শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


সড়ক দুর্ঘটনায় মেয়েসহ তাবলিগের প্রবীণ সাথী তৌহিদুর রহমান নিহত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

শেখ মুহাম্মদ নাসির
খুলনা সংবাদদাতা

পিরোজপুর শহরে মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় খুলনার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও তাবলিগ জামাতের প্রবীণ সাথী আলহাজ্ব মুহাম্মদ তৌহিদুর রহমান ও তার মেয়ে নুসাইবা বিনতে তৌহিদ (১২) নিহত হয়েছেন।

গত (৩ ডিসেম্বর ) রবিবার রাত ১০টায় বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কে এ দুর্ঘটনায় তৌহিদুর রহমানের স্ত্রী সাবিয়া সুলতানা নির্ঝর (৩৫), তার ছেলে জাবের ইবনে তৌহিদ (৭) ও রুকাইয়া বিনতে তৌহিদ (৫) গুরুতর আহত অবস্থায় নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তবে ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে গাড়ির চালক খায়রুল ইসলাম (২৫)।

গতকাল সোমবার জোহরবাদ নিরালা তাবলিগ মসজিদ প্রাঙ্গনে পিতা ও কন্যার একত্রে অনুষ্ঠিত জানাজায় তাবলিগ জামাতের মুরব্বি, আলেম-ওলামা ও স্থানীয় মুসল্লীদের মধ্যে বাঁধ ভাঙা কান্নার রোল পড়ে যায়। হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয় পুরো এলাকায়।

পরে টুটপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয় পিতা ও কন্যাকে। আগামী শুক্রবার আসরবাদ নিরালা বড় মসজিদে মরহুমদের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

পিরোজপুর থানার এস আই মাহাবুব আলম জানান, গত রবিবার রাত ১০টার দিকে কুয়াকাটা থেকে খুলনায় যাওয়ার পথে বলেশ্বর ব্রীজের বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলা প্রান্তের খাদে মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

পিরোজপুর ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম আহতদের উদ্ধার করে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। গাড়িতে থাকা খুলনার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তৌহিদুর রহমান (৪২) ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।

পিরোজপুর হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা আনার পথে তার বড় কন্যা নুসাইবা বিনতে তৌহিদ (১২) মারা যান। পরে পিরোজপুর হাসপাতাল থেকে আহত সবাইকে রাতেই খুলনা এনে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীদের বরাত দিয়ে নিহতের আত্মীয়রা দুর্ঘটনার কারণ দু’ভাবে বর্ণনা করছেন। একটি সূত্র বলছেন, চালক খায়রুল ইসলাম খুব বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিল। হঠাৎ একটি চাকা লিক (পান্সার) হলে মাইক্রোবাসটি উল্টো এ দুর্ঘটনা ঘটে।

অপর সূত্র দাবি করছেন, মাইক্রোবাসটির পেছন থেকে কোন গাড়ি ধাক্কা দিয়ে থাকতে পারে। তবে চালক খায়রুল ইসলাম পলাতক থাকায় দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট হওয়া যাচ্ছে না।

সরেজমিন নগরীর নিরালা ১৬নং রোডে মরহুমের নিজ বাস ভবনে গিয়ে দেখা যায় শোকের মাতম।

নিহতের নিকট আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বড় বোন শামসুন নাহার লিপিকে ঢাকা থেকে আনতে গত ৩০ নভেম্বর ব্যবসায়ী তৌহিদুর রহমান খুলনা থেকে গিয়েছিলেন সপরিবারে। ১ ডিসেম্বর বড় বোনকে সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন বরিশাল নিকট আত্মীয়ের বাসায়। ওইদিন বরিশাল থেকে নিকট আত্মীয় ও পরিবারের সকলে মিলে গিয়েছিলেন সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায়।

গতকাল সোমবার খুলনা কলেজিয়েট গার্লস্ স্কুলের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র (বড় মেয়ে) নুসাইবা বিনতে তৌহিদের ইংরেজি ১ম পত্র পরীক্ষা ছিল, সে জন্য কুয়াকাটা থেকে গত রবিবার সন্ধ্যায় পরিবার নিয়ে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন তিনি।

কুয়াকাটায় আরও একদিন বেড়াতে থেকে যান তার বড় বোন ও তার পরিবার। পথিমধ্যে এ দুর্ঘটনায় ঘটে।

নিহত তৌহিদুর রহমান তাবলিগ জামাতের মুরব্বি ছিলেন। এছাড়া বাগমারার সবুজবাগ এলাকায় একটি এতিমখানা, মাদরাসা ও জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। তার খরচেই চলতো এখানকার দেড়শ’ শিক্ষার্থী ও দশজন শিক্ষকের খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ।

সোনাডাঙ্গায় টিভিএস মোটরসাইকেলের শো’রুম, নগরীর খেলাধুলা মার্কেট ও আজমল প্লাজায় একাধিক শো’রুমের মালিক তিনি।

জানাজায় উপস্থিত ছিলেন খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিজান, সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি, ইসলামী আন্দোলন নগর সহ সভাপতি শেখ মোঃ নাসির উদ্দিন, স্থানীয় কাউন্সিলর শমসের আলী মিন্টুসহ স্থানীয় তাবলিগ জামাতের মুরববী, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় বিপুল সংখ্যক মুসল্লী।

জানাজার নামাজে ইমামতি করেন মরহুমের প্রতিষ্ঠিত মাদরাসার অধ্যক্ষ মুফতি রফিকুল ইসলাম। জানাজার শুরুতেই সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় কেঁদে ফেলেন ইমাম ও মুসল্লিরা। তার আগে মরহুমের পক্ষ থেকে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন তার বড় ভাই সাহিদুর রহমান বিশ্বাস।

উলামাদের নির্দেশিত পথে দাওয়াতের কাজ বেগবান হবে: কাকরাইল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ