে আমেলায় বলতে পারেন। আমরা ধৈর্যের সাথে আপনার বক্তব্য শুনবো ইনশাআল্লাহ। আপনি দল ভাঙ্গার মত কোনো কাজ করে আগামী প্রজন্মের কাছে একটি খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন আশা করি না।

আমি দলের সভাপতি হিসাবে বিষয়গুলো আপনার গোচরীভূত করলাম। আশা করি আকাবিরে দেওবন্দের উত্তরসূরী হিসাবে দায়িত্বশীলতার আচরণ করবেন। মহান আল্লাহ আপনার সহায় হন এবং আপনার ইজ্জত-সম্মানের ফয়সালা করুন। আমীন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমি আপনাকে ঢাকার নতুনবাগ মাদরাসার মিটিং মুলতবী করে সিলেট দারুল কুরআন মাদরাসায় আমার সাথে সাক্ষাতের কথা বলেছিলাম। কিন্তু আপনি মিটিং মুলতবী করেননি। আমার সাথে ওয়াদা করেও সাক্ষাৎ করেননি।

অথচ আমি দারুল কুরআন মাদরাসায় আপনার অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু আপনি আমার সাথে সাক্ষাৎ না করে সিলেট জামিয়া হুসাইনিয়া দক্ষিণকাছ মাদরাসায় বিধিবহির্ভূতভাবে মিটিং করেন। ফেরার পথে সাক্ষাৎ করার কথা বলেও তা করেননি।

ওয়াসসালাম

(আল্লামা শায়খ আব্দুল মুমিন)
সভাপতি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ