মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫


আফতাবনগর মাদরাসা : সাফল্যের ৩ কারণ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি শিক্ষা সনদের মান ঘোষণা দেয়ার পর কওমি ধারার ৬টি শিক্ষাবোর্ড নিয়ে গঠিত হয় কওমি শিক্ষা কমিশন ‘আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়্যা’। কমিশনের অধীনে (১৫ মে থেকে ২৫ মে) প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত কওমি অঙ্গনের সর্ববৃহৎ পাবলিক পরীক্ষা।

দীর্ঘ দুই মাসের প্রতীক্ষার পর শিক্ষার্থীরা গত ২৫ জুলাই (মঙ্গলবার) হাতে পেয়েছে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) এর ফলাফল। এতে পুরুষ বিভাগে জামিয়াতুল ইসলামিয়া ইদারাতুল উলুম, আফতাবনগর-এর শিক্ষার্থী মো: ইলিয়াছ হুসাইন সারাদেশে যৌথভাবে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এছাড়াও সার্বিক বিবেচনায় জামিয়ার ফলাফল সন্তোষজনক।

জামিয়ার দরস পদ্ধতি ও সফলতার রহস্য নিয়ে মুহতামিম মুফতি মোহাম্মাদ আলী এর সাথে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের রিপোর্টার  রকিব  মুহাম্মাদ  শিহাব মাহমুদ।  

আওয়ার ইসলাম: আপনাদের শিক্ষার্থী মাওলানা ইলিয়াছ তো প্রথম স্থান অধিকার করেছে। সার্বিক বিবেচনায় মাদরাসার ফলাফল কেমন হয়েছে?

মুফতি মোহাম্মদ আলী: আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত যে, আমাদের মাদরাসা থেকে দাওরা হাদিসে (মাস্টার্স) মোট ৬৫ জন পরীক্ষা দিয়েছে। ইলিয়াছ আহমাদ সারা বাংলাদেশে প্রথম হয়েছ্ । এছাড়া আরও ৬ জন মুমতাজ, ১৮ জন যায়্যিদ যিদ্দান, ২১ জনের মত যায়্যিদ, বাকিরা থার্ড ডিভিশন পেয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা বেফাকুল মাদারিসিদ্দিনীয়া বাংলাদেশেও প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন করেছে।

 আওয়ার ইসলাম: সম্মিলতভাবে ৬টি বোর্ডর শিক্ষার্থী অভিন্ন প্রশ্নপত্রে আল-হাইআতুল উলয়ার  অধীনে পরীক্ষা দিলে শিক্ষার মান কতোটা বাড়বে মনে করেন?

মুফতি মোহাম্মদন আলী: অভিন্ন প্রশ্নপত্রে সারাদেশের কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা সম্মিলিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে; আমি মনে করে এটা হাইআতুল উলয়ার প্রথম সাফল্য। আর এরই মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের সব মাদরাসাগুলোর শিক্ষার মান এক ও অভিন্ন হবে বলে আশা করছি।এটাও বড় একটি সফলতা।

আল আকসা ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়; সমগ্র মুসলিম উম্মাহর ব্যাপার: ড. আবু ইয়া’লা

আওয়ার ইসলাম:  দীনি শিক্ষায় জামিয়াতুল ইসলামিয়ার বিশেষ অবদান আছে। এখান থেকে বহুগুণী শিক্ষার্থী বের হয়েছে। এ সাফল্যের রহস্য কী?

মুফতি মোহাম্মদন আলী: এই  সাফল্যের  পেছনে ৩টা কারণ আছে বলে আমি মনে করি। প্রথমত তো আল্লাহর রহমতের কথা না বললেই নয়। তাঁর অনুগ্রহ ছাড়া তো আর কিছুই সম্ভব না। তবে আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহের জন্য আমাদের ছাত্ররা তাঁর কাছে কান্নাকাটি করেছে, ছাত্র-উস্তাদদের নিয়মিত জিকির-আজগার, তাহাজ্জুদ গুজারও আমাদের সফল হতে সাহায্য করেছে।আর এটাতো সর্বসিদ্ধ বিষয় যে, বান্দার চোখের পানি আল্লাহর দরবারে অনেক দামি।

এরপর চেষ্টা। দোয়া লাগে আবার চেষ্টাও লাগে। আমি বলে থাকি, দোয়াও করা লাগে আবার বদরের ময়দানেও যেতে হয়।

আরেকটি কথা না বললেই নয় যে, আমাদের উস্তাদরা নিয়মিত ক্লাস করেন, কখনোও তারা ক্লাস কামায় দেন না।

আমার কথায় বলি, গত বছর দেশ-বিদেশে অনেক সফর ছিল। তবুও আমি একটি ক্লাসও কামায় দেইনি। বিভিন্ন ছুটিতে আমি সফরগুলো করেছি। আর আমি মনে করি নিয়মিত ক্লাস পড়ালেখার উপর একটা শক্তিশালী প্রভাব ফেলে।

এক হল রুমে উস্তাদদের নেগরানিতে পড়ালেখা করেন আমাদের ছাত্ররা, এটাও একটা সফলতার দিক হতে পারে। অন্যান্য মাদরাসাগুলোও যদি এই ৩টা বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করলে সফলতা অবশ্যই আসবে।

আওয়ার ইসলাম:  পরীক্ষা হয়ে গেল, ফলাফলও বের হয়ে গেল কিন্তু এখন পর্যন্ত সংসদে স্বীকৃতি পাশ হলো না এটাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

মুফতি মোহাম্মদন আলী: সরকারের সাথে এ বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য হাইআতুল উলয়া থেকে একটি লিয়াজো কমিটি করা হয়েছে। মাওলানা আশরাফ আলীর নেতৃত্বে এই কমিটির সবাই প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, অচিরেই সংসদে কওমি স্বীকৃতির কথা তোলা হবে। কিছুটা কাজ বাকি আছে, সব নয়।

প্রধানমন্ত্রীর কথারও একটা মূল্য আছে, তার গেজেটেরও একটা মূল্য আছে। তাই শঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। ‍

 আওয়ার ইসলাম:  ইলিয়াছদের মতো মেধাবী তরুণদের নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি?

মুফতি মোহাম্মদন আলী: আমি স্বপ্ন দেখি ইলিয়াছরা একদিন অনেক বড় হবে। আরবি, বাংলা ও ইংরেজিতে সমান পারদর্শী হবে। বাংলাদেশ নয় বিদেশের মাটিতেও সুনাম অর্জন করবে। একজন সত্যিকারের দীনের খাদেম হিসেবে কাজ করে যাবে।

আওয়ার ইসলাম: আওয়ার ইসলামকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মুফতি মোহাম্মদন আলী: আপনাকে এবং আওয়ার আসলামকেও ধন্যবাদ।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ