জুবায়ের হুসাইন ফয়জী
খতিব ও শিক্ষক
দারুল উলুম হাটহাজারীর প্রাক্তন শিক্ষক, অজস্র আলেমের উস্তাদ মাওলানা সোলায়মান আরমান ওরফে কাতেব সাহেব রহ. ছিলেন উঁচু মাপের একজন আলেম, উর্দু-ফার্সি কবি ও শাইখুল কুত্তাব। তাঁর চলাফেরায় ছিলো আভিজাত্যের ছাপ। সব সময় পরিপাটি থাকতে পছন্দ করতেন। ইস্ত্রী ছাড়া টুপিখানাও পরতেননা।
হুজুরের বিশ্রামাগারের চারপাশেই ছিলো আয়না সাঁটানো। পাঞ্জবী-পাজামা-টুপি পরেই যেতেন আয়নার সামনে। রসিকতায় এমন উস্তাদ পাওয়া ভার। হুজুর ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী।
হাটহাজারী মাদরাসার শাহী গেইটটি সবে মাত্র নির্মাণ করা হয়েছে। তৎকালীন মুহতামিম মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ সাহেব রহ. কাতেব সাহেব রহ. -কে লক্ষ করে বললেন, গেইট তো হলো কিন্তু এর শোভা বর্ধন করবে কে? কাতেব সাহেব হুজুর নিরব রইলেন।
পরদিন সকালে দারুল উলুম হাটহাজারীর শাহী গেইটে লিখে দিলেন تسر الناظرين (দৃষ্টি দানকারীদের হৃদয় প্রফুল্ল করে দিবে) শিক্ষক-ছাত্র সবাই কাতেব সাহেব হুজুরকে জিজ্ঞাসা করলেন, কুরআনের এতো আয়াত থাকতে সুরা বাকারার ৬৯ নং আয়াতের শেষাংশ কেন লিখলেন ?
হুজুর বললেন, দুটি কারণে লিখেছি, এক. এই আয়াতের অর্থের দিকে বিবেচনা করে লিখেছি, এতে বলা হয়েছে; দৃষ্টি দানকারীদের হৃদয় প্রফুল্ল করে দিবে। ইনশাআল্লাহ অবশ্যই এই মাদরাসার ছাত্রদের দেখে মুমিনদের হৃদয় প্রফুল্ল হবে।
দুই. আরবী প্রতিটি বর্ণের একটি নির্দিষ্ট মান রয়েছে। এই تسر الناظرين বাক্যে যেসব বর্ণ রয়েছে তার সমষ্টি যোগ করলে এই মাদরাসার প্রতিষ্ঠার সাল বের হবে। যেমন : ت= ৪০০ س= ৬০ ر= ২০০ ا= ১ ل৩০ ن= ৫০ ظ= ৯০০ ر= ২০০ ي= ১০ ن= ৫০
মোট যোগফল হয় ১৯০১ অর্থাৎ এ মাদরাসাটির প্রতিষ্ঠার বছর ১৯০১ ঈসায়ী সনে। আজ হুজুর গত হলেন। কিন্তু তাঁর এই কীর্তি থেকে যাবে যুগ থেকে যুগান্তরে।
লেখক: মাওলানা সোলায়মান আরমান রহ. এর ছাত্র ও মানিকগঞ্জ পুলিশ লাইন মসজিদের ইমাম ও খতীব
হাটহাজারী মাদরাসার প্রবীণ মুহাদ্দিস মাওলানা সুলাইমান আরমানের ইন্তেকাল
কেমন ছিলেন প্রচার বিমুখ আল্লামা কাতেব রহ.?