শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


যেসব হিন্দু ধর্মগুরুরা যৌন অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জাকারিয়া হারুন :
উত্তর ভারতের কথিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের দায়ে গত শুক্রবার ২০ বছরের কারাদ-াদেশ দেন সিবিআই আদালত। ১৫ বছর আগের ধর্ষণের ওই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর রাম রহিমের সমর্থকেরা পাঁচটি রাজ্যে তা-ব শুরু করেন। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে ৩১ জন নিহত ও ২৫০ জন আহত হন। তবে দেশটিতে এমন কর্মকা-ে রাম রহিম প্রথম নন। তাঁর আগেও অনেক ‘ধর্মগুরু’ এমন কা- ঘটিয়েছেন। তারই কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হলো।

সারথি বাবা

নবম শ্রেণিতে ফেল করার পর পান বিক্রি করতেন ওডিশার সন্তোষ রাউল। পরে কেন্দ্রপাড়া জেলায় তিনি সারথি বাবা পরিচয় দিয়ে ধর্মগুরু হন। তাঁর কথা ও কাজ দেখে অল্প দিনেই লাখো ভক্ত তৈরি হয়। তাঁর পায়ে মধু ঢেলে দিলে আশ্রমে থাকা একটি সিমেন্টের গরু দুধ দেয়Ñএই দৃশ্য দেখে অনেকেই সারথি বাবার ভক্ত হয়ে যান। কিন্তু পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে দেখতে পায়, আশ্রমের ওই সিমেন্টের গরুর সঙ্গে গোপনে একটি পাইপ লাগানো আছে, যা দিয়ে দুধ আসে।

২০১৫ সালের আগস্টে একটি টিভি চ্যানেলে দেখানো হয়, নিরামিষভোজী সারথি বাবা হায়দরাবাদের একটি হোটেলে এমবিবিএস পড়ুয়া এক তরুণীর সঙ্গে হুইস্কি ও চিকেন তন্দুরি খাচ্ছেন। এই ভিডিও প্রচার করায় সে সময় কেন্দ্রপাড়া শহরে ভক্তদের সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। গ্রেপ্তার করা হয় সারথিকে। পরে বেশ কিছু নারী অভিযোগ করেন, সারথি বাবা তাঁদের যৌন নির্যাতন করেছেন। জালিয়াতি ফাঁস হওয়া এই বাবা এখনো কারাগারে আছেন।

লাল সাই

মধ্যপ্রদেশের লাল বুলচান্দনি ধর্মগুরু লাল সাই নামে জনপ্রিয়তা পান। ভোপালের বইরাগড়ে তিনি আশ্রম গড়ে তোলেন। সেখানে রাজনীতি করাসহ অসংখ্য মানুষ তাঁর ভক্ত-অনুসারী হন। ২০০৮ সালের অক্টোবরে এক কিশোরী ভক্তকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এতে তাঁর জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ২০০৯ সালে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন তিনি। এখনো তিনি আশ্রমেই থাকেন, তবে বেশির ভাগ অনুসারী তাঁকে ছেড়ে চলে গেছেন।

গুলজার পীর

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে গুলজার আহমেদ ভাট ওরফে গুলজার পীর নিজেকে ধর্মগুরু দাবি করেছিলেন। কাশ্মীরের বুদগাম জেলায় তাঁর ঘাঁটি। ২০১৩ সালে সেখানে পড়তে আসা চার ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির পর ধর্ষণের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালত তাঁকে সাজা দেন। কথিত এই ধর্মগুরু এতই প্রভাবশালী ছিলেন যে, রাজ্য সরকার আদালতের আদেশের ওপর জম্মু ও কাশ্মীর হাইকোর্টে আপিল করে। আদালত তা খারিজ করে দেন। গুলজার এখনো কারাভোগ করছেন।

স্বামী নিত্যানন্দ

২০১০ সালে বেঙ্গালুরুর আশ্রমে এক অভিনেত্রীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ফাঁস হয় কথিত এই ধর্মগুরুর। এই ভিডিওচিত্র প্রচার হওয়ার পর আত্মগোপনে যান নিত্যানন্দ। মামলা হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। পরে হিমাচল প্রদেশ থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

স্বামী গঙ্গেশানন্দ

স্বামী গঙ্গেশানন্দ ওরফে হরি স্বামী একজন ‘স্বঘোষিত বাবা’। কেরালার তিরুঅনন্তপুরমে রোগ সারিয়ে তোলার নামে গঙ্গেশানন্দ প্রায় এক ভক্তের বাড়িতে যেতেন। ওই বাড়ির এক তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা করায় তাঁর যৌনাঙ্গ কেটে নিয়েছেন আইনের এক ছাত্রী। ওই তরুণীর অভিযোগ, গত আট বছরে বিভিন্ন সময় হরি স্বামী তাঁকে ধর্ষণ করেছেন। তাঁর যখন ১৬ বছর বয়স, তখনই প্রথমবার এই স্বঘোষিত গুরুর ধর্ষণের শিকার হতে হয় তাঁকে।

 

আশারাম বাপু

১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে ২০১৩ সালে গ্রেপ্তার হন আধ্যাত্মিক গুরু আশারাম বাপু। তিনি দাবি করেছিলেন, যৌন নির্যাতন করার মতো শারীরিকভাবে সক্ষম নন তিনি। তবে পরীক্ষায় তাঁর শারীরিক সক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ৭২ বছর বয়সী গুরু আশারাম একটি আশ্রম পরিচালনা করেন। তাঁর আশ্রমের আওতায় দেশ-বিদেশে ৩৫০টি আধ্যাত্মিক আশ্রম রয়েছে। ওই বছরের গত ১৫ আগস্ট রাজস্থান রাজ্যের যোধপুরে আশারামের আশ্রমে উপাসনায় ওই কিশোরী এবং তার মা-বাবা অংশ নেন। গুরু আশারাম একপর্যায়ে মেয়েটিকে কৌশলে তাঁর কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করেন। ঘটনার দুই দিন পর কিশোরী তার মা-বাবাকে বিষয়টি বলে। পরে আশারামকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সন্ত রামপাল

সন্ত রামপাল হরিয়ানায় সৎলোক আশ্রম গড়ে তুলেছিলেন। সেখানকার ধর্মগুরু ছিলেন তিনি। অজ¯্র ভক্ত-অনুসারী ছিল তাঁর। কিন্তু ২০১৪ সালে নারী ভক্তকে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে ৬৩ বছর বয়সী রামপালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

প্রেমানন্দ

তামিলনাড়ুর স্বঘোষিত ধর্মগুরু স্বামী প্রেমানন্দ। তিরুচিরাপল্লিতে তাঁর আশ্রম। ১৩ নারী ভক্তকে ধর্ষণের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। প্রেমানন্দের ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ১৩ নারীকে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

 

স্বামী ভীমানন্দজি মহারাজ

উত্তর প্রদেশের চিত্রকূটের স্বঘোষিত ধর্মগুরু স্বামী ভীমানন্দজি মহারাজ। যৌন ব্যবসা চালানোর দায়ে ১৯৯৭ সালে তাঁকে লাজপত নগর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তিনি ছাড়া পান। গত ১২ বছরে তিনি কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

স্বামী স্বদাচারী

ভারতের প্রভাশালী ধর্মগুরুদের মধ্যে স্বামী স্বদাচারী একজন। তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পূজা-অর্চনা করতেন। তবে যৌন পল্লি গড়ে তোলার দায়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখনো কারাগারে আছেন।

বাবা পরমানন্দ

আসল নাম রাম শংকর তিওয়ারি। স্বঘোষিত এই ধর্মগুরু বাবা প্রেমানন্দ মহারাজ ওরফে শক্তি বাবা ওরফে তান্ত্রিক বাবা হিসেবে পরিচিতি পান। উত্তর প্রদেশে চিকিৎসার নাম করে নারীদের যৌন নির্যাতনের পর তা ভিডিও করে প্রতারণা করতেন তিনি। এ কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর আশ্রমে অভিযান চালিয়ে পর্নো সিডি, নারীদের অশালীন ভিডিও জব্দ করেছে পুলিশ।

বালা সাই বাবা

ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের স্বঘোষিত ধর্মগুরু বালা সাই বাবা। অনন্তপুর জেলায় সত্য সাইর প্রশান্তি নিলায়ম নামে একটি আশ্রম আছে ৫৭ বছর বয়সী এই ব্যক্তির। দেশ-বিদেশে তাঁর লাখো ভক্ত-অনুসারী আছে। ধারণা করা হয়, গত তিন দশকে অনুসারীদের দানে তিনি এখন শত কোটি টাকার মালিক। তবে অবৈধভাবে জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে কথিত এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া চেক জালিয়াতির মামলাও রয়েছে। কয়েক বছর আগে তাঁর আশ্রম থেকে অনাদায়ি সাত কোটি রুপি উদ্ধার করা হয়েছিল।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, আনন্দবাজার, দ্য হিন্দু, ইন্ডিয়া টুডে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ