শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


বক্তা ও আয়োজকরা পরস্পরকে বুঝতে চান না: মুফতী লূৎফর রহমান ফরায়েজী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইদানিং পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাহফিলের বক্তা ও মাহফিলের আয়োজক পরস্পরকে দোষারোপ করে লেখালেখি চোখে পরছে। একপক্ষ অপরপক্ষের প্রতি বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করছেন। পরস্পরের সততা ও আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে প্রচুর।

সে প্রেক্ষিতেই কিছু লিখতে ইচ্ছে হলো। আমি শুধু কয়েকটি ঘটনা লিখবো। সত্য ঘটনা। লেখা উচিৎ বলেই মনে হলো। আশা করি, অনেকের ভুল ধারণা ভাঙ্গবে। বোঝার সুবিধার্তে ঘটনাগুলো দুইভাগে লিখছি!

ঘটনা বিবরণে কিছু স্থানের নাম লিখা হবে। স্থানগুলো প্রতীকী ধরে নিন।

ক. 
১. দেশের একজন নামকরা বক্তা ও বড় আলেমকে ফোন দিলাম। হযরত! আমাদের এলাকায় আমরা একটি মাহফিল করি। এবার নিয়ত করেছি আপনাকে মেহমান করবো। তারিখ দিলে খুশি হতাম।

বক্তার উত্তর : আমাকে নিতে পারবা না। আমাকে গাড়ি দিয়ে নিতে হবে আবার দিয়ে যেতে হবে। আবার দশ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া হাদিয়া দিতে হবে।

‘জি হুজুর’ বলে কেটে দিলাম। ঘটনাটি আরো চার পাঁচ বছর আগের। মনটা খারাপ হয়েছিল। শুরুতেই টাকার কথা! এমন বক্তা দিয়ে শ্রোতার কি ফায়দা হবে?

২. একটি ছোট্ট মাদরাসা। বার্ষিক মাহফিল। বক্তা চমৎকার বয়ান করলেন। ঢাকার নামকরা এক মাদরাসার মুহাদ্দিস পদবী ধারণ করে আছেন। বয়ান শেষে হযরতের হাতে তুলে দেয়া হল পনের হাজার টাকা।

বক্তা গুণলেন। প্রবল রোষে টাকা ছুড়ে মারলেন আয়োজকের মুখে। এটা কী দিলেন? আরো দশ হাজার দিন।
লজ্জায় মুষরে গেল আয়োজক মাওলানা। খুঁজে খুঁজে আরো আট হাজার এনে দিলেন। এবার বক্তা খানিক খুশি মনে গাড়িতে উঠলেন।

এমন অনেক ঘটনা আছে। আর না হয়, না-ই বললাম।

খ.
১. ব্যস্ত একজন মানুষ। লেখালেখি দরস তাদরিস তার মূল পেশা। দাওয়াত দেয়া হল কুষ্টিয়া জেলার এক থানায়। বক্তার আর্জি আগের দিন কিশোরগঞ্জ আর পরের দিন চট্টগ্রাম মাঝখানে কুষ্টিয়া কিভাবে যাবে? প্রাইভেট কার ছাড়া তো কোন গতি নেই।
আয়োজক : আপনাকে আসতেই হবে। গাড়ি নিয়ে আসেন।
প্রাইভেট কার ভাড়া আট হাজার। মাহফিল শেষে বক্তার হাতে ধরিয়ে দেয়া হলো, দুই হাজার টাকা। বক্তা খুশি মনে সেই টাকা আয়োজককে ফেরত দিলেন। আয়োজক তা গ্রহণও করলেন। বিদায় নিলেন বক্তা ঢাকার পথে। মাদরাসা থেকে পাওয়া বেতন থেকে জরিমানা আট হাজার টাকা।

২. গন্তব্য ফটিকছড়ি। কার ভাড়া আট হাজার। বক্তার হাতে আয়োজক মুসাফাচ্ছলে তুলে দিলেন ছয় হাজার। বক্তা না দেখেই ঢাকার পথে। জরিমানা দুই হাজার।

৩. বক্তার মাহফিল সুনামগঞ্জ। গাড়ি ভাড়া আট হাজার। আয়োজকের মুসাফাহা চার হাজার। জরিমানা চার হাজার।

৪. গন্তব্য মোমেনশাহীর ফুলপুর। গাড়ি ভাড়া চার হাজার। আয়োজকের হাদিয়া দুই হাজার।

এইভাবে গাঁটের টাকা ব্যয়ে কয়দিন মাহফিল করবে? সমাধান কি? চুক্তি করে নিজের জাত্যাভিমান খুয়াবে?  কন্ট্রাক্ট করে স্বকীয়তা বিসর্জন করবে? বয়ান করা ছেড়ে দেয়াই উত্তম নয় কি? দূরের বক্তা দাওয়াত না দিয়ে নিকটস্থ যোগ্য উলামাদের দাওয়াত দেয়াই কি সমীচিন নয়? কন্ট্রাকী বক্তা বাদ দিয়ে মুত্তাকী বক্তাকে যথাযোগ্য সম্মান রক্ষায় উদ্যোগী হওয়া উচিত নয় কি?

আসলে সমস্যাগুলো জটিল। সমাধান সম্ভব কি? বক্তা আয়োজক উভয়ের সচেতনতায় দূর হতে পারে এ জটিলতা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সহজ করে দিন। দ্বীন প্রচারের ‘মাহফিল’ মাধ্যমকে আরো কার্যকরী ও উপকারী বানান । আমিন।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ