শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


মুসলিমদের নির্মিত হওয়ায় ভারতের পর্যটন তালিকা থেকে তাজমহল বাদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মাদ শোয়াইব : উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের পর্যটন বিভাগের নতুন এক পুস্তিকা থেকে চিরন্তন প্রেমের এক ঐতিহাসিক নিদর্শন ও ভারতের পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ তাজমহলকে বাদ দেয়া হয়েছে। পর্যটন পুস্তিকাতে বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম তাজমহল নিয়ে কোনো কথা না থাকায় তা নিয়ে বিস্ময় ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

সাংবাদিক, রাজনীতিক এবং সাধারণ মানুষের অনেকে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতায় আসার ছয়মাস পর এ পুস্তিকা প্রকাশ করা হল।

এ পুস্তিকায় রাজ্যের চলতি এবং আসন্ন বেশ কয়েকটি পর্যটন প্রকল্পের কথা ছাড়াও, বেশকিছু বিখ্যাত পর্যটন স্পটের উল্লেখ রয়েছে। এসব জায়গার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ গোরখপুর শহরে যে মন্দিরের প্রধান পুরোহিত, সেই মন্দিরের কথা থাকলেও রাজ্যের সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যটন স্থাপনা তাজমহলের কোনো উল্লেখই নেই।

সপ্তদশ শতাব্দীতে মোঘল সম্রাট শাজাহান তার স্ত্রীর স্মরণে তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাজমহল দেখভালের দিক অবহেলার শিকার হচ্ছে। আগ্রার যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত এই মোঘল স্থাপত্যটির সাদা মার্বেলগুলো বায়ু দূষণের কারণে ধীরে ধীরে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন অব্যবস্থার কারণে তাজমহলের পর্যটক সংখ্যাও আগের মতো নেই।

ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, বর্তমানে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ভারতের অনেকেই মনে করেন, উত্তরপ্রদেশের হিন্দু জাতীয়বাদী দল বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের সরকার বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ তাজমহলকে আর্থিক সহযোগিতা ও সমর্থন অগ্রাহ্য করছে। কারণ এটি মুসলিমদের নির্মিত।

তাজমহল সম্পর্কে যোগী আদিত্যনাথের চিন্তা-ভাবনা খুবই স্পষ্ট। চলতি বছরের জুন মাসে তিনি বলেন, ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে তাজমহলের কোনো সম্পর্ক নেই।

আগামী বছরের জন্য ভারতের অন্যতম বৃহত্তম পর্যটন কেন্দ্র তাজমহলের রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে কোনো তহবিল বরাদ্দ করা হয়নি এবং অবশেষে গত সপ্তাহে রাজ্যের সরকারি পর্যটন পুস্তিকা থেকে তাজমহলকে বাদই দেয়া হয়েছে।

সরকারের এ পদক্ষেপে ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু শিংভি তাজমহলহীন পর্যটন পুস্তিকাকে হ্যামলেটহীন হ্যামলেটের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

তিনি বলেন, ‘এটা পর্যটন পুস্তিকা আর সেটা থেকেই তাজমহলকেই বাদ দেয়া হয়েছে। এক অর্থে এটা একটা কৌতুক এবং স্পষ্ট ধর্মীয় পক্ষপাতিত্বের ইঙ্গিত।’

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো প্রশ্ন তুলেছে, মুসলিমদের নির্মিত বলে তাজমহলের প্রতি কি ভারত সরকার অবহেলা করছে। প্রেরণা বক্সি নামে একজন টুইটারে লিখেছেন, তাজমহল এখন আর পর্যটন গন্তব্য নয়। ইউনেস্কোর এখন উচিত গোরখপুরে যোগী আদিত্যনাথের গোশালাকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করা।

ধ্রুব রথি নামে আরেকজন লিখেছেন, যোগী সরকার আমাদের দেশের ঐতিহ্যকে অসম্মান করেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ নিয়ে এখন পরিহাস চলবে। মাধু পূর্ণিমা কিশওয়ার নামে একজন লিখেছেন, তাজমহল নিয়ে যোগী আদিত্যনাথের এই বিতর্ক তৈরি করা নিতান্তই আহাম্মকি।

তাজমহলের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
ভারতের আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাঁর স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম যিনি মুমতাজ মহল নামে পরিচিত, তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন। সৌধটি নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে যা সম্পূর্ণ হয়েছিল প্রায় ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে।

সৌধটির নকশা কে করেছিলেন এ প্রশ্নে অনেক বিতর্ক থাকলেও, এ পরিষ্কার যে শিল্প-নৈপুণ্যসম্পন্ন একদল ৩ ও কারিগর সৌধটি নির্মাণ করেছিলেন যারা উস্তাদ আহমেদ লাহুরীর সাথে ছিলেন, যিনি তাজমহলের মূল নকশাকারী হওয়ার প্রার্থিতায় এগিয়ে আছেন।

তাজমহলকে (কখনও শুধু তাজ নামে ডাকা হয়) মুঘল স্থাপত্যশৈলীর একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয়, যার নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে।

যদিও সাদা মার্বেলের গম্বুজাকৃতি রাজকীয় সমাধিটিই বেশি সমাদৃত, তাজমহল আসলে সামগ্রিকভাবে একটি জটিল অখণ্ড স্থাপত্য। এটি ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম তাজমহল।


সম্পর্কিত খবর