বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


বিজয় দিবস : ভাবনা ও প্রতিক্রিয়া

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আহমদ ছিদ্দীকী: বিজয় শব্দটি যদিও অত্যন্ত ছোট, কিন্তু এর পিছনে লুকিয়ে থাকে বিশদ লম্বা ইতিহাস৷ ত্যাগ তিতিক্ষার ইতিহাস৷ হাসি কান্নার ইতিহাস৷ আনন্দ বেদনার ইতিহাস৷ অর্জন ও বর্জনের ইতিহাস৷ আর জয় পরাজয়ের গল্প৷

পৃথিবীর ইতিহাস এমনই ঘুরতে থাকে জয় ও পরাজয় এবং স্বাধীনতা ও পরাধিনতার মধ্য দিয়ে৷ দুই দেশ, দুই জনপদ বা দুই জনগোষ্টি৷ যুদ্ধ, ধ্বংস, হত্যা ও লুন্ঠনের মধ্যে একদিকে বিজয়ীর নির্মম উল্লাস চলে, অন্যদিকে পরাজিতের বেদনা আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠে৷ পৃথিবীতে এভাবে বহুদেশ শক্তিমানের পদানত হয়েছে৷ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের বেলাও ঠিক তা ঘটেছে৷

১৯৭১সালের ২৫ মার্চের কালো রাতে রক্তাক্ত বাঙালি দেহ৷পাক হানাদার বাহিনী ঝাপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর৷ শুরু হয় নির্মম হত্যাযজ্ঞ৷ রাত দেড় টার পর ৩২ নং ধানমণ্ডি বাসা হতে শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে করাচি জেলখানায় আবদ্ধ করে রাখা হলো৷

পরদিন ২৬ মার্চ ঊষা স্ফুটনের পূর্বে চট্রগ্রামের কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র হতে স্বাধীনতার ঘোষনা পত্র পাঠ করেন মেজর জিয়াউর রহমান৷ কারণ সেই কালো রাতে সংগঠিত গণহত্যার অপরাধ আমাদের ধৈর্যের বাধ ভেঙে দিয়েছে৷ কিন্তু তারা আমাদের এভাবে নির্ভীক ঘোষণা ও স্বপ্নায়িত স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি৷

শুরু হয় তুমোল যুদ্ধ বিদ্রোহ৷ বাঙালী ও পাকিস্তানীদের মাঝে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ৷ বয়ে যায় রক্তের নদী৷ আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাইকে এক চেটিয়া হামলা চালায় ৷ অনেক সন্তান হারায় বাবাকে৷ অনেকে হারায় মাকে৷ আবার অনেক মা বাবা হারায় নিজ সন্তানকে৷

বাঙালীর ভাগ্যাকাশে আসে ঘোর অমানিশা ৷তবে কিন্তু এ দিয়েই সূচিত হয় একটি অধ্যায় ৷ মাজলূমিয়্যাতের অধ্যায় এবং স্বাধীনতার অধ্যায় ৷ অবশেষে সাড়ে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ইং ডিসেম্বর আমাদের বীর মাতৃভূমির বুকে আত্মসমর্পণ করে পাক হানাদার বহিনী৷

এভাবে সিন্ধু-সম রক্ত দেওয়ার পর অর্জিত হয় বহুল প্রত্যাশিত বিজয় ও স্বাধীনতা৷ বিশ্বমানচিত্রের বুকে উদিত হয় বাংলাদেশনামে একটি সবুজ দেশ ৷ আমরা পেলাম একটি স্বাধীন সবুজ পতাকা৷ সেই আকর্ষণীয় সবুজিমার মাঝখানে চমৎকার তুলি দিয়ে আঁকলাম রক্তে রঞ্জিত লালটুকটুকে একটি স্বাধীন সূর্য৷

বিজয় দিবস আমাদের জীবনে আসতে থাকে৷ এবং আমরা তাকে অনূভব করি বেশ আনন্দ উল্লাসের সাথে৷ আমাদের হৃদয়ে বাজায় আনন্দের বীণ৷ কিন্তু বোঝতে পারিনি বিজয়ের ঐতিহাসিক বাস্তবতা ও কাঙ্খিত উদ্দেশ্য৷

আমাদের ভাবতে হবে, মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে৷ কিন্তু জাতির মুক্তির সংগ্রাম শেষ হয়নি৷ তাই আমাদেরকে মুক্তিসংগ্রামের নতুনধারাকে প্রস্ফুটন করতে হবে৷ মুসলমানের এই দেশে ইসলামী শাসন ও আদর্শ প্রতিষ্টিত করতে হবে৷ জাতিকে দূর্নীতির কবল থেকে রক্ষা করতে হবে ৷

আল্লাহর দেয়া এই মহান স্বাধীনতার দিনে নিজেকে খৃষ্টীয় কালচার এবং হিন্দীয় পাপাচারে ব্যতিব্যস্ত না রেখে তার হামদ-প্রসংশা এবং তাওবা-ইস্তিগফারে ঠেসে রাখতে হবে এটাই আজকের করণীয়৷ এবং আমাদেরকে সকল মানুষের মুক্তির জন্যে লড়াই করতে হবে৷

যে লড়াইয়ের ভিত রচনা করেছে ইতিহাস, ঐতিহ্য, ধর্ম, ধারাবাহিক জীবনাচরণ, স্বাধীনতার জন্যে সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধ এবং আমাদের জয়লাভ৷

তাই এসো হে ভাই ! আমরা এই মহান বিজয় দিবসের প্রকৃত স্বাদ গ্রহণ করি৷

এইচজে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ