শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন শায়খ মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আগামীকাল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে চরমোনাই পীরের শোক প্রকাশ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান ঢাকাস্থ চাঁদপুর ফোরামের সেতুবন্ধন সভা অনুষ্ঠিত

গৃহকর্মীরা কেনো অপকর্ম করবে না?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

পলাশ রহমান
সাংবাদিক

বাংলাদেশে গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা অহরহ ঘটে। সমাজের বড় বড় লোকরা বাড়িতে কাজের লোক রেখে নির্যাতন করে। তারা বয়স্কা কাজের মানুষটাকে বুয়া বলে। কম বয়সী কিশোরী, তরুণী হলে কি বলে আমি জানি না। তবে আমার মনে হয় 'বুয়া' বা এ জাতীয় নাম করন থেকেই নির্যাতন শুরু হয়। এরপর নানা ভাবে, নানা উপায়ে তা চলতে থাকে। যে নির্যাতনগুলো খুব বেশি মাত্রা ছাড়িয়ে যায় আমরা শুধু সেগুলোই জানতে পারি। কোনো সন্দেহ নেই, আমরা যা জানতে পরি তা প্রতিদিনের ঘটনা থেকে খুবই সামান্য। বলা যেতে পারে লাখে দুই একটা।

কাজের লোক নির্যাতনের বিষয়টা এখন আর বাংলাদেশের সীমানায় সীমাবদ্ধ নেই। আমাদের গুণধর কূটনীতিকরা তা ইউরোপ আমেরিকায় নিয়ে গিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বাইরে অন্তত তিনটি গৃহকর্মী নির্যাতনের খবর প্রকাশ পেয়েছে। আমেরিকায় দু'জন বাংলাদেশি কূটনীতিক গ্রেফতারও হয়েছেন। পরে বাংলাদেশ সরকার মুচলেকা দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে নিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বাধ্য হয়ে বিদেশে কূটনীতিকদের গৃহকর্মী নিয়ে যাওয়ার উপর নিষেধ জারি করেছে। এই নিষেধ থেকে বোঝা যায় ঘটনা কতো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কারন আমরা সবাই জানি কূটনীতি পাড়ার সব খবর সাধারণ মানুষ জানতে পারে না।

হালের খবর হলো ঢাকার একজন সেনা কর্মকর্তার ঘরে গৃহকর্মী নির্যাতিতা হয়েছে। নির্যাতিতার ভয়াবহ ছবি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। এ নিয়ে বেশ শোরগোল শুরু হয়েছে। যেমন শোরগোল হয় অন্যান্য ঘটনা নিয়ে। কেনো যেনো আমরা কোনো কিছুর প্রতিকার চাই না, প্রতিকার করি না। শোরগোল করতেই বেশি পছন্দ করি। এক একটা ঘটনা ঘটে, প্রকাশ পায়, কিছু দিন তা নিয়ে শোরগোল হয়, ওই ঘটনার সাথে মিল আছে এমন আরো কিছু ঘটনা পটা-পট সামনে আনা হয় এর পরে আবার সব কিছু আগের মতো হয়ে যায়। শুরু হয় নতুন কোনো ঘটানা বা অঘটনার জন্য অপেক্ষা।

সেনা কর্মকর্তার ঘরে কাজের মেয়ে নির্যাতন বিষয়ে জনৈকা সুপ্রীতি ধরের একটা লেখা সোস্যাল মিডিয়ায় বেশ আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। লেখাটা আমি পড়েছি। বেশ মন লাগিয়ে পড়েছি। যারা ওই লিখার সমালোচনা করেছেন তাদের বক্তব্যও পড়ার চেষ্টা করেছি। অনেক কিছুই যৌক্তিক মনে হয়েছে, অনেক কিছু মনে হয়নি। সুপ্রীতি তার লেখার রসদ হিসাবে তারই একজন মেয়ে বন্ধুর ফেসবুক থেকে ছোট একটা স্টাটাস তুলে ধরেছেন। সেখানে সুপ্রীতির বন্ধু তার ঘরের গৃহকর্মীর অপকর্ম সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা বা মতামত ব্যক্ত করেছেন। আমি সুপ্রীতিকে জানি না, কিন্তু তার ওই বন্ধুকে জানি। তাদের রুচি আদর্শ সম্পর্কে সামান্য ধারণা রাখি।

এ বিষয়ে একটি ঘটনা উল্লেখ করতে পারি- সুপ্রীতির ওই বন্ধু, তার স্বামী, তাদের তুলতুলে মেয়ে এবং কাজের মেয়েটা এক দিন আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। তাদের হাতে খুব অল্প সময় ছিল। বেলায় বেলায় ঢাকায় ফিরে যাওয়ার তাড়া ছিল। তড়িঘড়ি করে সবাই দুপুরে খাওয়ার টেবিলে বসলেন। সুপ্রীতির বন্ধু তাড়াহুড় করে খাওয়া শেষ করে তার মেয়ে ধরলেন এবং কাজের মেয়েটাকে খাওয়ার টেবিলে পাঠালেন। মেয়েটা বেশ আস্তে ধিরে আয়েশ করে খাচ্ছে। এদিকে তাদের সবার খাওয়া হয়ে গিয়েছে। তারা যাওয়ার জন্য উসখুস করছেন, কিন্তু কাজের মেয়েটা তা খেয়াল করছে না। আমি তাদের তাড়া দেখে বললাম, ওকে (কাজের মেয়েকে) একটু তাড়াতাড়ি খেতে বলেন। উত্তরে সুপ্রীতির বন্ধুর স্বামী বললেন, একটা মানুষ খাচ্ছে, তাকে কিভাবে তাড়া দেই! তার কথা শুনে সে দিন আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। এত বেশি মুগ্ধ হয়েছিলাম যা প্রকাশ করার একটা সুযোগ খুঁজছিলাম। সুপ্রীতি আমাকে সেই সুযোগটা করে দিলেন।

এবার আসি মূল প্রসঙ্গে- সুপ্রীতি তার লেখায় ছোট সময়ের একটা স্মৃতি চারণ করেছেন। সেখানে তাদের বাড়ির কিশোরী কাজের মেয়ের কিছু কর্মকান্ড উল্লেখ করেছেন, যা আমার কাছে খুবই রুচিহীন মনে হয়েছে। সুতরাং আমি সে প্রসঙ্গ নতুন করে পাড়তে চাই না। আমার কথা হলো যারা নানা ভাবে কাজের মেয়েদের বিভিন্ন অপকর্মের কথা উল্লেখ করছেন তারা কি কখনো ভেবেছেন, কেনো কাজের মেয়ে বা গৃহকর্মী অপকর্ম করবে না? কেনো আপনার শিশু তার বা তাদের হাতে অনিরাপদ হবে না? কেনো আপনার স্বামীকে তাদের বিছানায় পাওয়া যাবে না?

একটা মানুষ খাচ্ছে, তাকে কিভাবে তাড়া দেই! তার কথা শুনে সে দিন আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। এত বেশি মুগ্ধ হয়েছিলাম যা প্রকাশ করার একটা সুযোগ খুঁজছিলাম। সুপ্রীতি আমাকে সেই সুযোগটা করে দিলেন।

আপনি আপনার সংসার, সন্তান, স্বামী রেখে নিজের ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটছেন, খুব ভালো কথা। কিন্তু যে কাজের মেয়েটার কাছে আপনি আপনার আদরের সন্তান কে রেখে বাইরে যাচ্ছেন, শিশুর দেখ-ভাল করার দায়িত্ব তার উপরে দিয়ে আপনি নিজের কাজ-কর্ম করছেন, সে ওই কাজের জন্য কতোটা যোগ্য তা কি কখনো ভেবেছেন? তার শিক্ষা কতো দুর? তার জগৎ কতো বড়? তার আত্ম বিকাশ কতোটুকু, তার মানসিক প্রস্তুতি কতোটুকু তা কি ভেবেছেন কখনো? শিশু পালন, গৃহকর্ম, স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা বা রোগী, বয়স্ক মানুষের সেবা করার জন্য তার জ্ঞান কতোটুকু? শিক্ষা-প্রশিক্ষণ কতোটুকু, সে বিষয়ে কি কখনো ভেবেছেন? লেখাপড়া না জানা, জগৎ সংসার সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান না থাকা, নিজের স্বাস্থ্য, শিশুর স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান না থাকা একজন মানুষের কাছে আপনি আপনার আদরের শিশুকে রেখে যান, দেখ-ভালের দায়িত্ব দেন কোন আক্কেলে? কোন বিবেচনায় বয়স্ক বা অসুস্থ মানুষের সেবা করার ভার তার উপরে ছেড়ে দেন? আমার তো মনে হয় আপনার শিক্ষা, যোগ্যতা, জ্ঞানের গভীরতা নিয়ে সবার আগে প্রশ্ন তোলা উচিত।

আপনি ফুলেল বিছানায় ঘুমান, কাজের মেয়েটা কেনো তেল চিটচিটে বিছানায় ঘুমায়? আপনি দামি প্রসাধনী মাখেন, সে কেনো সন্তা তেলকম পাউডারে তার প্রয়োজন সারে? কেনো একই ঘরের মধ্যে আপনারা এই বৈষম্য সৃষ্টি করেন? সে কাজের মেয়ে এই জন্যে? আপনিও তো কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের কাজের মানুষ। সেখানে আপনার সাথে বৈষম্য করা হলে ফুসে ওঠেন কেনো? রাগ ক্ষোভ প্রকাশ করেন কেনো? আপনাকে কেনো কাজের লোক বলা হয় না? কেনো 'বুয়া' বলা হয় না? আপনাকে কাজের লোক, কর্মচারী বললে সম্মানে বাধে কেনো? আপনি অফিস করেন, জব করেন, চাকরী করেন, কিন্তু 'কাজ' করেন না এই জন্যে?

আপনার স্বামী কেনো আপনার সুগন্ধি বিছানা ছেড়ে তেল চিটচিটে বিছানায় যায়, নিজেকে প্রশ্ন করুন। হয় আপনি লম্পট পুরুষের সাথে ঘর করেন, না হয় আপনার মধ্যে কোনো ঘাটতি আছে। সুতরাং চিকিৎসা যদি দিতেই হয় আসল জায়গায় দেন।

একটা শিশু পৃথিবীতে মা ছাড়া আর কোথায় নিরাপদ বলেন তো? বলতে পারবেন না। সেই শিশুকে আপনি মায়ের আদর ভালোবাসা থেকে দুরে রেখে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে যান, টাকা উপার্যন করতে যান ভালো কথা। কিন্তু তাকে তো অন্তত একজন যোগ্য প্রশিক্ষিত মানুষের কাছে রেখে যাবেন। নইলে কেমন মা আপনি? কোন বিবেকে অভিযোগ করেন? একজন শিশু-কিশোরী বা অশিক্ষিত, অপ্রশিক্ষিত মানুষ দিয়ে আপনি গৃহকর্ম করাচ্ছেন, সন্তান পালন করাচ্ছেন, রোগীর সেবা করাচ্ছেন, আপনার বিরুদ্ধেই তো ফৌজদারী মামলা হওয়া উচিত।

আপনার স্বামী কেনো আপনার সুগন্ধি বিছানা ছেড়ে তেল চিটচিটে বিছানায় যায়, নিজেকে প্রশ্ন করুন। হয় আপনি লম্পট পুরুষের সাথে ঘর করেন, না হয় আপনার মধ্যে কোনো ঘাটতি আছে। সুতরাং চিকিৎসা যদি দিতেই হয় আসল জায়গায় দেন। অজায়গায় ওষুধ দিলে রিএ্যকশন হবে, রোগ ভালো হবে না। এটা বোঝার মতো জ্ঞান আপনার বা আপনাদের না থাকার কথা নয়।

৫ টাকার এক ডিমের জন্য কর্নেলের স্ত্রীর বর্বর আচরণ; অন্ধ প্রায় শিশু সাবিনা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ