মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫


সংসদে কওমি স্বীকৃতির আইন পাশ নিয়ে শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

এ এস এম মাহমুদ হাসান
বিশেষ প্রতিবেদক

সহসাই জাতীয় সংসদে আইন পাশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে না কওমি মাদরাসার সরকারি স্বীকৃতি। এক অজানা কারণে ঝুলে আছে ধর্মীয় এ শিক্ষাধারার সরকারি স্বীকৃতির স্থায়ী বাস্তবায়ন। ফলে চলমান সরকারের আমলে গত ১১ এপ্রিল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত এ স্বীকৃতি নিয়ে তৈরি হয়েছে ব্যাপক ধুম্রজাল। কওমি শিক্ষামাধ্যমকে স্বীকৃতি দিয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয় কৃর্তৃক প্রজ্ঞাপন জারি হলেও আইন আকারে সংসদে পাশের মাধ্যমে স্থায়ী রূপ দেওয়ার কোনো লক্ষণ এই মুহূর্তে নেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। আওয়ার ইসলামের অনুসন্ধানে এমনটিই জানা গেছে।

গত ১১ জুন কওমি শিক্ষা ব্যবস্থাপনার নীতি নির্ধারকদের একটি প্রতিনিধি দল সংসদে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করার পর দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হলেও সংসদের মাধ্যমে স্বীকৃতি বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়ায় অস্বস্তিতে রয়েছেন কওমি নীতি নির্ধারকরা। সরকারের আন্তরিক আশ্বাসে বাংলাদেশের সকল আঞ্চলিক বোর্ড ঐক্যমত্যে পৌঁছে কেবল দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমান দেওয়ার লক্ষ্যে পৃথক বোর্ড গঠন করে তার অধীনে একযোগে দেশব্যাপী দাওরায়ে হাদীসের ফাইনাল পরীক্ষাও নেওয়া হয় গত জুনে। জিলকদের ১ তারিখে দেয়া হবে পরীক্ষার ফলাফল। কিন্তু প্রায় চারমাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও আইন পাশের উদ্যোগ না থাকায় হতাশ হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করার পর কওমি মাদরাসার দাওরা সমাপনকারীরা উৎফুল্লের সাথে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করলেও সংসদে স্বীকৃতির স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় চাপা ক্ষোভ ও আশঙ্কা বিরাজ করছে কওমি অঙ্গনে। সরকারের শেষ সময়ে এই স্বীকৃতিকে নিছক ক্ষমতায় যাওয়ার চাল হিসেবে দেখছে অনেকে। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেওয়া কওমি স্বীকৃতিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার যে গুঞ্জন উঠেছিল সর্ব মহলে, প্রজ্ঞাপন জারীর দীর্ঘদিন পার হলেও স্থায়ীভাবে স্বীকৃতির বাস্তবায়ন না হওয়ায় সেই গুঞ্জন এরই মাঝে আরো ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। কওমি মাদরাসাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আবেগঘন বক্তব্য বাস্তবায়ন না হওয়াকে ভিন্ন চোখে দেখতে শুরু করেছে কওমি সংশ্লিষ্টরা।

কওমি মাদরাসার সরকারি স্বীকৃতি স্থায়ীভাবে বাস্তবায়নের আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বেফাকের যুগ্ম মহাসচিব ও স্বীকৃতি বাস্তবায়ন কমিটির অন্যতম সদস্য মাওলানা মাহফুজুল হক আওয়ার ইসলামকে বলেন, ১১ জুন সংসদে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পর পবিত্র মাহে রমজান ও মাদরাসাগুলোর ভর্তির কারণে সরকারের সাথে লিয়াজোঁ করা সম্ভব হয়নি বিধায় আপাতত স্বীকৃতি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া থেমে আছে। তাছাড়া দাওরায়ে হাদীসের মান নিয়ন্ত্রণে সরকার অনুমোদিত সম্ভাব্য বোর্ড আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়ার দাওরা পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা দেখা ও নিরিক্ষণ শেষে ফলাফল ঘোষাণা করা হবে কিছু দিনের মধ্যেই। তাই স্বীকৃতি নিয়ে দৌড়ঝাপ করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তবে আমরা খুব শিগগির স্বীকৃতি বাস্তবায়নের রোডম্যাপ অনুযায়ী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সামনে আগাবো।

স্বীকৃতি প্রদানে সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা বা সদিচ্ছার কোনো আলামত আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কওমি মাদরাসার স্বীকৃতির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করবে কেন! এটা তো তাদের প্রয়োজন না। যেহেতু স্বীকৃতি আমাদের প্রয়োজন সেহেতু আমাদেরই সরকারের সাথে যোগাযোগ করে আগাতে হবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পর এ পর্যন্ত এখনো সরকারের পক্ষ থেকে স্বীকৃতি বাস্তবায়নের জন্য কোনো ধরনের যোগাযোগ বা সদিচ্ছা দেখা যায়নি।

পর্যবেক্ষরা বলছেন, ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের আমলের শেষ দিকে কওমি স্বীকৃতি দেওয়ার যে রাজনৈতিক অভিলাষ কাজ করেছিল, ঠিক তেমনটিই হতে যাচ্ছে বর্তমান সরকারের এ প্রজ্ঞাপন। বাংলাদেশের এ বৃহৎ কওমি জনগোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট রাখতে সব সরকারই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার প্রবণতা থেকেই কওমি স্বীকৃতির কথা বলা হচ্ছে। ফলে সহসাই এ স্বীকৃতি সংসদের মাধ্যমে আইন আকারে স্থায়ী রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

তারা বলছেন, সরকার পরিচালনায় সব নীতি নির্ধারকদের ঐক্যমত্য অন্তরিক অবস্থান ও রাষ্ট্রীয় নীতিতে এ স্বীকৃতির জাতীয় সুফল-কুফল বিবেচনায় এ কওমি স্বীকৃতি আপেক্ষিক বিষয়। ফলে এমন একটি জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত খুব সহজেই স্থায়ীভাবে পাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। তাছাড়া সরকারের রাষ্ট্রীয় মৌলিক নীতিমালার সাথে কওমি মাদরাসা পরিচালনার মূল নীতিগুলো স্পষ্টতই সাংঘর্ষিক বিধায় সরকার পক্ষ এ স্বীকৃতিকে এড়িয়ে চলা স্বাভাবিক। শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারি যে কোনো সিদ্ধান্ত ও নীতিমালা না মানার যে শর্ত কওমি কর্তৃপক্ষ দিয়েছে তা রাষ্ট্রীয় আইন সামাঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ কারণে সরকারের পক্ষে কেবলমাত্র রাজনৈতিক কারণে এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়ার অধীনে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষার্থী ঢাকার ফরিদাবাদ মাদরাসার ছাত্র মাওলানা জুবায়ের আহমাদ বলেন, নির্বাচনী মাঠে হেফাজত ও কওমীদের ব্যবহার করার জন্য স্বীকৃতির নামে এমন তামাশা করা হচ্ছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি স্বীকৃতির জন্য এবারের দাওরা পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার কারণে ভালো হাফেজ হওয়া সত্বেও দাওরার ভালো প্রস্তুতির জন্য তারাবির ইন্টারভিউতে অংশ নিতে না পারায় নামাজ পড়াতে পারিনি। এতে অনেক ক্ষতি হওয়া সত্বেও স্বীকৃতি পেলে খুশি হতাম। কিন্তু অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকারের পাতা ফাঁদে আমাদের মুরব্বিরা পা দিয়েছেন। জুন-জুলাই জুড়ে সংসদ অধিবেশন চললেও স্বীকৃতির আলোচনা না উঠায় হতাশাই ব্যক্ত করেন এই শিক্ষার্থী।

এমন অনেক দাওরায়ে হাদীস সমাপনকারীরা এই প্রতিবেদকের নিকট তাদের হতাশা ও ক্রোধের কথা ব্যক্ত করেন। তবে কোনো কোনো শিক্ষার্থী বলেন, কওমি মাদরাসা আসলে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারি স্বীকৃতি পাবে না। কারণ হিসেবে তিনি ক্ষমতাবানদের মাঝে অতি বাম ও বিদেশ নির্ভরতার অভিযোগ তোলেন। ওই শিক্ষার্থীদের মতে শুধু শুধু স্বীকৃতির লোভে নিজেদের ঈমানি চেতনা ও কওমি মাদরাসার মূল উদ্দেশ্য নষ্ট না করে একতাবদ্ধ থেকে রাজনৈতিক ও সরকারি অঙ্গনে প্রভাব সৃষ্টি করতে হবে। সব ইসলামি দলগুলো ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

তাদের মতে একতাবদ্ধভাবে যে কোনো ধরনের আন্দোলন ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিলে বাংলাদেশের বাম ঘেঁষা ও বিদেশ নির্ভর রাজনীতি চুপসে যাবে এবং সরকার পরিচালনায় ইসলামি দলগুলোর চাহিদা বাড়বে। তখন অনায়াসে স্বীকৃতির চেয়ে বড় কিছু অর্জন করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশে ‘আলেম প্রতিভার’ অপমৃত্যু; নেপথ্যে যেসব কারণ

ইসলামি দলের শীর্ষ নেতারা কে কোথায় নির্বাচন করবেন?

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ