শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


কাউকে কাঁদানোর চেয়ে হাসাতে পারায় আনন্দ বেশি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মাদ ইয়াসীন

অনেকসময় আমরা না বুঝে বেখায়ালে অন্যায় করে ফেলি।কাউকে কাঁদিয়ে ধোঁকা দিয়ে বা দুশ্চিন্তায় ফেলে নিষ্ঠুর আনন্দ পেতে চাই।

কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি এর বিপরীতে একটু সাহায্য করে, দুটো শান্তনার কথা বলে কিংবা একটু মুচকি হেসে কাউকে খুশী করা যায়। তাহলে এতে যে পবিত্র আনন্দ লাভ হবে তা অবর্ণনীয় এবং এসব কাজ মহা দানও বটে। এমনি একটি অন্যরকম দানেরই গল্প আজ আমরা শুনবো।

গ্রামের মেঠোপথ ধরে এক আলেম হাটছিলেন সঙ্গে ছিল তার শিষ্য।পথিমধ্যে তারা দেখলেন একপাটি জুতা পড়ে আছে।এদিকওদিক তাকিয়ে জুতোর মালিক খুঁজলেন। পাশের জমিতে একলোক কাজ করছে দেখে ভাবলেন জুতো জোড়া তারই হবে হয়তো।

লোকটির হাবভাব দেখে মনেহলো কিছুক্ষণ পরই তার হাতের কাজ শেষ হয়ে যাবে।শিষ্য বললো আমি শ্রমিকটির জুতো জোড়া কোথাও লুকিয়ে রেখে দেই। লোকটি জুতো জোড়া না পেয়ে কেমন জব্দ হয়ে দিশেহারা হয় দেখা যাক। শায়খ উত্তর দিলেন, প্রিয় বৎস! আর দশজন যেভাবে আনন্দ খুঁজে তুমিও কি সেভাবে খুঁজবে? তুমি চাইলে ভিন্নভাবে আরো বেশী আনন্দ খুঁজতে পারো।

তুমি জুতো না লুকিয়ে ভেতরে কিছু টাকা রেখে দাও।আড়ালে গিয়ে লক্ষ্য করো টাকা দেখে দিনমুজুরটা কি করে? উস্তাদের প্রস্তাব ছাত্রের খুবই মনোপুত হলো। সে জুতোর মধ্যে কিছু টাকা রেখে দিলো।গাছের আড়ালে গিয়ে দুজনে দরিদ্র কৃষকের প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষায় রইলো।

কিছুক্ষণ পর দরিদ্র কৃষকটি কাজ শেষে শীর্ণ দেহে জীর্ণ বস্রে জুতা নিয়ে আসলো। জুতা পায়ে দিতে গিয়ে দেখলো আরে! পা তো ঢুকছে না, ভেতরে কিছু একটাতে পা আটকে যাচ্ছে। জুতোর আবার কী হলো? গজরাতে গজরাতে কৌতূহল ভরে জুতার ভেতরে হাত দিলো। হাত বেড় করে আনার পর যা দেখলো, তাতে তার চক্ষু চড়কগাছ। আরেঅ! এতো দেখি টাকা,ধড়মড় করে জুতোর আরেক পাটি হাতরে দেখে সেটিতেও টাকা।

হতভম্ব হয়ে টাকার দিকে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। স্বপ্ন দেখছে নাতো! না, না এতো টাকা, সত্যি সত্যিই টাকা! আশপাশ তাকিয়ে দেখলো নাহ্ কেউ নেই। টাকাগুলো পকেটে রেখে নতজানু হয়ে বসলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে কান্নামিশ্রিত স্বরে আল্লাহ্ কে সম্বোধন করে বললো, ইয়া রাব্বে কারীম! আপনার অশেষ শুকরিয়া।আপনিতো জানেন আমার স্ত্রী অসুস্থ সন্তানরা ক্ষুধার্ত।ঘরে খাবার নেই হাতে টাকাকড়িও নেই।আপনিই আমাকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচালেন। স্ত্রীকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিলেন।

ছাত্রটি এই দৃশ্য দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লো। তার অশ্রুসজল চোখ দেখে শায়েখ বললেন, তুমি কি এখন বেশী সুখী আর আনন্দিত নও? যদি তোমার ভাবনা মতো জুতা গুলো লুকিয়ে রাখতে, তাহলে বেচারার কি দশা হতো বলো? আর আমরাই বা কিভাবে তার পরিবারের করুণদশার কথা জানতে পারতাম? ছাত্র বলল, আমি এই মাত্র যা শিখলাম, যতোদিন আমি বেঁচে থাকবো তা কখনো ভুলবো না।

শায়েখ বললেন, যখন তুমি কাউকে কিছু দেবে তখন তোমার আনন্দ বেশী হবে,কারো থেকে কিছু নেয়ার চেয়ে। কারো সাথে একটু চমৎকার, সুন্দর করে কথা বললে, একটু মুচকি হাসলে, বিপদে তার পাশে দাঁড়ালে চোখের জল মুছে দিলে এগুলোও বড় মহৎদান।

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ