শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


হেফাজত আমীরকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে বিপুল অভ্যর্থনা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: দীর্ঘ অসুস্থতার শেষ পর্যায়ে দিল্লী এপলো হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসায় হেফাজত আমীর ও দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাতে বিপুল অভ্যর্থনা জানিয়েছে আল্লামা শাহ আহমদ শফী ফাউন্ডেশন।

এ সময় বিমান বন্দরে ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা ও সদস্যগণ ছাড়াও দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষকবৃন্দ, হেফাজত নেতৃবৃন্দসহ আরো কয়েক শত আলেম জমায়েত হন। এ সময় আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে সুস্থ অবস্থায় কাছে পেয়ে সকলেই আবেগাপ্লুত হয়ে মহান আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করেন।

আজ (৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টায় হেফাজত আমীরকে বহনকারী বিমান চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে অবতরণ করে। বিমান বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাত ৯:১৫ মিনিটে টার্মিনাল থেকে আল্লামা শাহ আহমদ শফী বাইরে আসলে উপস্থিত উলামায়ে কেরাম ও তাওহিদী জনতা আহলান, সাহলান ও তাকবীর দিয়ে তাঁকে বরণ করে নেন। তখন অনেককে আবেগাপ্লুত হয়ে কাঁদতেও দেখা যায়।

হেফাজত আমীর উপস্থিত সকলকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মহান আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করেন। এ সময় দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসা ও আল্লামা শাহ আহমদ শফী ফাউন্ডেশনের পক্ষে আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা মুফতী জসীম উদ্দীন ও মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেপুরী উপস্থিত উলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতার উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।

দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক ও মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, হেফাজত আমীরের দীর্ঘ অসুস্থতায় আমরা অনেকটাই এতিমের মতো দিন কাটিয়েছি। আমরা ছিলাম চরম উদ্বিগ্ন ও বেদনাকাতর। পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে শত কোটি শোকরিয়া, তিনি দয়া পরবশ হয়ে হযরতকে সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরে আসার তাওফীক দিয়েছেন। আজ আমাদের জন্য অনেক খুশীর দিন, আমরা যেন আবার ছায়া ফিরে পেয়েছি। আমি স্পষ্ট আশাবাদি, হযরতের সুদক্ষ নেতৃত্ব ও পরিচালনায় দ্বীনি শিক্ষার বিস্তারের পাশাপাশি দাওয়াতী কার্যক্রম এবং ঈমান-আক্বীদা রক্ষার আন্দোলন আরো বেগবান হবে, ইনশাআল্লাহ। হযরতের সুস্থতা ও দীর্ঘ হায়াতের জন্য আমি দেশবাসীর দোয়া কামনা করছি।

দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মুফতী ও মুহাদ্দিস মাওলানা মুফতী জসীম উদ্দীন হেফাজত আমীরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “দীর্ঘ প্রায় অর্ধশতাব্দী পর্যন্ত জামিয়ার মহাপরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে আমরা আপনার মেধা, কর্ম-অভিজ্ঞতা, দক্ষ নেতৃত্ব ও মানবতার গুণাবলীতে এতটাই মুগ্ধ যে, আপনার এই সাময়িক অসুস্থতায়ও আমরা পাগলপারা হয়ে দিগভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম। ছাত্র, শিক্ষক, আলেম ও সাধারণ যে কারো কঠিন সময়ে পরম স্নেহে আপনি অকাতরে হাত বাড়িয়ে দিতেন। ব্যক্তি জীবনের কোন এক দোদুল্যমান সময়ে যিনি পরম মমতায় ধৈর্যশীল হওয়ার হিতোপদেশ দিয়ে সাহস যোগাতেন অথবা প্রাণচঞ্চল কোন এক পরিবেশে একান্ত অভিভাবকের মতো যিনি সারাক্ষণ ছায়ার মত ঘিরে থেকে অকৃত্রিম আনন্দ যোগাতেন, আপনার দীর্ঘ অসুস্থতায় সেই পরম মানুষটিকেই হারানোর ভয়ে আমরা কাতর হয়ে পড়েছিলাম। পরম করুণাময় মহান আল্লাহর ইচ্ছায়, আজ আমাদের আকাশ থেকে সেই হতাশা ও চরম উদ্বেগের মেঘ কেটে গেছে। জামিয়া ক্যাম্পাসের ইলমি বাগান আপনার প্রত্যাবর্তনে পুণরায় স্নিগ্ধ সুবাসিত হয়ে ওঠবে”।

আল্লামা শাহ আহমদ শফী ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও ফতেপুর মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মাহমুদুল হাসান বলেন, আজ সমগ্র জাতি জ্ঞান-বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই ফেরেস্তা সুলভ স্নিগ্ধতায় স্নাত বুযুর্গ আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে দীর্ঘ অসুস্থতা শেষে পরিপূর্ণ সুস্থরূপে আমাদের মাঝে ফিরে পেয়ে মহান আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করছি। হেফাজত আমীর গতানুগতিক একজন সংগঠন আমীর, মাদ্রাসা মহাপরিচালক ও শাইখুল হাদীস নন, বরং তিনি ইতিহাস সৃষ্টিকারী প্রতিভাবান ব্যক্তি গঠনের এক অভিনব কারিগরও বটে। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর হাতে গড়া অসংখ্য আলেম ও শাগরিদবৃন্দ বিশ্বের আনাচে কানাচে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে দ্বীনের সুবাসিত সুঘ্রাণ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এক কথায় তাঁর প্রজ্ঞাময় আচরণে ব্যক্তিত্বে প্রিয় নবীর শিক্ষা ও আদর্শের পরিপূর্ণ প্রতিফলন ঘটে। বর্তমানে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্রের এই কঠিন সময়ে হেফাজত আমীরের অসুস্থতায় পুরো দেশবাসীই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। আলহামদুলিল্লাহ, পরম করুণাময়ের দয়ায় তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে উপস্থিত। আমরা আশাবাদি, হেফাজত আমীরের সুদক্ষ নেতৃত্বে সকল বাতিল ও দেশবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র সমূলে উৎখাত হয়ে দেশে ন্যায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠা পাবে এবং দেশের মুসলমানরাও স্বাধীনভাবে ঈমান-আমল নিয়ে জীবন নির্বাহ করতে সক্ষম হবেন।

Image may contain: 9 people

এরপর জামিয়ার শিক্ষাসচিব মুফতী নূর আহমদ বক্তব্য রাখেন। এরপর হেফাজত আমীর মুনাজাত করেন।
এ সময় নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষাপরিচালক মুফতী নূর আহমদ, মুহাদ্দিস মাওলানা শোয়াইব আহমদ, মাওলানা কবীর আহমদ, মাওলানা মুহাম্মদ ওমর, মুফতী কিফায়াত উল্লাহ, মাওলানা আহমদ দীদার, মাওলানা ফোরকান আহমদ, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মাওলানা মুহাম্মদ, মাওলানা মুহাম্মদ রাশেদ, মাওলানা মীর মুহাম্মদ ইদরিস, মাওলানা আনওয়ার শাহ আযহারী, মাওলানা হাফেজ মুহাম্মদ ইসমাঈল, আলহাজ্ব মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ, মাওলানা শফি উল্লাহ, মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী, মাওলানা মুহাম্মদ ইবরাহীম, মাওলানা আবুল হাসেম, মাওলানা মুনির আহমদ প্রমুখ।

সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ও দোয়া শেষে হেফাজত আমীর বিশাল মটর-শোভাযাত্রা নিয়ে জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসা অভিমুখে রওনা হন।

উল্লেখ্য, দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষরাও ক্যাম্পাসে হেফাজত আমীরকে ব্যাপক অভ্যর্থনা জানিয়ে বরণ করে নিতে প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের পথে আল্লামা আহমদ শফী, বিমানবন্দরে প্রস্তুত শতাধিক গাড়ি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ