বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
‘মানতিক; যুগের চাহিদার সাথে মিলে না’ এ ধরেণের কথা অযৌক্তিক: মুফতি হিফজুর রহমান দাওরায়ে হাদিসের ফলাফল নজরে সানীর আবেদনের সময় বাকি ৩ দিন  বৃষ্টি প্রার্থনায় জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ায় ‘সালাতুল ইস্তিসকা’  আদায় হাসপাতালে সৌদি বাদশাহ সালমান সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পাঠ্য তালিকার সাথে বেফাকের পাঠ্য তালিকার সম্পর্ক নেই: বেফাক সৈয়দপুরে তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ, ‘হিটস্ট্রোকে’ ১ জনের মৃত্যু স্বর্ণের দাম আরও কমলো, ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ইরান-পাকিস্তানের ঢাবিতে বৃষ্টির জন্য ‘সালাতুল ইসতিস্কা’র অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘বৃষ্টির জন্যে সালাত আদায় করলেই অবশ্যম্ভাবী বৃষ্টি চলে আসবে—বিষয়টা তা নয়’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৬ বছর! প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ওয়ালি খান রাজু
ঢাবি প্রতিবেদক

মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ব বাংলা তথা বর্তমান বাংলাদেশের জনগণের উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষালয় হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সঙ্কটময় মুহূর্তে দিশাহীন জাতিকে সঠিক পথ দেখিয়ে মুক্তির নেশায় উজ্জীবিত করতে এ বিশ্ববিদ্যালয় এর ভূমিকা অনস্বীকার্য , পূর্ববাংলা তথা আজকের বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চ শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বহু ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে যাত্রা শুরু করে।

ইতিহাসের নানা অধ্যায়ে নিজের নাম উজ্জ্বল করে এ বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রতিষ্ঠার গৌরবের ৯৬ বছর পেরিয়ে পা রাখতে যাচ্ছে ৯৭ বছরে।

নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকসহ ১৯ জন মুসলিম নেতার একটি প্রতিনিধিদল ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি গভর্নর জেনারেলের সঙ্গে দেখা করেন। বংগভংগ রদের প্রতিক্রিয়া জানাতে এসে তারা বংগভংগ রদের ক্ষতিপূরণ স্বরূপ কমপক্ষে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার দাবি করেন। জবাবে তাদের এই দাবির সাথে একমত জানিয়ে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন লর্ড হার্ডিঞ্জ।

শত বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে বাংলার মুসলমানরা তাদের ন্যায্য উচ্চ শিক্ষার দাবি আদায় করতে সক্ষম হয়।

১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। ২৮ জন কলা, ১৭ জন বিজ্ঞান,১৫ জন আইনের শিক্ষক, ৮৭৭ জন ছাত্র, তিনটি আবাসিক হল মুসলিম হল, জগন্নাথ হল,শহীদুল্লাহ হল তিনটি অনুষদ ও ইংরেজি, বাংলা, আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ, ইতিহাস, অর্থনীতি, গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, আইন, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ফার্সি-উর্দু মোট ১২ টি বিভাগ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জন্ম নেয় ।

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩৭ হাজার শিক্ষার্থী, দুই হাজার শিক্ষক, ১৯ টি আবাসিক হলসহ মোট ৩৭ হাজার ছাত্রছাত্রী রয়েছে। প্রতি বছর ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপিত হয়, এবারের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের প্রতিপাদ্য হল "উদ্ভাবন ও উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা"।

১৯২১ সাল থেকে শুরু করে হাটি হাটি পা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ ১০০ বছরের দ্বারপ্রান্তে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি পেরেছে তাদের গৌরবান্বিত ইতিহাস ধরে রাখতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি পেরেছে ২০১৭ সালেও এসে বাঙ্গালির আশা ভরসার প্রতীক হয়ে জাতিকে পথ দেখাতে? নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই নিজের উত্তরণের পথ চেনাতেই ব্যস্ত?

অতীতের সেই প্রতিবাদী আন্দোলনের সুতিকাগার হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখনো কতটুকু প্রতিষ্ঠিত এ নিয়ে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যেই নানা মত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের আবাসিক এবং ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবুল হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর অযাচিত কাজের জন্য মাঝে মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন বাজে খবরের শিরোনাম হয়, তা একান্ত দুঃখজনক। যে বিশ্ববিদ্যালয় একসময় জাতিকে পথ দেখাত সেই জাতিই এখন বিশ্ববিদ্যালয় এর দূর্নাম করতে বাধ্য হয়, বিশ্ববিদ্যালয়কে এ থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী কাউসার আহমেদ আশিক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে চলে রাজনৈতিক দখলদারিত্ব, তিনি মনে করেন ক্যাম্পাসে গণতন্ত্রের চর্চা নেই বললেই চলে, এর পেছনে তিনি নির্বাচিত ছাত্র নেতৃত্বের অনুপস্থিতি এবং ডাকসু নির্বাচন না হওয়ার কারণকে দায়ী করেন।

আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন মনে করেন বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট চরমে, এছাড়া পরিবহন সংকট, লাইব্রেরি সংকট এর ফলে শিক্ষার্থীদের তীব্র ভোগান্তি পোহাতে হয় বলেও তিনি মনে করেন।

বিশ্বের সেরা ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেই কেনো? এর কারণ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ বিভাগের স্নাতকোত্তর এর শিক্ষার্থী এবং উদ্যোক্তা শিমুল পারভেজ জানান মূলত চাকরি প্রথার কারণে শিক্ষার্থীরা গবেষনা উদ্ভাবনী কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলার দরুণ এই অবস্থার উদ্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, বাজেটে বিশেষ করে গবেষণা ও উদ্ভাবনে আরো বেশি বরাদ্দ দিতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগ, ভর্তি পরীক্ষায় আরো বেশি স্বচ্ছতা আনতে পারলে আশা করি আগামী বিশ্বে টপ ১০০ তে যাওয়া সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।

একই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত আল ইয়াসিন বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেটির কাছে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষে প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। কিন্ত সৃজনশীল কাজে অনীহার প্রবণতার ফলে এবং তথ্য প্রযুক্তিতে তুলনামূলক পিছিয়ে থাকার ফলে সেরা র‍্যাংকে বিশ্ববিদ্যালয় উঠে আসতে পারছে না।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ক্ষমতা প্রদর্শন এবং অনৈতিক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

তিনি ৯৬ তম জন্মবার্ষিকীতে প্রত্যাশা করেন ইতিহাস দেখানোর চেয়ে যেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েরা ইতিহাস তৈরি করার বাসনায় মনোযোগ দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তোফায়েল আহমেদ জানান, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান শুধু ইতিহাস কেন্দ্রিকই নয়, দেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক থেকে শুরু করে পদার্থবিদ, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিসহ বিদেশের মাটিতে যারা উচ্চ শিক্ষায় দেশের নাম উজ্জ্বল করছেন সবাই এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই সন্তান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী ১০০ তম জন্মবার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন বিশ্বের দরবারে সেরা ১০০ বিশ্ববিদ্যালয় এ স্থান করে নিতে পারে তিনি সেই প্রত্যাশাই করেছেন।

আজকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন পূর্বেকার সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে জাতির আলোকবর্তিতাতে পরিণত হতে পারে পথচলার ৯৭ তম বছরের প্রাক্কালে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অজস্র শিক্ষার্থীসহ বর্তমান ৩৭ হাজার শিক্ষার্থী এই প্রত্যাশাই করেছেন।

হলি আর্টিজানে হামলার পর জঙ্গিবিরোধী ১৩ টি অভিযান


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ