বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫


ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে সাংসদদের ক্ষোভ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগের দেয়া রায় নিয়ে জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংসদ সদস্যরা।

গতাল জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে জাসদের সদস্য মইনউদ্দিন খান বাদল বিষয়টি উত্থাপন করলে এর উপর ১০ জন সংসদ সদস্য অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে আদালতের রায়ের সমালোচনা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছেন। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বিচারপতিদের বিচার করবে। আমার প্রশ্ন- প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে তার অধীনস্তরা কী তার বিচার করতে পারবেন?’

তিনি বলেন, আদালত সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে তারা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলেছেন। সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। সংসদ সদস্যরা সেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত। আইপিইউ-সিপিএ এ’র চেয়ারম্যান এই সংসদেরই সদস্য।

তোফায়েল বলেন, সংবিধানকে কেউ যদি ধ্বংস করে থাকেন তিনি হলেন জিয়াউর রহমান। তিনি আইয়ুব খানকে অনুসরণ করে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল করেছিলেন। এখন সেটা রক্ষা করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী পদক্ষেপ নেবেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কিছু বলার নেই। কিন্তু যারা সমর্থন করেছেন তাদের নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। তারা সুবিধাবাদি। আপনি সংবিধান প্রণয়নের সময় বললেন, ‘বেস্ট সংবিধান বাট, এখন বিরোধিতা করছেন। কিন্তু কেন? কারণ আপনারা সংসদ সদস্য হতে পারেননি।’

তিনি বলেন, এ্যামিকাস কিউরি ড. কামাল হোসেন ভারতের সংবিধানের কথা বলে আদালতকে অসত্য তথ্য দিয়েছেন। সেখানে বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা এখনও লোকসভা ও বিধানসভার হাতেই রয়েছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, নেপালেও একই ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে।

একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে পাকিস্তান। সেখানে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারক অপসারণ করতে হয়। এই কাউন্সিল করেছিলেন আইয়ুব খান, যার বিরুদ্ধে আমরা ’৬৯-এর গণঅভূত্থান করেছিলাম।

কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমান এক ফরমান বলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করেছিলেন। এটা এখনো পাকিস্তানে বহাল রয়েছে।

তিনি এ্যামিকাস কিউরিদের সমালোচনা করে বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল টিক্কা খানের কাছে ফোন করে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারে তাদের দ্বারা দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্র নিরাপদ থাকতে পারে না।

সরকারি দলের সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করবে জনগণের প্রতিনিধিরা। আমরা যারা সংসদ সদস্য আছি তারা জনগণের পক্ষেই এ সমস্ত কার্যক্রম করবো।’

তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ স্বাধীন। কিন্তু কতটুকু স্বাধীন। সংসদের চেয়েও স্বাধীন? তা হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘সংসদের হাতে ক্ষমতা থাকবে। আপনি রায় দিয়েছেন, রায় নিয়ে বসে থাকেন। এই সংসদ যদি ওটাকে কার্যকর না করে তাহলে ওটা কোনদিনই কার্যকর হবে না।’

শেখ সেলিম বলেন, ৮ জন বিচারপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের বিচার করতে বিব্রতবোধ করেছেন। এদের সবার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট করা দরকার ছিল।

মইনউদ্দিন খান বাদল বলেন, ‘বিচারক যদি এমন কাজ করে, তাতে তার বিচারক থাকা চলে না, অবিবেচনা প্রসূত কাজ করে, অপরাধ করে থাকে তাহলে তার সাজাটা কীভাবে হবে। এখানে সব বিচারকের সাজার প্রশ্ন আসেনি। যিনি অপরাধ করেছেন তার সাজার বিষয় এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি যেটা বলতে চাই, ন্যাচারাল জাস্টিস বলে একটা কথা আছে। সেই ন্যাচারাল জাস্টিস ব্যাপারে বক্তব্য হল- আপনি আপনার বিচার করতে পারেন না।’

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের ইমপিচমেন্ট অপসারণ হয় সংসদে। আর আপনি বলছেন আমার বিচার আমি করবো।

তিনি বলেন, সংসদের কোন আইন যদি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে সেটা আদালত দেখতে পারে। কিন্তু ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে মৌলিক কাঠামোর কোথায় হয়েছে সেটা প্রমাণ করতে হবে। ’৯৬ অনুচ্ছেদ আমরা প্রতিস্থাপন করেছিলাম। এটা বেসিক স্ট্রাকচারের কোথায় আঘাত করেছে আমরা দেখতে চাই।

আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী, জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন বাবলু, বিএনএফ-এর আবুল কালাম আজাদ।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়।

সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয় আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ৯ নভেম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

পরে গত ৩জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করেন।এতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের হাতে ন্যাস্ত করা হয়।

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ