শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


সব সূচকে সুদি ব্যাংকের চেয়ে ইসলামি ব্যাংকগুলো এগিয়ে; যে কারণে এ উন্নতি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবরার আবদুল্লাহ : বাংলাদেশের ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো সুদি ব্যাংকগুলোর চেয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

শুধু ব্যবসা নয়, আমানত, ঋণ বিতরণ, মুনাফা প্রবৃদ্ধিসহ ব্যাংকিং খাতের প্রায় সবকটি সূচকে এসব ব্যাংকের অংশ বেড়েছে।

চলতি বছরের জুন প্রান্তিকের তথ্য নিয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এতে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের জুনে ব্যাংক খাতে মোট আমানতের ২২ দশমিক ১০ শতাংশ ছিল ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর। চলতি বছরের জুনে এ আমানতের অংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৭২ শতাংশে। এছাড়া শাখা বৃদ্ধি ও ঋণ বিতরণেও ইসলামি ব্যাংকগুলোর অংশ বেড়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত মোট ঋণের ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ বিতরণ করে ইসলামি ব্যাংকগুলো। চলতি বছরের জুনে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশে। এছাড়া ব্যাংকগুলোর মোট শাখার ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ এখন ইসলামি ব্যাংকিং করছে। গত বছর জুনে এ হার ছিল ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ ঋণ ও আমানতের মতো শাখার ক্ষেত্রেও ইসলামি ব্যাংকগুলোর অংশীদারিত্বও বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রেমিট্যান্স আহরণে ৩০ দশমিক ৮৮ শতাংশই ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর অবদান। এ ব্যাংকগুলোতে গত এক বছরে নতুন করে কর্মসংস্থান হয়েছে এক হাজার ৪৯২ জনের। বর্তমানে দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে আটটি পূর্ণাঙ্গ ধারার ইসলামি ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুনে ব্যাংকগুলোর কাছে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল আট লাখ ৭৭ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের আমানত এক লাখ ৯৯ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময় পর্যন্ত ইসলামি ব্যাংকগুলোতে আমানত ছিল এক লাখ ৭৫ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা।

বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকসমূহের সাফল্যের কারণ জানতে চাইলে সেন্ট্রাল শরীয়াহ বোর্ড ফর ইসলামি ব্যাংকস অব বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল এ কিউ এম শফিউল্লাহ আরিফ আওয়ার ইসলামকে বলেন, ইসলামি ব্যাংকসমূহ মানুষের কল্যাণে কাজ করে বলেই মানুষ ইসলামি ব্যাংকসমূহের প্রতি আস্থাশীল হয়ে উঠছেন।

তিনি বলেন, ইসলামি ব্যাংক সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে। রিস্ক মিনিমাইজ করে কাজ করে, যেনো অ্যাসেট বা ব্যাক্ট বাই অ্যাসেট হয়। ইসলামি ব্যাংক রিয়েল ইকোনমিক ট্রানজেকশন করে। তাছাড়া সব ধর্মে সুদ নিষিদ্ধ। মানুষ সুদমুক্ত থাকতে চায়।

এদিকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সব ব্যাংক মিলে ৭ লাখ ৭২ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে ইসলামি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময় পর্যন্ত বিতরণ করা মোট ঋণের মধ্যে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের অংশ ছিল ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেশব্যাপী সব ব্যাংকের শাখার সংখ্যা ৯ হাজার ৭২০টি। এর মধ্যে ইসলামি ধারার ব্যাংকের শাখা আছে এক হাজার ১১২টি। যা মোট শাখার ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এ

সব শাখার মধ্যে পুরোদমে ইসলামি ধারার ব্যাংকিং আছে এক হাজার ৬৮টি। এর বাইরে প্রচলিত ধারার বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ১৯টি ইসলামি ব্যাংকিং শাখা রয়েছে। আর ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডো খুলে কাজ করছে ২৫টি শাখা।

জনাব শফিউল্লাহ আরিফ মনে করেন এ জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে। তার মতে, অগ্রগতির এ পরিসংখ্যান ইসলামি ব্যাংকের ব্যাপারে মানুষ আগ্রহ অবশ্যই বাড়াবে। আমি বলবো, শুধু দেশে নয়। বরং সারা বিশ্বে ইসলামি ব্যাংক এখন আলোচনার কেন্দ্রকিন্দু। বিশ্ব ব্যাংক থেকে শুরু করে পৃথিবীর সব বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামি ব্যাংকিংয়ের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ধারার কার্যক্রম চালানো ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড।


সম্পর্কিত খবর