শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


মধ্যপ্রাচ্যফেরত নারী শ্রমিকের বর্ণনা : প্রথমে ছেলে, পরে বাপ ...

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নিহার মামদুহ
প্রতিবেদক

মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়া নারী শ্রমিকদের ৯৯ ভাগই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি।

একইভাবে তারা বঞ্চিত হয় প্রাপ্য মজুরি থেকেও।

মধ্যপ্রাচ্যফেরত নারী শ্রমিকদের উপর উপর চালানো জরিপে বারবার এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

গতকাল শনিবার ঢাকায় গণ-শুনানিতে এমন তথ্য আবারও উঠে আসলো সবার সামনে।

শুনানির আয়োজন করে বেসরকারি সংগঠন ওয়ান-বিলিয়ন রাইজিং বাংলাদেশ নামে একটি উদ্যোগের আয়োজনে এই গণশুনিানিতে নারী শ্রমিকদের কথা শোনেন বাংলাদেশের কয়েকজন সাবেক বিচারপতি এবং মানবাধিকার কর্মী, অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও শ্রমিক নেতারা ।

শুনানিতে একজন মধ্যপ্রাচ্যফেরত নারী শ্রমিক বলেন, তিনি বাংলাদেশে একটি হাসপাতালে ১২শ' টাকা বেতনে কাজ করতেন। সৌদি আরবে হাসপাতালে ভালো বেতনে কাজের জন্য পাঠানো হয় তাকে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তাকে একটি বাড়িতে কাজের জন্য নেয়া হয় এবং শিকার হতে হয় যৌন নির্যাতনের।

তার ভাষায় ‘প্রথমে আমাকে এয়ারপোর্ট থেকে গাড়িতে নিতে আসে দুই পুরুষ। দেখে ভয় পাই। পরে ওই বাড়িতে ঢুকে যখন এক মহিলা দেখি তখন মনে সাহস আসে। কিন্তু রাতে গোসল করায়ে আমারে পাতলা ফিনফিনে কাপড় পরতে দেয়, সেটা আমি পরতে না চাইলে মারধোর শুরু করে।’

‘এরপর আমার ঘরে প্রথমে আসে ছেলে, পরে আসে বাপ। তারপর আমারে জড়ায়ে ধরে নির্যাতন করে। বাধা দিতে গেলে আমারে মাইরা-ধইরা, কামড়াইয়া-চিমড়ায়া কিছু রাখে নাই।’

লাল কাপড় দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে মঞ্চে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন তিনি, নয়মাস এমন নির্যাতনের ফলে এই নারীর প্রজনন অঙ্গে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তা দীর্ঘ চিকিৎসার পরও ভালো হচ্ছে না।

‘আমার স্বামী নাই। আমার স্বামী থাকলে আমারে ঘরে উঠাইতা না। অনেক কষ্টে ছেলেরে নিয়া আছি।’

সৌদি আরব, জর্ডান, লেবানন বা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে কাজের জন্য যাওয়া নারীরা কেমন আছেন- এই বিষয়ে আয়োজিত এক গণ-শুনানিতে এভাবেই আরও অনেক ফিরে আসা নারী শ্রমিক যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্ন নির্যাতনের বর্ণনা দেন।

এ অনুষ্ঠানে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ছাড়া নারী শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে বিরোধিতা জানিয়েছে শ্রমিক মানবাধিকার কর্মী এবং অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।

সেখানে অভিবাসী নারী শ্রমিকদের ওপর বিদেশে নির্যাতনের বিষয়ে সরকারের আরও জোরালো পদক্ষেপ -এর দাবি উঠে আসে।

প্রত্যেকেই চড়া সুদে কিস্তিতে টাকা ধার নিয়ে বা বাড়ির টুকটাক জিনিস বিক্রি করে দালালকে টাকা দিয়ে বিদেশে গিয়েছিলেন। সে ২০/২৫ হাজার রোজগারের প্রলোভন দেখানো হয়েছিল তাদের।

গন-শুনানিতে প্রদান করা তথ্য অনুসারে ১৯৯১ সাল থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ৬ লাখ ৭৪ হাজার নারী শ্রমিক বিভিন্ন দেশে গিয়েছে। তার মধ্যে সাড়ে ৩ লাখ গিয়েছে গত ৩ বছরে। ।

মূলত ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করে দেয়ার পর বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের প্রতি নজর পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর।

সূত্র : বিবিসি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ