শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


একজন অগ্রজের চোখে ‘আলী হাসান তৈয়ব’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

লাবীব আবদুল্লাহ
লেখক, সম্পাদক ও মুহাদ্দিস

আলী হাসান তৈয়ব। নামের অর্থেই লুকিয়ে আছে প্রজ্ঞা, বুদ্ধিদীপ্তির আলো৷ আলো তো লুকিয়ে থাকে না, প্রতিভাত হয়৷ হয় প্রতিবিম্ব, বিচ্ছুরণ৷ আলোকসম্পাত৷

প্রতিভাবান আলেমের নাম আলী হাসান তৈয়ব৷ নামের আগে তেমন লকব ব্যবহার করেন না তিনি; তবে অনেক লকব তাঁর৷ আলেম, লেখক, খতিব, টিভি আলোচক, মাহফিলের সুবক্তা৷

তিনি লেখালেখির ভুবনে সরব বিচরণ করেন সেই ১৯৯৭ সাল থেকে৷ লেখেন সাহিত্যধর্মী লেখা৷ লেখেন মুসলিম উম্মাহর সংকট, সম্ভাবনা৷ ক্যানভাসে ছবি আঁকেন ইতিহাস ঐতিহ্যের৷ আঁকেন সমাজচিত্র৷

সামহোয়ারইন, প্রথম আলো ব্লগে একসময় সরব ছিলেন ব্লগিং-এ৷ বিপরীতে তিনি ধর্মীয় বিষয়ে গবেষণালব্দ লেখা লেখেন দৈনিক সমকাল, দৈনিক কালেরকন্ঠ, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক নয়াদিগন্ত, দৈনিক ইনকিলাবসহ জাতীয় দৈনিকের ধর্ম পাতায়৷

তিনি বর্তামানে দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের সাব এডিটর৷ সরাসরি আরবি থেকে অনুবাদ করেন হাদিস, তাফসির ও ইসলামি নানা বিষয়ের৷ আরবি পত্রপত্রিকা থেকে অনুবাদ করেন প্রবন্ধ নিবন্ধ ফিচার৷

বিগত চার বছর থেকে পবিত্র মসজিদে হারামের জুমার খুতবা অনুবাদ করেন সরাসরি আরবি থেকে যা দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশে নিয়মিত প্রকাশ হয়৷ আরবি থেকে অনূদিত প্রকাশিত বই রমজানের ত্রিশ আসর, বিভ্রান্তি ও ইসলামসহ আরও কিছু বই৷

তিনি বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী৷ সাবলীল ভাষায় অনুবাদ করেন উর্দু থেকেও৷ উর্দু থেকে অনূদিত প্রকাশিত বই মৃত্যু আসছে আপনি কি প্রস্তুত, জিকরে মাহমুদ, জীবন যেভাবে দামি হয়সহ আরও কিছু মূল্যবান বই৷

তিনি শুধু অনুবাদক নন, তার আছে মৌলিক রচনাও। গুগলে আলী হাসান তৈয়ব সার্চ করলে অসংখ্য লেখার লিংক উঠে আসে৷ ২০০১ সাল থেকে পৃথিবীতে সবচে বড় সাইট ইসলামহাউজ ডটকম- এ লেখক ও গবেষক পদে কর্মরত৷

আলী হাসান তৈয়ব লেখালেখিতে সম্পাদনার কাজেও দক্ষ৷ নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন মাসিক নয়া প্রভাতের, বিভাগীয় সম্পাদক ছিলেন মাসিক আর ইরশাদ ও পাক্ষিক মুক্ত আওয়াজে৷

তিনি কেন লিখেন? কী লিখেন? তিনি ইসলাম প্রচারে যা প্রয়োজন তাই লেখেন৷ মুসলিম উম্মাহর কথা লেখেন৷ লেখেন জীবন ও জগৎ নিয়ে৷ সাহিত্যে তো জীবনের গদ্য, জীবনের ছন্দ৷ তিনি সেই ছন্দ ও গদ্যে ছান্দসিক৷ গদ্যশিল্পী৷ ভাষাশৈলিতে জীবনশৈলির ছবি আঁকেন৷ লেখার নিজস্ব ভঙ্গিমা ও আঙ্গিত রয়েছে আলী হাসান তৈয়বের গদ্যে৷

ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতেও সবর তরুণ এ আলেম আলোচক৷ বিশুদ্ধ ভাবনায় শুদ্ধভাষায় তুলো ধরেন নানাপ্রসঙ্গ৷ ২০১৭ সালে সাহিত্য ও মিডিয়ায় অবদানের জন্য এশিয়ান রেডিও ঐশীস্বর সম্মাননা লাভ করেন৷ ২০০৫ সালে মাসিক রাহমানী পয়গাম সেরা নবীন লেখক সম্মাননা ক্রেস্ট পান৷ এই পুরস্কার গ্রহণ করেন বিপ্লবী আলেম শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. এর হাত থেকে৷

তিনি পাঠকের ভালোবাসা পান অবিরত, মুগ্ধকর ভালোবাসা৷ কাবার পথের পথিক নবীপ্রেমী আলী হাসান আল্লাহর ঘর কাবা জিয়ারত করেছেন৷ চলছেন রাহগির হয়ে মদিনার পথে পথে৷ তাঁর লেখায় মদিনার প্রতি বিশেষ টান৷

তিনি এক সময় ছড়া লিখতেন৷ গান গান দরাজকণ্ঠে আমি যদি আরব হতাম মদীনারই পথ… ৷ তিনি মাদরাসার মুহতামিম৷ মসজিদের খতীব৷ ওয়াজ মাহফিলে সুবক্তাও৷

তাকমিল ২০০৫ সালে৷ আরবি সাহিত্য মারকাজুল ইসলামীতে৷ আরবি ভাষা ও সাহিত্যের দিকপাল উস্তায শহীদুল্লাহ ফজলুল বারীর খাস শাগেরদ৷ মাদরাসা দারুর রাশাদ থেকে সাহিত্য ও সাংবাদিকতার পাঠগ্রহণ৷

১৯৮৩ সালে তৈয়ব আলী ও আলেয়া বেগমের ঘর আলোকিত করে এই আলোঝলমল পৃথিবীতে চোখ মেলেন ‘আলোর ভুবন ফুলেল জীবনের’ লেখক আলী হাসান৷

অনেকে তাকে তৈয়ব ভাই ডাকলেও তাঁর বাবার নাম তৈয়ব৷ তিনি ইবনে তৈয়ব, আলী হাসান তৈয়ব৷ বগুড়ার মালতি নগরে নিবাস হলেও দুই কন্যার নানার বাড়ি ময়মনসিংহে৷ শিল্প ও সাহিত্যের শহরে তার প্রিয়তামার নিবাস৷ এইসূত্রে তিনি লৌহিত্যের তীরে নদীর কাছে বার বার আসেন৷ জীবন তো বহতা নদীর মতোই৷ এই নদীতে ভাসমান ভালোবাসার সম্পান৷

আলী হাসান তৈয়বের প্রতি আমাদের ফুলেল ভালোবাসা৷

তিনি মুলত দাঈ৷ লেখেন দাওয়াহ চেতনা থেকে৷ উম্মাহর বৃহত্তর কল্যাণে তিনি উদারমানসিকতা লালন করেন৷ এই উদারতা শরিয়াহর সীমানায়৷ চেতনার চার দেয়ালের ভেতর এবং বাইরেও৷ এই উদারতা ইসলামের৷

আলোর ভুবন ফুলেল জীবন বইটি কিশোর তরুণদের জন্য লেখা৷ গল্পময়৷ হাদীসের আলোয় জীবনের ফুল ফোটানোর অভিপ্রায়ে লেখা৷ নির্মেদ গদ্যে কিশোরউপযোগী ভাষায় লেখা৷ এটি নির্মাণধর্মী সাহিত্যের প্রয়াস৷ অবক্ষয়ের এই সময়ে একজন অভিভাবক নিজের নয়নমনিদের হাতে তুলে দিতে পারেন আলোর ভুবন ফুলেল জীবন৷

এই জাতীয় বই জীবনকে আলোকময় করে, জীবন হয়ে ওঠে রজনীগন্ধা, বেলি, গোলাপ৷ বারোটি অধ্যায়ে নবীজীর অমর বানী হাদীসের আলোকসম্পাত করা হয়েছে এই রচনায়৷

আলোকময় জীবনগঠনে বইটি আলো দেবে৷ জীবন হবে ফুলেল, স্নিগ্ধ, সুগ্ধা৷ অভিজাত প্রকাশনী মাকতাবাতুল আযহার বইটি আলোর মুখ দেখিয়েছে৷ হাজির করেছে পাঠকের দুয়ারে৷ প্রথম মুদ্রণ শেষ হওয়ায় দ্বিতীয় মুদ্রণের কাজ শেষে আবার পাঠকের দরবারে আলোর ভুবন ফুলেল জীবন বইটি৷

পাঠকের জীবন হোক ফুলেল, আলোকময়৷ লেখক আলী হাসান তৈয়বের জীবন হোক হায়াতে তাইয়িবার প্রতীক৷

উম্মাহর কল্যাণে তার কলম হোক শাণিত৷

বাংলাদেশের বিপদে সর্বোচ্চ দানকারী যে ব্যক্তি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ