বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
খাদেম-ক্লিনার ও শিক্ষক নিয়োগ দেবে ‘গ্লোবাল এডুকেশন ইনস্টিটিউট’ স্বাধীন দেশে অবৈধ অস্ত্রধারী সংগঠন থাকবে না: র‍্যাব মহাপরিচালক  মার্চে ৫৫২ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৬৫, আহত ১২২৮ ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপ পুতিনের তেজগাঁও আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া বায়তুল আমান মাদরাসায় ভর্তি শুরু আগামীকাল   ইরানের হামলার জন্য নেতানিয়াহুই দায়ী: এরদোগান ঝালকাঠিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ১৪, ট্রাকচালক আটক ইসরায়েলে হামলার বিষয়ে যা বললেন ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি ঘুমন্ত স্বামীর গোপনাঙ্গ কেটে পালালেন স্ত্রী ইরান-ই’সরায়েল যুদ্ধের পরিস্থিতির আলোকে প্রস্তুতি নিতে মন্ত্রীদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে কি ভারতের দুই জমিয়ত?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাওলাদার জহিরুল ইসলাম
আওয়ার  ইসলাম

ভারতীয় মুসলমানদের সবচে প্রাচীন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠন ‘জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ’। ১৯১৯ সালে হজরত শায়খুল হিন্দ মাহমূদ হাসান দেওবন্দী রহ.-এর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় এই সংগঠন৷

শায়খুল আরব ওয়াল আজম হজরত সাইয়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানি রহ. ছিলেন তার একান্ত সহযোগী৷ সংগঠনটি ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা আন্দোলনে ঐতিহাসিক অবদান রাখে৷ স্বাধীনতার পর থেকে ভারতীয় মুসলমানদের যে কোনো সংকটে জমিয়ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে৷

মুসলমানদের আকিদা-বিশ্বাস, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা রক্ষা, শিক্ষা-দীক্ষা, জাতীয় পর্যায়ে মুসলিম নেতৃত্ব গঠনে ভূমিকা, মুসলিম যুবকদের অযথা রাষ্ট্রীয় হয়রানি থেকে রক্ষা, মুসলিম নারীদের অধিকার আদায়সহ বিভিন্ন ইস্যুতে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে আসছে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ৷

প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ ৯৯ বছর পর্যন্ত নেতৃত্বের পরিবর্তন আসলেও দলটির মাঝে কোনো বিভক্তি বা ফাটল সৃষ্টি হয়নি৷ কিন্তু ২০০৮ সালে এসে শত বছরের ঐক্যের বন্ধনে চির ধরে৷

তখনকার জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের প্রেসিডেন্ট মাওলানা সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানি ও সেক্রেটারি জেনারেল, মাওলানা মাহমুদ আসআদ মাদানি’র চিন্তায় পার্থক্য দেখা দেয়৷ দু’জনের দর্শন দু’দিকে মোড় নিতে থাকে৷ শেষ পর্যন্ত জমিয়ত দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়৷ দেশের উলামা-তলাবাও দু’গ্রুপে বিভক্ত হয়৷ আম জনতা অনেকটা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে৷

উভয় জমিয়তই ইসলাম, দেশ ও মানবতার জন্য কাজ করে চলে পাল্লা দিয়ে৷ ২০১৫ সালের রমজানে ভারতীয় মুসলমানগণ একটি খুশির সংবাদ শুনতে পান৷ ‘উভয় জমিয়ত নিজেদের চিন্তার পার্থক্য ভুলে গিয়ে দেশ ও জাতির জন্য এক সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছে৷

ঈদের পর দিল্লির হেড অফিসে জমিয়তের (দু’দলেরই) নেতৃবৃন্দ গোল টেবিল বৈঠকে মিলিত হন৷ পরস্পরের মতপার্থক্যের জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন৷ তবে কর্ম-কৌশল নির্ধারণে কিছুটা মতপার্থক্য রয়ে যায়৷ ফলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আর জনগণ শুনতে পায় না৷

যদিও উভয় জমিয়ত নয়া দিল্লির আইটিওতে অবস্থিত একি কেন্দ্রীয় অফিসে যার যার মতো কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমাবেশে সবাই একই মঞ্চে উপস্থিত হচ্ছিলেন৷

কয়েকদিন আগে দিল্লির ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত জমিয়তের(এম) শান্তি সম্মেলনেও দুই মাদানিকে এই মঞ্চে দেখা গেছে৷ ব্যক্তি পর্যায়েও তাদের সুসম্পর্ক বজায় ছিলো৷


সম্প্রতি ভারতের প্রভাবশালী উর্দু দৈনিক ‘রোজনামা খবর’ তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, উলামা-জনতার বহু দিনের আশা আকাঙ্খার প্রতি লক্ষ্য রেখে খুব শিগ্গিরই দুই জমিয়তের মাঝে ঐক্য স্থাপিত হচ্ছে৷

গত কয়েকদিন আগে জমিয়তের একাংশের প্রধান মাওলানা সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানি জমিয়তের অপরাংশ মাওলানা মাহমুদ আসআদ মাদানি বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন৷

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা(জমিয়ত-এম) জানিয়েছেন, আরশাদ মাদানি তার চিঠিতে সবাইকে এক সঙ্গে ইসলাম, দেশ ও মানবতার সেবায় কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য যেহেতু এক ও অভিন্ন তাই পৃথকভাবে নয় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে সবার জন্যই কল্যাণপ্রসূ হবে৷ এবং আমরা এসঙ্গে জমিয়তের শত বার্ষিকি উদযাপন করতে চাই৷’

ওই নেতা বলেন, মাওলানা আরশাদ মাদানির চিঠি গত ২৭অক্টোবর জমিয়তের(এম) ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে পর্যালোচনা করা হয়েছে৷ এতে অধিকংশ নেতা ঐক্যের পক্ষে মত দিয়েছেন৷ এবং এ বিষয়ে খুব শিগ্গরই উভয় জমিয়তের নেতৃবৃন্দ আলোচনায় মিলিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে৷

মাওলানা আরশাদ মাদানি বর্তমান ভারতে অত্যন্ত সম্মানের ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত৷ শুধু মুসলিম নেতারাই নন অমুসলিম ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতারাও তাকে সম্মান করে থাকেন৷ দারুল উলুম দেওবন্দ ও দেওবন্দ এলাকায়ও তার যথেষ্ট কদর রয়েছে৷

অপরদিকে মাওলানা মাহমুদ মাদানিও বর্তমান ভারতে বিচক্ষণ ও দূরদর্শী আলেম হিসেবে ব্যাপক সমাদৃত৷ বিশেষত মিডিয়া জগতে তার প্রভাব সবচে’ বেশি৷ ক’মাস আগে তিনি উলামাদের একটি প্রতিনিধি দলসহ মুসলমানদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণ বিষয়ে  ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে সাক্ষাতও করেছেন৷

এছাড়া যখনই বিশ্বের ৫০০ বা ১০০ প্রভাবশালী মুসলিম নেতার তালিকা প্রকাশ করা হয় সেখানেও তার নাম জ্বল জ্বল করতে দেখা যায়৷

সব মিলিয়ে ভারতীয় উলামা জনতা ও দুই জমিয়ত কর্মী সমর্থকদের এখন একটিই আশা যে, এতো বড় মানুষ আমাদেরকে নিরাশ করবেন না৷ খুব শীঘ্রই উভয় জমিয়ত নেতৃবৃন্দ একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে ইসলাম, দেশ ও মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাবে৷

সূত্র: উর্দু পয়েন্ট


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ