শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তি চুক্তির ২০ বছর, শান্তি ফেরেনি পাহাড়ে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

শাহনূর শাহীন: আজ শনিবার পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তি চুক্তির ২০তম বার্ষিকী। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে সরকার এবং পাবর্ত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ বাণী দিয়েছেন।

শান্তি চুক্তির ২০ বছর পূর্তি উদযাপনে বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং এর নেতৃত্বে আগামীকাল সকাল ৮ টায় ধানমন্ডি ৩২নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মাধম্যে তিন পাবর্ত্য জেলায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটে।সে সময়ের সরকারের পক্ষে জাতীয় সংসদের তৎকালীন চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ্ এবং জনসংহতি সমিতির পক্ষে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লার্মা ওরফে সন্তু লার্মা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

শান্তি চুক্তির ২০ বছর বছরে প্রশ্নটা আরো বড় হয়ে উঠছে আসলেই কি পাহাড়ে শান্তি ফিরেছে। শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের ব্যাপারে সন্তু লারমার রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। অভিযোগ রয়েছে সরকারের তরফ থেকেও।

গণ্যমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী শান্তি চুক্তির পর থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সামাজিক অপরাধের বাইরে তিন পার্বত্য জেলায় খুন হয়েছে ২ হাজার ১৯৯ জন মানুষ। অপহৃত হয়েছে আরো ২ হাজার ৩৯২ জন। নিহতদের অধিকাংশই বাঙালি। বাঙালিরা খুন হয়েছেন সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও চাঁদাবাজির জের ধরে এবং অধিকাংশই পাহাড়িদের হাতে। নিহতদের এক-তৃতীয়াংশ পাহাড়ি। তন্মধ্যে অধিকাংশ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে পাহাড়িদের নিজস্ব আন্ত-কোন্দলের কারণে।

স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যম সুত্রে জানা যায়, শান্তি চুক্তি হলেও তিন পার্বত্য জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী পাহাড়ি এলাকার দুর্গম অঞ্চল থেকে সেনা ক্যাম্পগুলো প্রত্যার করার পর থেকে পাহাড়িদের মধ্যে অপরাধ প্রবনতা আরো বেড়ে গেছে। আগে যেখানে পাহাড়িদের কাছে জনপ্রতি অস্ত্র ছিল না বর্তমানে সেখানে প্রত্যেক পাহাড়ির হাতে হাতে অস্ত্র থাকার পরেও তাদের কাছে এখন তাদের কাছে উদ্বৃত্ত অস্ত্র রয়েছে। জনসংহতি সমিতির অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৪-১৫ সালে ভারতের মিজোরামে পার্বত্য জেলাগুলোর জন্য আনা বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের একটি চালান ধরাও পড়ে।

তিন পার্বত্য জেলায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষের মধ্যে ৪৮ শতাংশ বাঙালি। বাকি ৫২ শতাংশ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী উপজাতি অধিবাসী। পাহাড়ি বাঙালি সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শান্তি চুক্তি করা সত্তেও এখনো জনসংহতির নেতারা তিন পার্বত্য জেলা থেকে বাঙালিদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সময়। খোদ সন্তু লারমাও এমন দাবি জানায় সময়ে সময়ে। পার্বত্য এলাকার জমির বিরোধ নিরসনে শান্তি চুক্তি অনুযায়ী ২০০১ সালে সরকার ভুমি জরিপ কমিশন গঠন করে। কিন্তু পার্বত্য গোষ্ঠীগুলো বাধার মুখে বুমি জরিপ কমিশন কাজ করতে পারছে না। উপজাতীয় নেতাদের আপত্তির পরিপেক্ষিতে সরকার গত বছর ভূমি কমিশন আইন সংশোধন করেছে কিন্তু তবুও এর কার্যক্রম বাস্তবায়ন  করা সম্ভবপর হয়ে উঠছে না।

গত বুধবার জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান সন্তু লারমা জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ‘বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে পুনর্বাসন করা হয়নি’। অথচ শান্তি চুক্তির কোথাও বাঙালিদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কথা উল্লেখ নেই।পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে সরকার পার্বত্য শান্তিচুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি বাস্তবায়ন করেছে বাকিগুলোও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন। সরকারের পক্ষ থেকে মাত্র একটিই শর্ত ছিল সশস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো অস্ত্র সমর্পন করবে। কিন্তু জনসংহতি নেতাদের রাজনৈতিক ছত্রছায়ার কারণে শান্তি চুক্তির ২০ বছরেও সেটা সম্ভব হয়নি।

সাধারণ জনগণের অভিমত পাহাড়ে সেনাবাহিনী না থাকলে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা বাঙালিদের কচুকাটা করে তাড়িয়ে দেবে। এ ব্যাপারে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ বলেন, পার্বত্য জেলাগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হলে নিরাপত্তাশূন্যতা তৈরি হবে।  তিনি বলেন এমনিতেই পাহাড়ে বর্তমানে সুষ্ঠু পরিস্থিতি নেই। এখনো চাষাবাদ, পণ্য পরিবহনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে চাঁদা দিতে হয়। কাঙ্ক্ষিত চাঁদা না পেলে তারা খুন, অপহরণসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়।সুতরাং সঙ্গত কারণে স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থেই সেখানে সেনা সদস্যদের উপস্থিতি প্রয়োজন।

তিনি বলেন, চুক্তি শর্ত অনুযায়ী পার্বত্য জেলার দূর্গম অঞ্চল থেকে বেশকিছু সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। স্থানীয় জনগণের স্বার্থেই সব ক্যাম্প প্রত্যাহার করা মোটেও উচিত হবে না। বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তার জন্যই সেখানে সেনাক্যাম্প রাখা প্রয়োজন। সব সেনা সরিয়ে নিলে পার্বত্য জেলায় নিরাপত্তাশূন্যতা তৈরি হবে।

এসএস/


সম্পর্কিত খবর