বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে কি ইসলামি দলগুলো? পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে স্মার্ট জেনারেশন সৃষ্টি সম্ভব নয়: শিক্ষামন্ত্রী বিচ্ছিন্নভাবে দে‌শের স্বার্থ অর্জন করার সুযোগ নেই : সেনা প্রধান স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন সংসদে পাশ করব : স্বাস্থ্যমন্ত্রী যাত্রাবাড়ীতে দুই বাসের মাঝে পড়ে ট্রাফিক কনস্টেবল আহত আ.লীগের মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা; অমান্য করলে ব্যবস্থা ফকিহুল মিল্লাত রহ. এর পরামর্শ -‘ফারেগিন কার সঙ্গে পরামর্শ করবে’ ঢাকায় চালু হলো চীনা ভিসা সেন্টার ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ দেওয়া নিয়ে ভোট শুক্রবার ৬ দিনের সফরে থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

বাবা-মায়ের উদাসীনতায় কিশোর-তরুণরা মাদকে আসক্ত হচ্ছে: মাওলানা আবদুর রাজ্জাক নদভী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

দেশে মাদকের প্রকপ অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন প্রবল। শহরের অভিজাত পাড়া থেকে গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে চরম মাদকাসক্তি। কিশোর থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী সবাই আক্রান্ত হচ্ছে এই ভয়াবহতায়।

বিশেষজ্ঞদের মত, আইনের ফাঁক-ফোকর এবং আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বহীনতায় মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা, জীবনের প্রতি হতাশা পারিবারিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতার অভাবেই দেশে মাদকসেবীর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মাদক ও মাদকাসক্তির কারণ ও প্রতিকার নিয়ে কথা বলেছেন গবেষক ও শিক্ষাবিদ আলেম মাওলানা আবদুর রাজ্জাক নদভী। তার সাথে কথা বলেছেন, জামিল আহমদ

আওয়ার ইসলাম : মাদকাসক্তির কারণ কি ?
আব্দুর রাজজাক নদভী : মাদকাসক্তি এক  সমাজিক মহামারি। বিভিন্ন কারণে মানুষ মাদকাসক্ত হয়। সুনির্দিষ্ট কারণ বলা কঠিন। তবে সর্বসাপেক্ষে তিনটি কারণ বলা যেতে পারে। হতাশা, কৌতূহল এবং কু-সঙ্গ।

হতাশা: হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের মাঝেই মাদক গ্রহণের প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যায় । কোন করণে মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গ হলে মানুষ হতাশাগ্রস্থ হয় আর তখনই মাদক গ্রহণে উৎসাহী হয়ে উঠে। সন্তানদের প্রতি বাবা-মায়ের উদাসীনতাও সন্তানকে হতাশাগ্রস্ত করে। নিজের কর্মক্ষেত্রে উন্নতি করতে না পারা, শিক্ষাক্ষেত্রে কাঙ্খিত ফলাফল করতে না পারা এবং আপনজনের কাছ থেকে কোনো সাপোর্ট না পাওয়া এ সবকিছু মানুষের জীবনে হতাশা সৃষ্টি করে।

মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে মাদক বিরোধী নতুন আইন আসছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

কৌতূহল : মানুষ সৃষ্টিশীল তাই তাদের মনের ভেতরে কৌতুহল থাকে সবসময়। মাদকে এমন কি আছে, কি করতে পারে ইত্যাদি মনে জাগে। নতুনকে জানার ইচ্ছে এবং আগ্রহ থেকে মাদকের সাথে পরিচয় ঘটায় এবং এভাবেই মাদক গ্রহণে অভ্যস্থ করে তুলে।

কু-সঙ্গ : ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’ কুসঙ্গ মানুষকে বিপদগামী করে। তারা মানুষকে অন্ধকার দুনিয়ার দিকে হাতছানি দেয়। অসৎ সঙ্গের কারণেই কিশোর ও তরুণদের মধ্যে মাদকাসক্তি বেশি ছড়ায়।

যে কোন পরিবার এবং সমাজের জন্য মাদকসক্ত ব্যক্তি হুমকিস্বরুপ। পরিবাবারের সদস্যদের সাথে কথায় কথায় মনোমালিন্য ছাড়াও অতিরিক্ত টাকার জন্য বিভিন্ন উপায় বের করে । টাকা না পেলে চুরি, ছিনতাই, খুনসহ নানাবিধি অপরাধ সংগঠিত করে । যা সমাজে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি সহ শৃঙ্খলা নষ্ট করতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।

আওয়ার ইসলাম : কিশোর ও তরুণ যারা এখনো শিক্ষার্থী তাদের মধ্যেও মাদক গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে। এর বিশেষ কোনো কারণ আছে?
আব্দুর রাজজাক নদভী : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে সমস্যাটা হয়, তাহলো এ বয়স একটা পাগলামির বয়স, নব যৌবনে থাকে। তখন কোনটি সঠিক কোনটি ভুল তা সাধারণত বুঝে আসে না। এই বয়সে তার কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

এ সমস্যার মূল কারণ এ ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিশেষ কোনো ভূমিকা না থাকা। অভিবাভকগণ অনেকেই বলতেই পারেনা যে, তার ছেলে বা মেয়ে নেশার প্রতি আসক্ত হচ্ছে। আর যখন জানতে পারেন তখন তারা নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে।

‘ইন্টারনেটের অশ্লীল উপাদান দূর করা না গেলে ধর্ষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না’

মা-বাবা, শিক্সাপ্রতিষ্ঠান ও প্রশাসন যদি এসবের গা-ছাড়া দায়িত্ব পালন করে তাহলে কিশোর-তরুণদের মাদকাসক্তি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

আওয়ার ইসলাম : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবহেলার কথা বললেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কি করার আছে?
আব্দুর রাজজাক নদভী : স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে মাদকাসক্তি ক্ষতিকারক দিকগুলো সম্পর্কে আলোচনা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এ বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাপ্তাহিক সেমিনার ও আরোচনা সভা করে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে এর কুফল বর্ণনা করা। এর রকম অপরাধোরে সাথে জড়িতের শাস্তি ও জরিমানা করা।

আওয়ার ইসলাম : মাদকাসক্তি প্রতিকারে পরিবারের করণীয় কি?
আব্দুর রাজজাক নদভী : সন্তান জন্ম দিলেই মা বাবা হওয়া যায় না। তার জন্য একটা উপযুক্ত পরিবেশ, সমাজ তৈরি করতে হয়। সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করতে হবে। তবেই মা বাবা সফল।

পারিবারিক পরিবেশ হতে হবে ধুমপানমুক্ত। সন্তানের গতিবিধি এবং বন্ধুবান্ধবের খোঁজ খবর রাখতে হবে। সন্তান যে জায়গাগুলোতে সব সময় যাওয়া আসা করে সেই জায়গার খোঁজ খবর নিয়ে রাখতে হবে।

তার সাথে আচরণ করতে হবে বন্ধুর মতো যেন বাহিরে কোনো সমস্যা হলে সে নিজের থেকেই পরিবারের সাথে শেয়ার করে। সন্তানদের সামাজিক, মানসিক, লেখাপড়া সংক্রান্ত অর্থনৈতিক চাহিদাগুলো যথাসম্ভব মেটাতে হবে, তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত দিয়ে তাদের প্রত্যাশা বাড়তে দেয়া যাবে না।

আওয়ার ইসলাম : যেকোনো সামাজিক সামাজিক সমস্যার সমাধানে সামাজিক আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ। মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনের রূপরেখা কেমন হতে পারে?
আব্দুর রাজজাক নদভী : সমাজের সর্বস্তরের মানুষ মাদকের প্রতি আসক্ত হচ্ছে। তাই সমাজ রক্ষায় আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা যেখানে থাকি না কেন মাদককে না বলি সবসময়, মুক্তভাবে আলোচনাই পারে মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে। মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য লাখলে সাফল্য পাওয়া যাবে। ইনশাআল্লাহ।

ইচ্ছাশক্তি : মাদক বর্জনের জন্য মাদকগ্রহণকারীর দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। রমজান মাস মুসলমানের মাদক বর্জনের উপযুক্ত সময়। সারাদিন মাদক ছাড়া থাকতে পারলে রাতটুকুও থাকা সম্ভব। এভাবে এক মাস অভ্যাস করলে মাদক ত্যাগ করা সহজ হবে।

সামাজিক প্রতিরোধ : মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য সমাজ ও স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। মাদক গ্রহণ করাকে ঘৃণার চোখে দেখা উচিত। সমাজের নেতৃবৃন্দ নিজেরা মাদকমুক্ত থেকে এবং তাদের প্রভাব খাটিয়ে মাদক প্রতিরোধ করতে পারেন।

সচেতনতা বৃদ্ধি : শিশুকাল থেকেই ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে হবে। যাতে ইসলামের বিধি-বিধানসমূহ পালনে তারা আগ্রহী হয়। সাথে সাথে মহান আল্লাহ প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভালবাসা তৈরি করতে হবে। যাতে আল্লাহ পাকের প্রতিটি কথা পালন করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠে।

মাদক গ্রহণের ক্ষতিকর বিষয় সম্বন্ধে শারীরিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় দিকগুলো তুলে ধরে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মাদকের ক্ষতি ও অপকারিতা সম্বন্ধে অবহিত হলে এই বদাভ্যাস ত্যাগ করা ও এর প্রতি ঘৃণা জন্মানো সহজ হবে।

চিকিৎসকদের উদ্যোগ : মাদক প্রতিরোধে চিকিৎসকগণ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন এবং জনগণকে এর ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে অবগত করে তাদের এ পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন।

আওয়ার ইসলাম : মাদক প্রতিকারে ইসলামের নির্দেশনা কি?
আব্দুর রাজজাক নদভী : ইসলামের একটি মূলনীতি হলো কেউ নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হতেও পারবে না এবং অন্যকেও ক্ষতিগ্রস্ত বানাতে পারবে না। ইসলাম সকল প্রকার মাদক তথা নেশাদার দ্রব্য হারাম ঘোষণা করেছে। রাসুলুল্লাহ বলেন ‘প্রত্যেক নেশাকর দ্রব্যই মাদক আর যাবতীয় মাদকই হারাম’।

রাসুলুল্লাহ বলেছেন,  ‘মদ পান কর না। কেননা তা সকল অপকর্মের চাবিকাঠি’। অন্য হাদিসে এসেছে তোমরা মদ থেকে বেঁচে থাক। কেননা তা অশ্লীল কাজের মূল’।

ইসলামের শিক্ষা ও বিধি-বিধান পুরোপুরি মেনে চললে মাদক বর্জন করা সহজ হবে।

আওয়ার ইসলাম : মাদকাসক্তি প্রতিকারে উলামায়ে কেরামের ভূমিকা কি হতে পারে  ?
আব্দুর রাজজাক নদভী : মসজিদের ইমামসহ সমাজের আলেমগণ ইসলামের দৃষ্টিতে মাদকের অপকারিতা সম্বন্ধে জনগণকে অবহিত করতে পারেন এবং মদ্যপায়ীদেরকে ছালাতের দিকে আহবান করে ন্যায়ের পথ দেখাতে হবে। যাতে করে তারা অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকতে পারে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, নামাজ অবশ্যই অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে’ (আনকাবূত ৪৫)। আর নামাজ আদায়ের প্রতি যদি কেউ বিনয়ী হয় তাহলে তাকে নেশাদ্রব্য অবশ্যই ছাড়তে হবে।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ