শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


‘তাকওয়ার স্তর উন্নীত হলে ইসলামি অর্থনীতির বাস্তবায়ন সম্ভব; আমরা কাজ করে যাচ্ছি’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি আবদুল্লাহ মাসুম। বয়সে তরুণ। সৃজনশীল কাজ ও বহুমুখী বৈচিত্রতায় প্রবীণ। হাফেয, আলেম, মুফতিও ‘ইসলামি অর্থনীতিবিদ’। ইসলামি অর্থনীতি, ব্যাংকিং ও আর্থিক কর্মকাণ্ডে হালাল-হারাম বিষয়ে গণ-সচেতনা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বহুদিন ধরে। আজকের একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব বিষয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব

আওয়ার ইসলাম: ইসলামি ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও হালাল-হারাম বিষয়ে আপনি গণমুখী যে কাজ করে যাচ্ছেন, এ বিষয়ে একটু বলুন। কী চিন্তা থেকে এ কাজ শুরু করেছেন?

মুফতি আবদুল্লাহ মাসুম: একজন মুসলিম হিসেবে জীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলামের হালাল-হারাম বিধি-বিধান মেনে চলা অপরিহার্য। বিশেষত আর্থিক কর্মকাণ্ডে এর প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।

সহিহ হাহিসে দুআ ও ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য হালাল গ্রহণকে শর্তারোপ করা হয়েছে।(সহীহ মুসলিম:১০১৫) অথচ দেখুন, আমাদের মুসলিম সমাজে এ বিষয়ে যথেষ্ট অবহেলা করা হয়। হয়ত নামাজ পড়ছে, কিন্তু সুদসহ নানা হারাম লেনদেনে জড়িয়ে আছে। ইসলাম ব্যাংকি করছে, তবে সঠিকভাবে করা হচ্ছে কম।

বকেয়া মূল্য পরিশোধের জন্যও মুরাবাহার আবেদন জমা হচ্ছে। মঞ্জুরও হচ্ছে। অথচ এটি মুরাবাহার নামে সুদী লেনদেন। তো কীভাবে মানুষকে হালাল-হারাম বিষয়ে সচেতন করা যায়, ইসলামি ব্যাংকিং বিষয়ে সঠিক ধারণা প্রদান করা যায়, সর্বোপরি দেশ ও জাতির কল্যাণ নিশ্চিত হয়- সেই চিন্তা থেকেই শুরু করেছি অর্থনীতি, ব্যাংকিং ও হালাল-হারাম বিষয়ক গণকর্মসূচি-‘ইসলামী অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স কোর্স’ (আই.ই.এফ.সি)।

আওয়ার ইসলাম: ইসলামি অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স কোর্সটি কত দিনের? শিক্ষার্থীদের কি সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়?

মুফতি আবদুল্লাহ মাসুম: কোর্সটি মূলত ৬ মাসের। ৩ মাস করে দুটি সেমিস্টার । আই এফ একাডেমি এন্ড কনসালটেন্সি নামে আমাদের একটি গভ. রেজিস্টার্ড ফার্ম আছে। বর্তমানে এর অধীনে উক্ত কোর্স পরিচালিত হচ্ছে।

সম্প্রতি সেন্ট্রাল শরীয়াহ্ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংক অব বাংলাদেশের নির্বাহী কমিটির ৪২তম সভায় উক্ত কোর্সকে অনুমোদন করা হয়েছে। কোর্স শেষে শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেটও প্রদান করা হয়।

আওয়ার ইসলাম: কোর্সে কী কী বিষয়ে পাঠদান করা হয়?

মুফতি আবদুল্লাহ মাসুম: প্রথম সেমিস্টারে মৌলিকভাবে পড়ানো হয়-ইসলামি অর্থনীতির পরিচিতি, নীতিমালা, সম্পদ, উপার্জন, হালাল-হারাম, সুদের উপর এ টু জেড আলোচনা, ঘুষ, ঘারার, ক্বিমার-মাইসির, শিরকত, মুশারাকা, মুদারাবা, ইজারা, সলম, ইস্তেসনা ও মুরাবাহা ইত্যাদি।

দ্বিতীয় সেমিস্টারে মৌলিকভাবে পড়ানো হয়-ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সঠিক হওয়ার নীতিমালা, ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিতে বিভিন্ন শর্তারোপ, ইসলামের ভোক্তাধিকার আইন, আরবুন, হামিশ জিদ্দিয়া, জেনারেল ব্যাংকিং বিষয়ে এ টু জেড শরীয়াহ পর্যালোচনা, ইসলামি ব্যাংকিং-এর সঠিক রূপরেখা, কার্যক্রম, বিনিয়োগ নীতিমালা, জেনারেল বীমা, তাকাফুল, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড ও মুনাফা কামানোর শরঈ নীতিমালা ইত্যাদি।

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব: কোর্সে পাঠদান পদ্ধতি কী? পাঠদানে কী কী বিষয় সামনে রাখা হয়?

মুফতি আবদুল্লাহ মাসুম: বিষয়টি যেহেতু ইসলামিক, জেনারেল ভাইরা এর সাথে খুব বেশি পরিচিত নন, তাই বাংলায় সাবলিল ভাষায় লেকচার প্রদান করা হয়। প্রচুর উদাহরণ দিয়ে মূল বিষয়টি বুঝানো হয়। প্রতিটি বিষয় কুরআন, সুন্নাহ ও ফিকহুস সালাফের আলোকে আলোচনা করা হয়।

নতুন বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে এ্যাওফি স্ট্যান্ডার্ড, ইসলামী ফিকাহ একাডেমি, জেদ্দাহ, মাক্কা, হিন্দ ইত্যাদি আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোর সিদ্ধান্ত অনুসরণ করা হয়। এছাড়া অধুনা বিশ্বের বিখ্যাত স্কলারদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয়। প্রতিটি আলোচনার উপর সিটও প্রদান করা হয়।

অবশ্য এখন সেই সিটগুলো মলাটবদ্ধ করা হয়েছে। প্রথম সেমিস্টারে লেকচার সমগ্র প্রায় ৫০০পৃ.। দ্বিতীয় সেমিস্টারের লেকচার সমগ্র প্রায় ৭০০পৃ।

আওয়ার ইসলাম: ইসলামি অর্থনীতি, ব্যাংকিং ও হালাল-হারাম বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজের প্রেরণা পেয়েছেন কার থেকে? এ বিষয়ে আপনার পড়াশোনা কোথায়?

মুফতি আবদুল্লাহ মাসুম: দাওরা পাস (মাস্টার্স সমমান) এর আগে থেকেই ব্যক্তিগতভাবে ফিকহ ও অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনার আগ্রহ ছিল। দাওরা পাসের পর বাংলাদেশের বিখ্যাত গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান মারকাযুদ্দাওয়া আল ইসলামিয়ায় ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়া বিভাগে ভর্তি হই। সেখানে প্রথমে ফিকহ, ফতোয়া ও ইসলামি অর্থনীতি বিষয়ে দু’বছরের কোর্স সম্পন্ন করি।

এরপর আরো তিন বছর এ বিষয়গুলোতে গভীর পড়াশোনা করি। মূলত মারকাযুদ্দাওয়ার সম্মানীত মুদির ও প্রধান মুফতি উস্তাযে মুহতারাম আবুল হাসান মুহাম্মদ আবদুল্লাহ সাহেব থেকেই অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিষয়ে কাজের প্রেরণা লাভ করি। ইসলামি অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিষয়ে তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা প্রচুর।

আওয়ার ইসলাম: কোর্স পরিচালনার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ে আর কী কাজ করছেন?

মুফতি আবদুল্লাহ মাসুম: বাজারে যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যেমন-মুদী দোকানদার, মাছ বিক্রেতা, সবজি বিক্রেতা ইত্যাদি শ্রেণির ব্যবসায়ীদের মাঝে ইসলামের ব্যবসায়িক নীতি ও শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এক/দুটি বাজারে সাপ্তাহিক কর্মশালার আয়োজন করে থাকি।

আলহামদুলিল্লাহ, সে কর্মশালার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বাজারে সততা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা শহরের প্রতিটি বাজারে বাজার সমিতির সহায়তায় যদি তা করা যায়, তবে ইনশাআল্লাহ বাজারের চেহারাই পাল্টে যাবে। মাছে ফরমালিন, মিথ্যা, প্রতারণা হ্রাস পাবে। দেশ ও সমাজ উপকৃত হবে।

আওয়ার ইসলাম: বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইসলামি অর্থনীতির বাস্তবায়ন কি সম্ভব বলে মনে করেন?

মুফতি আবদুল্লাহ মাসুম: ইসলামি অর্থনীতি অবাস্তব কিছু নয়। একটি যুগোপযোগী বাস্তব বিষয়। সুতরাং তাকওয়ার স্তর উন্নীত হলে এর বাস্তবায়ন মোটেও অসম্ভব নয়। আমরা দেশ ও জাতির পক্ষে ইতিবাচক পন্থায় সে কাজটিই করে যাচ্ছি। এভাবে বহুমুখী কাজ ব্যাপকভাবে শুরু হলে ইনশাআল্লাহ সর্বত্র ইসলামি অর্থনীতির বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

আওয়ার ইসলাম: ইসলামি অর্থনীতি নিয়ে যারা পড়াশোনা করতে আগ্রহী, তাদের জন্য কিছু বলুন।

মুফতি আবদুল্লাহ মাসুম: ইসলামি অর্থনীতি একটি বিশাল জগৎ। এ বিষয়ে ভাল করতে চাইলে প্রথমত আরবি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষা জ্ঞান থাকতে হবে। কুরআন-হাদিস সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়া নিয়েও পড়াশোনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

সর্বোপরি ইসলামি অর্থনীতি ও ফিকহুল মুআমালায় পারদর্শী কারো সান্নিধ্য অবলম্বন করতে হবে।

আওয়ার ইসলাম: শেষ প্রশ্ন, আপনার কোর্সে কেউ অংশগ্রহণ করতে চাইলে কীভাবে করবে?

মুফতি আবদুল্লাহ মাসুম: আমাদের ফেসবুক পেইজ www.facebook.com/IEFCBD এখানে যোগাযোগ করতে পারেন। অথবা ই-মেইল করতে পারেন masum.jsmalibag@gmail.com।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ