শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


সম্প্রীতি রক্ষার দায় শুধু মুসলমানদের একার হবে কেন, সংখ্যালঘুদেরও থাকতে হবে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা মুনির আহমদ
আলেম, লেখক

গত কয়েক বছর ধরে ইসলাম ধর্ম অবমাননার মতো জঘন্য অপকর্মের সাথে ধারাবাহিকভাবে সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীদের নাম আসছে। ইসলাম অবমাননার এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কয়েকবার সাম্প্রদায়িক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে। ইসলামী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রশাসনের (বিলম্বিত) কড়া পদক্ষেপের কারণে সংঘাত এড়ানো গেছে।

এসব ঘটনায় স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে আলেম-ওলামা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক সংঘাতে জড়িয়ে না পড়তে এবং সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষায় সযত্ন ভূমিকা রাখতে নানা কর্মসূচি ও প্রকাশ্য বক্তব্য বার বার দিয়ে আসলেও রহস্যজনক বিষয় হচ্ছে, কোন হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতাকে তাদের স্বধর্মীয় লোকজনকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার মতো জঘন্য অপকর্মে যেন কেউ না জড়ায়, সে জন্য কোন হুঁশিয়ারী ও সতর্কতামূলক বক্তব্য দিতে দেখা যায় না।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ও জান-মালের সার্বিক নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকারের প্রতি দলমত নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল মুসলমান শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য সংখ্যালঘুদেরও তো দায়-দায়িত্ব রয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মমতের প্রতি অবমাননামূলক বক্তব্য প্রদান ও উস্কানীমূলক আচরণ তো কোনভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য সহায়ক হতে পারে না।

সংখ্যালঘু নেতাদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাতে চাই, তারা যেন প্রকাশ্যে বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে স্বধর্মের লোকজনের প্রতি জোরালোভাবে এমন আহবান জানান যে, পবিত্র ইসলাম ধর্ম নিয়ে এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি নিয়ে কোন মুসলমানের প্রতি নেতিবাচক বা অবমাননাকর বক্তব্য, আচরণ ও কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের দূরে রাখে।

এরপরও কোথাও সংখ্যালঘু কর্তৃক ইসলাম অবমাননার মতো কোন ন্যাক্কারজনক ঘটনা যদি ঘটে যায়, তড়িৎ গতিতে যেন সাংখ্যালঘুরা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নিজেরাই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

আর প্রশাসনের প্রতিও আহবান জানাব, অনুগ্রহ করে দেশের, সমাজের ও আন্ত:সাম্প্রদায়িক শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে ধর্ম অবমাননার মতো কোন ঘটনার অভিযোগ শোনা গেলে তড়িৎ গতিতে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে যেন কোনরূপ গড়িমসি বা কালক্ষেপণ করা না হয়।

যার যার অবস্থান থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ এবং রাজনৈতিক দল ও প্রশাসন সজাগ ও সতর্ক থাকলে সুযোগ সন্ধানী কোন অপশক্তি এমন অনাকাঙ্খিত সংকটের উদ্ভব ঘটিয়ে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলায় কোনরূপ বিঘ্ন ঘটাতে পারবে না।

সবশেষে আবারো বলবো, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রত্যাশিত ফলাফলের জন্য সকল দায়-দায়িত্ব ইসলামী নেতৃবৃন্দ ও মুসলমানদের ঘাড়ে এককভাবে না চাপিয়ে সংখ্যালঘু জনগণ এবং নেতৃবৃন্দকেও শামিল করতে হবে। আমি পূর্ণ আশাবাদি, ইনশাআল্লাহ এতে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে।

সংখ্যালঘুদের বেপরোয়া আচরণ করতে ছেড়ে দিয়ে শুধু মুসলমানদের ঘাড়েই সব দায়িত্ব চাপানোর চেষ্টা ফ্যাসিবাদি আচরণ ছাড়া আর কিছু নয়।

বাংলাদেশের তিন দিকে ঘিরে থাকা বৃহৎ প্রতিবেশী দেশটির প্রতি লক্ষ্য করুন, দেশটিতে সম্প্রীতি রক্ষার দায়িত্ব এককভাবে সংখ্যালঘুদের ঘাড়েই দিয়ে রেখেছে শত শত বছর ধরে। কিন্তু আমরা তো সেটাও চাচ্ছি না। আমরা চাই, সম্প্রীতির জন্য উভয় সম্প্রদায়ই সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে ভূমিকা রাখুক।

সাবেক নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক মুঈনুল ইসলাম ও সাবেক প্রেস সচিব আল্লামা শাহ আমদ শফী


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ