শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ালে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা অনেক বাড়বে আলেমদের

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মোহাম্মদ আলী। একজন আলেম ও সমাজসেবক। জাতির দুযোগ ও দুর্দিনে তিনি হাজির হন অসহায় মানুষের পাশে।চেষ্টা করেন নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু করার। মানুষ ও মানবতার সেবায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘খেদমতে খলক ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সেবা সংস্থা। এবারের বন্যায়ও রয়েছে তার কিছু প্রস্তুতি ও উদ্যোগ।

এবারের উদ্যোগ ও আলেমদের সেবামূলক কাযক্রমে অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে কথা বলেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টি ফর ডটকমের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আতাউর রহমান খসরু

আওয়ার ইসলাম : সারা দেশে ভয়াবহ বন্যা চলছে। দেশের এমন ক্রান্তিকালে আলেমদের করণীয় কী?

মুফতি মোহাম্মদ আলী : যখন দেশে কোনো দুযোগ হয় তখন সব মানুষের নৈতিক দায়িত্ব দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এখানে আলেম ও সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এটা নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব মানুষ হিসেবে।

তবে হ্যা, আলেমগণ যেহেতু নবীর উত্তরসূরী, মুসলিম সমাজের নেতা। তাই তাদের দায়িত্ব অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই কোনো সন্দেহ নেই।

আওয়ার ইসলাম : আপনার কি মনে হচ্ছে তারা সে দায়িত্ব পালন করছেন?

মুফতি মোহাম্মদ আলী : পালন করছেন সে দাবি আমি করবো না। তবে এটাও তো ঠিক অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবার আলেমগণ অনেক বেশি তৎপর। এবার অনেকেই ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত উদ্যোগে দুর্গত মানুষকে সাহায্য করছে।

আওয়ার ইসলাম : হ্যা, এবার আলেমদের উদ্যোগ ও তৎপরতা অন্যবারের তুলনায় বেশি। তাদের এই তৎপরতাকে কিভাবে মূল্যায়ন করেন?

মুফতি মোহাম্মদ আলী : যে কোনো ভালো কাজই অভিনন্দনযোগ্য। আর যখন তা নিজের স্বগোত্রীয় কেউ করেন তখন তা আনন্দেরও বটে। আমি আলেমদের এই সচেতনাতে অভিনন্দন জানাই।

তবে এটা পযাপ্ত মনে করি না। আমি মনে করি, আলেমদের আরও অনেক বেশি তৎপর হওয়া উচিৎ। কারণ মানবসেবার বড় একটা সুযোগ আমাদের সামনে এসেছে। এ সুযোগ কাজে লাগালে ইসলামের সেবা করারও অনেক সুযোগ হবে।

এছাড়াও ইসলাম বিদ্বেষী একটি শ্রেণি বিদেশ থেকে শত শত কোটি টাকা এনে মানুষের মধ্যে বিতরণ করছে এবং তাদেরকে ইসলাম বিমুখ করার চেষ্টা করছে। আলেমগণ মানব সেবায় উদ্যোগী হলে তাদের অপতৎপরতা কমবে এবং মুসলমানের ঈমান রক্ষা পাবে।

আওয়ার ইসলাম : আলেমদের সেবামূলক তৎপরতা বৃদ্ধির কারণ কী সচেতনতা না আর্থিক সামর্থ্য লাভ?

মুফতি মোহাম্মদ আলী : দুটোই। আলেমগণ সচেতনও হয়েছেন এবং আল হামদুলিল্লাহ! তাদের সামর্থ্যও বেড়েছে।

আওয়ার ইসলাম : আপনি বলছিলেন, আলেমদের মানব সেবা করার সুযোগ রয়েছে। সেটা কিভাবে? যেখানে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের সাহায্য ছাড়া চলতে পারে না?

মুফতি মোহাম্মদ আলী : দেখেন, আমি মানুষকে দিবো এর অর্থ কিন্তু আমার পকেট থেকে দিবো তা নয়। আমি নিজের পকেট থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী দিবো এবং যারা আমার কথা শোনে, আমাকে বিশ্বাস করে তাদের থেকে নিয়েও দিবো।

বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ মাদরাসা মানুষের সহযোগিতায় চলছে। শত শত কোটি টাকা মানুষ বিশ্বাস করে আলেমদের হাতে দিচ্ছেন। তারা যদি মাদরাসার খরচ বাবদ টাকা দিতে পারেন, তাহলে মানবসেবার জন্য বললে কি তারা দিবেন না? অবশ্যই দিবেন। বরং আলেম সমাজের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আরও উন্নত হবে। তারা বুঝবে, আলেমগণ মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেন।

আওয়ার ইসলাম : আপনার ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা কেমন?

মুফতি মোহাম্মদ আলী : আপনার ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা হলো আমি টুকটাক সমাজসেবামূলক কাজ করি বলেই। আমাকে আমার চারপাশের  মানুষ বিশেষভাবে মূল্যায়ন করেন। আলেমগণ সমাজসেবায় মন দিলে তাদের ধর্মীয় কাজগুলো করা আরও সহজ হবে।

আওয়ার ইসলাম : সমাজসেবামূলক কাজের সুদূর প্রসারী প্রভাব কেমন?

মুফতি মোহাম্মদ আলী : আরবিতে একটি প্রবাদ আছে ‘মানুষ সেবার দাস’। অর্থাৎ উপকার করে আপনি মানুষকে কাছে টানতে পারেন। মানবসেবামূলক কাজ ইসলামের জন্য কাজ করার সুযোগ বাড়ায়।

যেমন ধরেন, লালমনিরহাট দুর্গাপুর অঞ্চলে খ্রিস্টান মিশনারির তৎপরতা খুব বেশি। কিছু মানুষ ইসলাম ত্যাগ করে খ্রিস্টানও হয়ে যায়। আমি সেখানে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করলাম। কুরবানির সময় পশু পাঠাতে শুরু করলাম। সময়ে সময়ে বিভিন্ন সাহায্য পাঠালাম। আলহামদুলিল্লাহ! এর ফলে কিছু মানুষ ঈমানের পথে আবার ফিরে আসলো। কিছু মানুষ যারা দ্বিধায় ভুগছিলেন তাদের দ্বিধা কাটলো এবং মিশনারির তৎপরতাও কমলো।

আওয়ার ইসলাম : আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো বন্যাকে রাজনৈতিক সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। ইসলামি দলগুলো কি এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারে?

মুফতি মোহাম্মদ আলী : অবশ্যই পারে। যারা রাজনীতি করছেন এবং ভবিষ্যতে নির্বাচন করবেন তারা নিজ নিজ এলাকায় ত্রাণতৎপরতা বাড়াবেন। এতে দোষের কিছু নেই। তারা তো বড় লোক হওয়ার জন্য রাজনীতি করেন না। তারা ইসলামের জন্য জন্য রাজনীতি করেন। সুতরাং রাজনৈতিক সাফল্যের জন্য ত্রাণবিতরণ করলে প্রকারান্তে তা ইসলামের জন্যই হবে।

আওয়ার ইসলাম : বন্যাকবলিত এলাকার যেসব মাদরাসা নিরাপদ আছে তাদের করণীয় কি?

মুফতি মোহাম্মদ আলী : তারা নিজ নিজ এলাকায় যদি এখন মানুষের জন্য কাজ করে তাহলে অন্যসময় মানুষ তাদের জন্য সর্বোচ্চটাই করবেন। কোনো সন্দেহ নেই এটা নিজেদের নেতৃত্ব ও প্রভাব বিস্তারের বড় সুযোগ।

শুধু তাই না। এলাকার মানুষের সাহায্য ছাড়া কোনো মাদরাসা হয় ন। তাই মাদরাসা যদি মানুষের জন্য কাজ করে তবে তার মাধ্যমে কিছু ঋণও শোধ হবে।

আওয়ার ইসলাম : আমরা জানি, আপনি বিভিন্ন সময় মানবসেবামূলক কাজ করে থাকেন। এবার কি করছেন?

মুফতি মোহাম্মদ আলী : আলহামদুলিল্লাহ! কর্মজীবনে প্রবেশ করার পর থেকে আমি দেশের যে কোনো দুযোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। এবারও আমরা ‘খেদমতে খলক ফাউন্ডেশনে’র উদ্যোগে কুড়িগ্রামে যাবো। আগামীকাল রাতে আমরা ঢাকা ছাড়বো ইনশা আল্লাহ!

আওয়ার ইসলাম : এবার আপনাদের প্রস্তুতি কেমন?

মুফতি মোহাম্মদ আলী : প্রস্তুতি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আমরা কিছু শুকনো খাবার, ডাল, চাল ও ওষুধ দিবো। যাদের ঘরবাড়ি বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের কিছু নগদ টাকাও দিবো। ইনশাআল্লাহ!

আওয়ার ইসলাম : আলেমদের অনেক সেবামূলক তৎপরতা মিডিয়ায় আসে না। কারণ কী?

মুফতি মোহাম্মদ আলী : একদিকে মিডিয়া আমাদের কথা প্রচার করতে চায় না। অন্যদিকে আলেমরাও প্রচার বিমুখ। কিন্তু আমি মনে করি, আলেমদের ভালো কাজের ব্যাপক প্রচার হওয়া প্রয়োজন। এতে আলেমদের প্রতি মানুষের সুধারণা যেমন তৈরি হয়, অন্যদিকে কাজের সুযোগ অনেক বৃদ্ধি পায়।

আমি আওয়ার ইসলামকে ধন্যবাদ যে তারা আলেমদের খেদমত ও সেবাসমূহ মানুষের সামনে তুলে ধরছে। তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে।


সম্পর্কিত খবর