শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


দারুল উলুম দেওবন্দের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও স্থপতির অজানা গল্প

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা লিয়াকত আলী মাসউদ : আজ থেকে প্রায় দেড়শত বছর পূর্বে ১২৮২হিজরি সনে দারুল উলূম দেওবন্দ নামে একটি দীনি প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়৷ যা দশ বছর সাত্তা মসজিদ অতপর কাজী মসজিদ ও জামে মসজিদ দেওবন্দ ইত্যাদিতে তার শিক্ষা কার্যক্রম চালায়। যখন সতন্ত্র স্থানে আবাসনের প্রয়োজন দেখা দিল তখন সেই স্থানটি সকলে মিলে নির্ধারণ করলেন৷

যে ব্যাপারে বহুদিন পূর্বে ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের রূপকার সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলবী রহ. বলেছিলেন, ‘আমার কাছে এ জায়গা থেকে ইলমের সুঘ্রাণ আসছে৷’ অথচ সে সময় এ জায়গায় শহরের ময়লা আবর্জনা ফেলা হতো ৷ [উলামায়ে হক, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৭২]

সে স্থানেই দারুল উলূম দেওবন্দের সর্বপ্রথম ভবন নির্মান করা হয়।যা নওদারা হিসেবে পরিচিত।

দারুল উলূম দেওবন্দের দ্বিতীয় মুহতামিম হজরত শাহ রফী উদ্দীন রহ. এর সময় যখন কর্তৃপক্ষের পরামর্শক্রমে দারুল উলূমের প্রথম ভবন নির্মাণের জন্য মাটি খনন করা হচ্ছিল ৷ ভবনের চৌহদ্দিও চিহ্নিত করা হলো ৷ তখন শাহ রফী উদ্দীন রহ. রসূলে কারিম সা. কে স্বপ্নে দেখলেন।

তিনি দেখতে পেলেন রাসুল সা. সেখানে আসলেন এবং বললেন, ‘তোমাদের নির্ধারিত চৌহদ্দি তো খুবই সংকীর্ণ ।’ এ কথা বলেই তিনি স্বীয় লাঠিদিয়ে ভবনের ভিত্তি রাখার জন্য জমি চিহ্নিত করে বলেন, দেয়াল এ পর্যন্ত আসা চাই এবং নিশানের উপর ভবন নির্মাণ করা চাই।’

সকালে উঠে তিনি সেখানে যেয়ে তিনি লাঠির দেয়া চিহ্ন দেখতে পেলেন। অতপর সেই চিহ্নিত স্থান খনন করিয়ে ভবন নির্মাণের শুরু করলেন। [তারিখে দারুল উলুম, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা১০৫]

Image may contain: outdoor
ঐতিহাসিক নওদারা

দারুল উলূম দেওবন্দের ভবন নির্মাণের জন্য রসূলে কারিম সা. কর্তৃক প্রদত্ত লাঠি দ্বারা নির্ধারিত স্থানটুকু খনন করা হয়৷ ভিত্তিপ্রস্তরের জন্য ২ জিলহজ্ব ১২৯২ হিঃ সনে জুমার নামাজের পর অনেক আকাবির আলেম দেওবন্দের জামে মসজিদে সমবেত হন ৷

আগত অতিথিদের উদ্দেশ্যে হজরত কাসেম নানুতুভি রহ. একটি ভাষণ দেন এবং সমাবেত সকলকে অনুরোধ জানান আপনারা মাদরাসা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য নির্ধারিত স্থানে আসুন হোন ৷ তারা সেখানে গেলেন উপস্থিত হলেন ৷

সর্বপ্রথম ইট রাখেন হজরত মিয়াজি মুন্নে শাহ রহ., দ্বিতীয়টি হজরত হাজি আবিদ হুসাইন রহ., তৃতীয়টি হজরত হজরত রশিদ আহমদ গাঙ্গূহি রহ.। তারপর হজরত কাসেম নানুতুভি রহ.। এরপর সমবেত জনতার সবাই একটি করে ইট স্থাপন করেন ৷

[তাজাল্লি, তাজকিরায়ে মাশায়েখে দেওবন্দ, পৃষ্ঠা-১৭৩]

মিয়াজি মুন্নে শাহ রহ. এর পরিচয়
পুরো নাম মিয়াজি নূর মুহাম্মদ শাহ ৷ যিনি মিয়াজি নূর মুহাম্মদ ঝাঞ্জানুভী রহ. নামে সুপ্রসিদ্ধ ৷ তিনিই সায়্যিদুত তায়িফা হাজি এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. এর পীর। হজরত হাজি এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. একবার স্বপ্নে দেখেন যে, হজরত মিয়াজি রহ. রাসূলে কারিম সা. এর জুব্বা মুবারক পড়ে আছেন ৷ সেই শুভ স্বপ্নের উপর ভিত্তি করেই তিনি তার হাতে বাইয়াত হন। [তালিমুদ্দিন]

একাধারে ৩০ বছর পর্যন্ত মিয়াজি রহ. এর তাকবিরে উলা ছুটে নি। তাঁর পীর ছিলেন শায়খ শহিদ আবদুর রহিম আফগানি রহ.। তিনি হজরত সায়্যিদ আহমদ শহিদ বেরলভী রহ. থেকেও খেলাফত লাভ করেছিলেন ৷ তার বংশ পরম্পরা সায়্যিদিনা হযরত আলী রা. এর সাথে যেয়ে মিলেছে৷

তিনি উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগর জেলার অন্তর্গত ঝাঞ্জানা নামক স্থানে অবস্থান করতেন ৷ ৪ রমজান ১৩৫৮ হিঃ সনে ইন্তিকাল করেন ৷
[ওহ কুহ কুন কি বাত, পৃষ্ঠা ২১২]

হাকিমুল উম্মাত হজরত আশরাফ আলি থানুভি রহ. বলেন, হজরত নূর মুহাম্মদ ঝাঞ্জানভি রহ. ছোট অবয়বের অনুপম সৌন্দর্যের অধিকারী নাজুক স্বভাবের মানুষ ছিলেন ৷ তবে আপাদ মস্তক নূরের প্রভায় বিভাময় ছিলেন ৷ [কাসাসুল আকাবির, পৃষ্ঠা-৩০]

সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের বীর সেনানী হজরত হাফিজ জামিন শহিদ রহ. তাঁর হাতে বাইয়াত হওয়ার উদ্দেশ্যে ঝাঞ্জানা পৌঁছলেন ৷ মিয়াজি রহ. এর সাদাসিধে জীবন ধারার কারণে চিনতে পারেন নি ৷ মনে করলেন হয়তো কোন ধোপী হবেন ৷ তাকেই সম্বোধন করে বলেন ধোপিজী, ‘মিয়াজি নূর মুহাম্মদ-এর বাড়ি কোনটি?’ তখন তিনি জবাবে বললেন, আমি কাপড়-চোপড় ধুই না ৷ আমি মানুষের হৃদয় জগত ধৌত করি ৷ [তাজকিরায়ে মাশায়েখে দেওবন্দ, পৃষ্ঠা-২৫]

দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা হজরত কাসিম নানু়তভি রহ. বলেন, তিনি এমন মহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন কবিরা গোনাহ তো দূরের কথা, কখনো সগিরাহ গোনাহের কল্পনাও করেন নি৷ [আর রশিদ, দারুল উলুম নেম্বর]


সম্পর্কিত খবর