বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


জেরুসালেম ইস্যুতে বাংলাদেশের আন্দোলন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নেই কেন?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

তারেকুল ইসলাম
রাজনীতিবিষয়ক নিবন্ধকার

আল কুসদকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা দেওয়ার প্রতিবাদে মুসলিম দেশগুলোর আন্দোলন, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশের কভারেজ দিয়ে আল জাজিরা ইংলিশ চ্যানেল একটা ভিডিও রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।

সেখানে বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর আন্দোলন ও বিক্ষোভের সচিত্র প্রতিবেদন এলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশখ্যাত বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের আন্দোলন ও বিক্ষোভের কোনো ফুটেজ আসেনি!!

কেন আসেনি? বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে আন্দোলন ও বিক্ষোভ হওয়া সত্ত্বেও কেন আল জাজিরার মতো একটি আন্তর্জাতিক চ্যানেলে ফুটেজ আসেনি? আল জাজিরা কি ইচ্ছা করেই বাংলাদেশের ডেমোন্সট্রেশনের খবর ব্ল্যাকআউট করেছে? নাকি পাত্তা দেয়নি? আসলে এমন কিছুই না।

মূল কারণ হলো, আন্তর্জাতিক ইস্যুতে আন্দোলন ও বিক্ষোভ যদি আনস্মার্ট হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই দেশীয় পরিসরে যত বড় আন্দোলন-বিক্ষোভই হোক না কেন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কভারেজ পাওয়া যায় না।

ট্রাম্পের স্বীকৃতির ঘোষণার প্রতিবাদে যথেষ্ট আন্দোলন-বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে আমাদের দেশে। হেফাজত ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে শুরু করে উল্লেখযোগ্য প্রতিটি ইসলামী দলই দেশীয় পরিসরে ভালোই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তাদের আন্দোলনের ফুটেজ তুলে ধরার মতো স্মার্ট ডেমন্সট্রেশন তারা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।

দু-একটি দলের ইংরেজি ব্যানার দেখা গেছে শুধু। কিন্তু দরকার ছিল প্রত্যেক দলেরই ইংরেজিতে লেখা ব্যানার ব্যবহার করা। তাছাড়া আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের হাতে ইংরেজিতে লেখা প্ল্যাকার্ড তেমন একটা লক্ষণীয় ছিল না।

প্রত্যেকটা বিক্ষোভ সমাবেশে অন্তত কয়েকশ’ প্রতিবাদমূলক ও সংহতি জ্ঞাপনমূলক প্ল্যাকার্ড ইংরেজিতে হওয়া দরকার ছিল। তারপর বড় আকারের ফিলিস্তিনের পতাকার সাথে বাংলাদেশের পতাকা একসাথে সেলাই করে তুলে ধরা দরকার ছিল। তাহলে আন্দোলন ও বিক্ষোভের ছবি দেখলেই বোঝা যেত এটা কী-বিষয়ক আন্দোলন।

আল-জাজিরার ভিডিওতে দেখালাম, তুরস্ক, জর্ডান, সোমালিয়া, সিরিয়া, মিশর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া থেকে শুরু করে পরিচিত মুসলিম দেশগুলোর আন্দোলনের ফুটেজ দেখা গিয়েছিল। আন্দোলনগুলোর সচিত্র ফুটেজ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল কীসের আন্দোলন।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশের আন্দোলনের ফুটেজ আসেনি। কারণ, জেরুসালেমের মতো একটা আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ওরকম স্মার্ট আন্দোলন দেখাতে না পারলে আলজাজিরা কিভাবে বিক্ষোভের ছবি বা ফুটেজ তুলে ধরবে? বিক্ষোভ কী জন্য হচ্ছে, দেখামাত্রই যদি বোঝা না যায় বা দৃষ্টি আকর্ষণ না করে, তাহলে কীভাবে তুলে ধরবে?

স্মার্ট আন্দোলনের কথা বলছি এ কারণেই যে, কোনো আন্তর্জাতিক ইস্যুতে আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য- বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বার্তা পৌঁছানো। ফিলিস্তিনের মজলুম জনগণের প্রতি সংহতির বার্তা জানান দেওয়া। আন্দোলন ও বিক্ষোভের ফুটেজ দেখানোর মূল উদ্দেশ্যও এটাই আল-জাজিরার।

ইসলামি নেতৃবৃন্দের মধ্যে আমার এই লেখাটা যারা পড়ছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ- একটু কৌশল করে আল কুদস ইস্যুতে আন্দোলন করুন। আগামী ১১ ও ১৩ ডিসেম্বর মার্কিন দূতাবাস ঘেরাও করে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের ডাক দেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক ইস্যুতে অবশ্যই স্মার্ট আন্দোলন হতে হবে। ডেমন্সট্রেশনের প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও পতাকার প্রদর্শনী দেখেই যেন বুঝা যায়, কিসের আন্দোলন হচ্ছে। তাহলেই আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় কভারেজ পাওয়া সম্ভব হবে। অন্যথায় নয়।

আল জাজিরার তৈরি সেই ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

https://twitter.com/AJEnglish/status/939181545293615105


সম্পর্কিত খবর